রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ...
আমরা দেখতে ভালবাসি
ক শতাংশ বাদ দিলে বাদবাকি আমরা, এই জনগণ ভীতু, আত্মসর্বস্ব, স্বার্থপর, কাপুরুষ। কেঁচোর মতো কলজে। যা হচ্ছে হোক বাবা, আমরা (অন্য অর্থে) সব সেই গাঁধীজি বর্ণিত বাঁদর। না কিছু দেখি, না কিছু বলি, না কিছু শুনি। কয়েকশো লোকের চোখের সামনে তাই মসৃণ ভাবে আখছার কয়েক জন মিলে এক জনকে পিটিয়ে মেরে ফেলে, মহিলাকে নগ্ন করে ঘোরানো হয়, ধর্ষণ করে সবার সামনে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ‘পাবলিক’ ভিড় করে দ্যাখে। এগোয় না।
দুর্ঘটনায় আহত লোক রাস্তার পাশে রক্তের স্রোতে পড়ে থাকে। আমরা নাক চেপে পাশ কাটিয়ে যাই, কেউ কেউ মোবাইলে ছবিও তুলে রাখি। আমরা কোনও ঝামেলায় পড়তে চাই না। বরং খুন-জখম সব মিটে যাওয়ার পর মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিল করাটা অনেক নিরাপদের আর বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করি। এতে গা বাঁচিয়ে থাকাও গেল, আবার আমরা যে প্রতিবাদে মোটেই পিছিয়ে নেই, এইরকম একটা ধারণা দিয়ে কিছুটা বিবেক-দংশনও ঝেড়ে ফেলা গেল।
মহাভারতের সেই পাশাখেলার আসরে দ্রৌপদীর চূড়ান্ত অপমান এবং ধৃতরাষ্ট্র-ভীষ্ম-কৃপ সমেত বড় বড় মহারথীর স্রেফ তা ‘দেখে যাওয়া’ নিয়ে বহু গালভরা তাত্ত্বিক আলোচনা আমরা করি। কিন্তু পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ কী? এ যুগে দাঁড়িয়ে আমাদের মধ্যে ক’জন রাস্তায় উলঙ্গ পাগলি দেখে তাঁর শরীরে কোনও কাপড়ের আবরণ দেওয়ার চেষ্টা করি? এই কলকাতার রাস্তাতেই তো দিনের বেলায় সবার চোখের সামনে রাস্তার নেড়ি কুকুরকে শিকল দিয়ে বেঁধে মেরে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যে ‘পাবলিক’ একসময় দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে সতীদাহের মজা নিত সেই ‘পাবলিক’ই ২০১২ সালের ভারতবর্ষে গুয়াহাটি শহরে দামি পাবের সামনে প্রকাশ্য রাস্তায় প্রায় ৪০ মিনিট ধরে একলা কিশোরীর জামা ছিঁড়ে দেওয়া-র দর্শক হয়। ভিড়ের মধ্যে থেকে অনেকগুলো হাত অসহায় কিশোরীর বুক টিপে দেয়, যৌনাঙ্গ স্পর্শ করে, নাভি খিমচোয়, প্যান্ট নামিয়ে দেয়, মিডিয়া দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে ছবি তোলে। ‘পাবলিক’ শুধু দ্যাখে। কেউ বাধা দিতে এগোয় না।
বারাসত স্টেশন থেকে ভ্যানরিকশা চেপে বাড়ি যাওয়ার পথে বোনকে দেখে টিটকিরি দেয় মাতালগুলো। প্রতিবাদ করায় তারা ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে কিশোরের দেহ। যে ক’জন আশপাশে ছিল তারা কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসে না। উদ্ভ্রান্তের মতো দৌড়ে জেলাশাসক, পুলিশ সুপারের বাড়ির গেট ঝাঁকিয়ে চিৎকার করে সাহায্য চায় বোন। সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা উদাস মুখে বলে দেন, ‘এখন এখান থেকে গেলে সাহেব বকবেন।’ রাস্তায় পড়ে ছটফট করতে-করতে ভাই নেতিয়ে পড়ে। যুগ বদলায়, পাবলিকের চরিত্র আর অবস্থান অবিচল, অপরিবর্তিত, প্রতিক্রিয়াহীন।

