আমরি অগ্নিকাণ্ডের এক বছর: ক্ষতিপূরণ নিয়েও ধন্দ
ফাইল নড়েনি, পরিজনের চাকরি সেই প্রতিশ্রুতি-ই
কঝকে হাসপাতালে বিপর্যয় মোকাবিলায় কী হাল, তা তাঁরা টের পেয়েছিলেন এক বছর আগে। পরের বারোটা মাস ধরে দেখলেন রাজ্য প্রশাসনের গয়ংগচ্ছ চেহারাটা। ন্যায়বিচার দূরে থাক, এক বছরেও সরকার ঘোষিত ক্ষতিপূরণের পুরোটা পেয়ে উঠলেন না হুগলির পুড়শুড়ার সঙ্গীতা পণ্ডিতের পরিজন।
সঙ্গীতার দাদা সুরজ এখনও প্রশাসনে ভরসা রাখছেন। কিন্তু অসুস্থ বৃদ্ধ মা-বাবার অবস্থাটা দেখে সেই ধৈর্যও মাঝে-মধ্যে টাল খাচ্ছে। আমরি-কাণ্ডের পর দিনই মৃতদের পরিবারপিছু এক জনকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য ঘোষিত নগদ ক্ষতিপূরণের তিন লক্ষ টাকা পেলেও সঙ্গীতার বেকার দাদার কপালে এখনও সে চাকরি জোটেনি।
পণ্ডিতবাড়ির ছোট মেয়ে সঙ্গীতা ওরফে টুকুসোনা বিএ পাশ করে সহজেই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন। এক দুর্ঘটনায় চোট পেয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আমরিতে। পুড়শুড়ার রণবাগপুর গ্রামের বাড়িতে বসে ষাটোর্ধ্ব বাবা কাশীনাথ পণ্ডিত বলছিলেন, “আমার দু’মেয়ে-এক ছেলের মধ্যে টুকু সবার ছোট। কিন্তু ওর কথাতেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিতাম। সব ব্যাপারে ওর মত নিতাম।” গলা ভারী হয়ে আসে অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর। “বোন মারা যাওয়ার পরে মা-বাবার হার্টের গোলমাল বেড়েছে। ডাক্তার-বদ্যি চলছে।” জানালেন দাদা।
চাকরি-প্রক্রিয়ার সূচনায় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের স্নাতক সুরজ জানুয়ারিতে আরামবাগের মহকুমাশাসকের অফিস থেকে ডাক পেয়েছিলেন। দরকারি কাগজপত্র, ডাক্তারি রিপোর্ট, সব জমা দিয়ে দিয়েছেন। তার পরে আর প্রশাসন টুঁ শব্দটি করেনি বলে অভিযোগ। পরিবারটির দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকে মহাকরণে চিঠি দিয়েও সুরাহা হয়নি।
সুরজের চাকরি হচ্ছে না কেন?
দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “আমরি-কাণ্ডে মৃতদের পরিবার চাইলে এক জনের চাকরি হবে। শুধু পরিজনদের একমত হতে হবে।” তবে সঙ্গীতার দাদার চাকরি হচ্ছে না কেন?
মেয়ে সঙ্গীতার ছবি হাতে মা। —নিজস্ব চিত্র
বাধাটা কোথায়, জাভেদ জানেন না। যেমন জানেন না জয়রামবাটির প্রাকৃতা পালের পরিবারের হতাশার কথাও। আমরি-কাণ্ডের বলি চোদ্দো বছরের কিশোরী প্রাকৃতার মা রিনাদেবী বাঁকুড়া প্রশাসনের কাছে চাকরির আবেদন করেছেন। কোনও সাড়া পাচ্ছেন না। আমরি-কাণ্ডে নিহত এক রোগীর আত্মীয়ের (নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক) কথায়, “কর্মসংস্কৃতির উন্নতি হয়েছে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মীদের বাড়তি ছুটির ইনাম দিচ্ছেন! আদতে কর্মসংস্কৃতির কী হাল, তা আমাদের মতো পরিবারই বুঝছি।”
মৃতদের ক্ষতিপূরণ-বিভ্রান্তি রয়েছে। রাজ্যের দাবি: পরিবারপিছু ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যের তিন লক্ষ টাকা ও কেন্দ্রের দু’লক্ষ টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরি-কর্তৃপক্ষও বিপর্যয়ের পরেই মৃতদের পরিবারপিছু পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার পদ্ধতি নিয়ে দেখা দিয়েছে আইনি জটিলতা। রাজ্য মৃতদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সাহায্য করছে না, এই অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয় আমরি। তথ্য কেন দেওয়া হচ্ছে না, সে ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের লিখিত ব্যাখ্যা তলবও করেছিল হাইকোর্ট। কলকাতা পুলিশ-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: তথ্য পেলে আমরি-কর্তৃপক্ষের তরফে মৃতদের পরিবারের উপরে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হতে পারে। আদালতে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি।
ক্ষতিপূরণ-চাকরির প্রশ্নে ন্যায়বিচারের লড়াই লড়তে আমরি-কাণ্ডে মৃতদের পরিজনেরা মিলে একটি ফোরাম গড়েছেন। ফোরামের তরফে রাজা গঙ্গোপাধ্যায় জানান, আমরি-কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে ১০ পরিবার ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতের রাজ্য কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে। রাজার বাবা জহরলালও আমরি-অগ্নিকাণ্ডের শিকার।
তবে আরোগ্যলাভের জন্য শহরের এক নামী হাসপাতালে প্রিয়জনকে পাঠানোর পরে এমন বিপর্যয়ের ধাক্কায় ‘ক্ষতিপূরণ’ শব্দটাই অবান্তর অনেকের কাছে। যেমন দেবযানী দাস। আমরির বিষাক্ত ধোঁয়ায় বাবা রাজকুমার বিশ্বাসকে হারান স্কুল-শিক্ষিকা। এক মাসের মধ্যে মা-ও চলে যান। “যাদের গাফিলতিতে এমন হল, তারা যেন ছাড়া না-পায়। এটুকুই দাবি।”— বলছেন দেবযানীদেবী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.