বিস্ফোরক শনাক্ত করতে এখন আর প্রশিক্ষিত কুকুরের উপর পুরোপুরি ভরসা রাখা যাবে না। কারণ, জঙ্গিরা এখন এমন কৌশল নিচ্ছে যে ‘ফেল’ করে যাচ্ছে স্নিফার ডগও। রাজ্যগুলিকে এই তথ্য জানিয়ে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
গন্ধ শুঁকে বিস্ফোরক শনাক্ত করার ক্ষেত্রে যন্ত্রের চেয়েও বেশি কার্যকর প্রশিক্ষিত পুলিশ কুকুর। কিন্তু এখন ধোঁকা খেতে পারে তারাও।
কী ভাবে?
দিল্লি থেকে পাঠানো ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, গন্ধ ঢাকতে বিস্ফোরকের সঙ্গে কফি মিশিয়ে দিচ্ছে জঙ্গিরা। মেশানো হচ্ছে রং-ও। কুকুরকে বোকা বানাতেই সন্ত্রাসবাদীদের এই নতুন পন্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, নিরাপত্তারক্ষীদের এখন থেকে সদা সতর্ক থাকতে হবে। একটু ঢিলেমির পরিণতিও হতে পারে ভয়ঙ্কর।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, যে সব আধুনিক বোমা জঙ্গিরা নিজেরা তৈরি করে, সেই ‘ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস’ (আইইডি) যেমন চেহারারই হোক না কেন, তার মধ্যে একটা বিশেষ গন্ধ থাকে। মূলত যা শুঁকেই স্নিফার ডগ হদিস দিতে পারে সেই মারণাস্ত্রের। কিন্তু আইইডি-তে কফি বা রঙের চড়া গন্ধে চাপা পড়ে যেতে পারে বিস্ফোরকের গন্ধ। এ ভাবে পুলিশ কুকুরও বিভ্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে সাম্প্রতিক ওই সতর্কবার্তায়। |
কিষেণজির মৃত্যুবার্ষিকীতে এ রাজ্যে মাওবাদীরা কোনও ভিআইপি বা নিরাপত্তারক্ষীদের উপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বলে দাবি করেছিলেন গোয়েন্দারা। আর ঠিক সেই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই বার্তায় রাজ্যের গোয়েন্দাদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। কিছু দিন আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে বলেছিল, এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানার এখন আইইডি শনাক্ত করতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে পুলিশ কুকুরই সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, জঙ্গিদের নতুন কৌশল পুলিশ কুকুরকেও ভুল পথে চালনা করতে পারে।
ওই সতর্কবার্তায় আরও জানানো হয়েছে, মেটাল ডিটেক্টরকে ফাঁকি দিতে ধাতব ডিটোনেটরের বদলে রাসায়নিক ডিটোনেটরও আবিষ্কার করে ফেলেছে জঙ্গিরা। আবার অনেক ক্ষেত্রে ডিটোনেটর প্রয়োজন নেই, এমন আইইডি-ও তৈরি করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, নিরাপত্তারক্ষীরা যাতে আইইডি-র অস্তিত্ব বুঝতেই না পারেন, সে জন্য প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলেছে জঙ্গিরা। গত কয়েক বছরে আল-কায়দার মতো জঙ্গি সংগঠন দেখিয়ে দিয়েছে, তারা লেজার প্রিন্টার, জুতো, এমনকী অন্তর্বাসের আড়ালেও আইইডি নিয়ে অনায়াসে বিমানে উঠে যেতে পারে। কলম্বিয়ার জঙ্গি সংগঠনগুলি আপাত নিষ্পাপ পিভিসি পাইপের মধ্যে এক কেজি বিস্ফোরক ভরে এমন আইইডি তৈরি করেছে, যার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা দড়ি ধরে টানার চার-পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যেই ভয়ানক বিস্ফোরণ হবে।
এই ধরনের উদাহরণ দেখিয়ে নাশকতা এড়াতে রাজ্যগুলিকে কিছু নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রক। যেমন, কোনও ভিআইপি-র অফিস, বাড়ি বা অনুষ্ঠানের জায়গায় দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের এখন বাড়তি সতর্ক থাকা প্রয়োজন। জঙ্গিরা কী ধরনের, কী চেহারার আইইডি তৈরি করছে, সে বিষয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখতে হবে। কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় পুলিশ বা আধাসামরিক বাহিনীর টহলদারির আগে সেখানে আইইডি আছে কি না খুঁজে দেখতে, চিরুনি তল্লাশি চালাতে হবে। তা ছাড়া, কোনও ভিআইপি-র কাছে কেউ মোবাইল ফোন, আইপডের মতো বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম নিয়ে চলে যাচ্ছে কি না, সে বিষয়েও সতর্ক থাকা জরুরি।
রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা তথা মুখ্যমন্ত্রীর চিফ সিকিওরিটি লিয়াজঁ অফিসার বীরেন্দ্র বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্য ভিআইপি-র কাছাকাছি কেউ বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়ার আগে সেগুলি একাধিক বার পরীক্ষা করে দেখা হয়। আমরা সেগুলি চালিয়ে ও বন্ধ করে দেখি, সেগুলি সত্যি মোবাইল বা ক্যামেরা, নাকি তার আড়ালে অন্য কিছু। তা ছাড়া, বিস্ফোরক খুঁজতে শুধু পুলিশ কুকুরের উপরই কিন্তু আমরা ভরসা করি না। এই বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিরাপত্তারক্ষীরাও আছেন।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অফিসারের বক্তব্য, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে ধরনের বার্তা পাঠায়, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে প্রতিনিয়ত আমরা মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় ভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিই, সে ভাবেই নিজেদের তৈরি করি।” |