|
|
|
|
|
হিমালয়ের রূপে জুড়িয়ে গেল ক্লান্তিও
ভূমিকম্প হয়নি, সুনামিও না। বন্যা নেই, ঝড় বলতে এক ‘নীলম’।
খোশমেজাজে ঘুরে এলেন কাটোয়ার টেলিফোন ময়দানের সুব্রত সাঁই। |
|
আর পাঁচ জন বাঙালির মতো আমার কাছেও পুজো মানেই দে ছুট। গন্তব্য উত্তর-পূর্বের এক পার্বত্য রাজ্য অরুণাচল। মহালয়ার পরের দিনই কাটোয়া স্টেশন থেকে চড়লাম কামরূপ এক্সপ্রেসে। সোজা গুয়াহাটি। হোটেলে রাত্রি যাপন। পরের দিন ভোরে গাড়ি ধরে পৌঁছলাম ব্রহ্মপুত্রের উত্তর তীরে ঐতিহাসিক শহর তেজপুরে। এক বন্ধুর সহযোগিতায় তেজপুর ভ্রমণ হল আনন্দেই। দেখলাম অগ্নিগড়, বামুনি পাহাড়, মহা ভৈরব মন্দির, হাজার পুকরি, চিত্রলেখা পার্ক। রাত্রিবাস তেজপুরেই।
জঙ্গ ঝরনা। |
পরের দিন বেরিয়ে পড়লাম তেজপুর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে অরুণাচলের তাওয়াংয়ের উদ্দেশে। একটানা অতটা পাহাড়ি পথ পাড়ি দেওয়া কষ্টসাধ্য। তাই আমরা ভালুক পং হয়ে গাড়িতে পাড়ি দিলাম দিরাং। হোটেলে যখন পৌঁছলাম ঘড়িতে তখন দুপুর ১টা। তাড়াতাড়ি খাবারের অর্ডার দিয়ে স্নানে গেলাম। অক্টোবরের মাঝামাঝি এখানে তাপমাত্রা থাকে ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। ৫৫০০ ফুট উচ্চতায় মায়াবী কামেং নদীর মুখোমুখি পিঠে আলতো রোদ মেখে হোটেলের বাগানে বসে দুপুরের আহার সারলাম। দিরাং উপত্যকায় কামেং নদীর রূপ, উপরে মেঘেদের আনাগোনা, পাহাড় জুড়ে পাইন, উইলো পপলার, দেবদারুর বন মন কেড়ে নেয়। পড়ন্ত বিকেলে পৌঁছলাম লিউয়ং মনাস্ট্রি। পথের দু’ধারে কমলালেবু আর বেদানা গাছের সারি। ঘড়িতে ৫টা বাজার আগেই সন্ধ্যা নেমে এল, সঙ্গে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া। হোটেলের জানলা দিয়ে রাতের দিরাংকে মনে হল যেন আকাশের তারারা মাটিতে নেমে এসেছে। পরের দিন সকালে পায়ে হেঁটে উষ্ণ জলের প্রস্রবণ, ইয়াক রিসার্চ সেন্টার, ভেড়া প্রজনন কেন্দ্র ও সাংতি উপত্যকায় আপেল বাগান দেখলাম। দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে আবার গাড়িতে চড়ে পাড়ি দিলাম তাওয়াংয়ের উদ্দেশে।
রাত ৯টায় যখন তাওয়াং পৌঁছলাম, গোটা শহরটা তখন ঘুমে আচ্ছন্ন। সঙ্গে হাড় হিম করা ঠান্ডা। টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে যখন ঘুম ভাঙল, ঘড়িতে তখন সাড়ে ৪টে। ভোরের মায়াবী আলোয় অরুণাচলকে দেখলাম। স্ত্রী-কন্যা তখনও ঘুমে আচ্ছন্ন। মাথার কাছে পূর্ব দিকের জানলার পর্দা সরিয়ে দিলাম। আলো ফুটতেই ঘুম ভেঙে গেল সকলের। আই এল পি পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে ১২ হাজার ফুট উঁচু সাঙ্গেস্টার বা মাধুরী লেক, চিনের সীমান্ত বুমলা পাস, এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মনাস্ট্রি তাওয়াং জেনভেন নামগিয়াল লাসটে মনাস্ট্রি বা তাওয়াং মনাস্ট্রি, ১৯৬২-এর চীন-ভারত যুদ্ধে নিহত সেনাদের স্মৃতির স্মরণে নির্মিত ওয়ার মেমোরিয়াল এর উদ্দেশে।
তাওয়াং হ্রদের রাজ্য। ১০৮ টা হ্রদ রয়েছে তাওয়াংয়ের আশপাশে। শহর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে সাঙ্গেস্টার লেক। ১৯৭১ সালে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টি হয় এই হ্রদের। আঁকাবাঁকা বরফ ঢাকা প্রায় ৪২ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পেরোতে কেটে গেল তিন ঘণ্টা। পুরো জায়গাটা সেনাবাহিনীর দখলে। চারপাশে খাড়া পাহাড় আর মাঝখানে টলটলে জলের হ্রদ। জলের মাঝে শুকনো গাছেদের দল মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ১৯৯৬ সালে মাধুরী দীক্ষিত ও শাহরুখ খান অভিনীত ‘কয়লা’ ছবির শুটিংয়ের পরে প্রচারের আলোয় চলে আসে সাঙ্গেস্টার। সেই থেকেই তা মাধুরী লেক নামে প্রচলিত। সেনাবাহিনীর ক্যান্টিনের মোমো ও কফি ছিল বেশ উপাদেয়। তা দিয়েই দুপুরের আহার সারলাম। আবহাওয়া ভাল থাকায় যথাযথ পরিচয়পত্র নিয়ে পৌঁছলাম চীন সীমান্ত বুমেলা পাস। সেনাবাহিনীর তৎপরতা জায়গাটির গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়। তাওয়াং শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ১০ হাজার ফুট উচ্চতার এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম গুম্ফা তাওয়াং মনাস্ট্রি পৌঁছে অপূর্ব তাওয়াং-চু-ভ্যালি আর হিমালয়ের চোখ-জুড়নো সৌন্দর্য জীবনের সব ক্লান্তি দূর করে দেয়। এখানে ১৮ ফুট লম্বা সোনালী বুদ্ধ মূর্তি ও সংগ্রহশালা দর্শনীয়। বৌদ্ধ ধর্মগুরু দলাই লামা বেশ কিছু দিন এখানে ছিলেন। |
মাধুরী লেক |
তাওয়াং |
|
পরের দিন সকালে রওনা দিলাম বমডিলার উদ্দেশে। পথে পড়ল জঙ্গ ঝরনা। আরও প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পৌঁছলাম পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম যান চলাচলের উপযোগী বিখ্যাত সেলা পাসের (১৩,৮০০ ফুট) শীর্ষবিন্দুতে। ভয়ঙ্কর সুন্দরের সামনে দাঁড়িয়ে বরফের চাদরে ঢাকা পাহাড়ের সারি আর নীচে বরফগলা টলটলে নীল জলের হ্রদ সেলাপাস। সেলাপাস থেকে ফিরে আসার পথে নানা রঙের ফুল ও সবুজ বনের মধ্যে দিয়ে যখন বনভিলায় পৌঁছলাম তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। পরের দিন রওনা দিলাম তেজপুরের উদ্দেশে।
এ বার ফেরার পালা। অনেক স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে ঘরে ফিরতে চেপে বসলাম গরিব রথে। ফিরে এলাম আবার সেই চেনা জগতে।
|
ছবিগুলি লেখকের পাঠানো
|
লিখুন অনধিক ৫০০ শব্দে। খামে ‘পুজো এক্সপ্রেস’ লিখে পাঠিয়ে দিন:
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ ১০, ডক্টরস কলোনি,
সিটি সেন্টার, দুর্গাপুর - ৭১৩২১৬
অবশ্যই দেবেন ছবি (নিজেদের বাদে)। ছবি মেল করতে চাইলে: durgapuredit@abp.in
(লেখা নির্বাচনে সম্পাদকীয়
বিভাগের বিবেচনাই চূড়ান্ত) |
|
|
|
|
|
|