আমরা, এই জনগণ একসময় ভরা বাজারে ক্রীতদাসীকে প্রায় উলঙ্গ করে, নিলাম ডেকে বিক্রি করা দেখেছি। তার পর বালবিধবার ঝুঁটি ধরে চুল কাটা দেখেও প্রতিক্রিয়াহীন থেকেছি। যুগান্ত পেরিয়ে সেই আমরাই এখন ডাইনি সন্দেহে নিরপরাধ মহিলাকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে, পুড়িয়ে মারা দেখছি চুপটি করে। মনোচিকিৎসকেরা ব্যাখ্যা করছেন, শুধু ভয় বা স্বার্থপরতা নয়, আসলে এই ‘দেখা’-র পিছনে রয়েছে আমাদের মনে গুড়ি মেরে ঠোঁট চাটতে থাকা আদিম হিংস্রতা। অত্যাচার, খুন, ধর্ষণ দেখতে আমরা ভালবাসি, তৃপ্ত হই। কারও কষ্ট, যন্ত্রণা দেখায় আমাদের বিচিত্র আনন্দ।
পাশের বাড়ির দাদাটি প্রতি রাতে নিয়ম করে যখন বউদিকে পেটান তখন তাকে আটকাতে বা পুলিশ ডাকতে আমাদের প্রচণ্ড অনীহা। যাদের সমস্যা তারা সামলাক বাবা। তাই ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকারকে ‘বেল-বাজাও’ ক্যাম্পেন চালাতে হয়। বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার চালিয়ে বিপদে সাহায্য করা শেখাতে হয়। অনুরোধ করতে হয়, ভাই চিৎকার শুনলে একটু এগিয়ে গিয়ে পাশের বাড়ি বা ফ্ল্যাটে বেল বাজিয়ে দেখুন। হয়তো তাতে একটা প্রাণ বেঁচে যেতে পারে।
মাত্র মাস দুয়েক আগের একটা ঘটনা। মুম্বইয়ের ইন্দিরা নগর বস্তিতে মুথুলক্ষ্মীর সঙ্গে প্রতিবেশী তিন-চার জন মহিলার উদোম ঝগড়া হল। মুথুলক্ষ্মী লোকের বাড়ি কাজ করেন। সে দিন কাজে না গিয়ে সোজা স্থানীয় থানায় গেলেন অভিযোগ লেখাতে। তাঁর স্বামী আনন্দ পেরাস্বামী তখন কাজে বেরিয়েছিলেন। বাড়িতে মুথুর একমাত্র মেয়ে ক্লাস নাইনের স্নেহা স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। থানায় অভিযোগের কথা জানাজানি হতেই প্রতিবেশী মহিলারা খুপরি ঘরে ঢুকে স্নেহাকে চুলের মুঠি ধরে হিঁচড়ে বার করলেন। স্নেহা চিৎকার করে কাঁদল, সাহায্য চাইল। গোটা বস্তির একটা লোকও এগিয়ে এল না। মাটিতে ঘষটাতে ঘষটাতে সারা বস্তি তাকে ঘোরানো হল। চলল মার। তার পর সবার সামনে স্কুলের ইউনিফর্ম ছিঁড়ে নগ্ন করে হাঁটানো হল। খবর পেয়ে মুথুলক্ষ্মী ছুটে এলেন। তত ক্ষণে বস্তির ঘরের দরজা আটকে বিষ খেয়ে ঢলে পড়েছে স্নেহা।
২০০৮ সালের মে মাস। নেপালের গ্রাম থেকে হাওড়ায় ছেলের কাছে বেড়াতে এসেছেন সত্তর বছরের কদমপ্রসাদ পন্থ। এক দিন আত্মীয়ের বাড়ি যাবেন বলে বাসে উঠেছেন। বাস থেকে নেমেই মনে পড়ল, সিটে একটা প্যাকেট ফেলে এসেছেন। বৃদ্ধ বাসের পিছনে ছুটতে শুরু করলেন। কন্ডাক্টরকে চিৎকার করে বাস থামাতে বললেন। কিন্তু বাস বাসের মতো চলল। বাসভর্তি যাত্রীদেরও কোনও হেলদোল হল না। বৃদ্ধ এই ভাবে চার স্টপ দৌড়লেন। তার পর বুকের ব্যথায় ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে বসে পড়লেন। শিবপুরের ব্যস্ত নেতাজি সুভাষ রোডে তাঁর পাশ দিয়ে একের পর এক যানবাহন, মানুষ চলে গেল। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পাক্কা দু’ঘণ্টা ওই ভাবে বসে থেকে ওখানেই মারা গেলেন কদমপ্রসাদ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিশ্রমটুকু কেউ করতে চাইলেন না। মৃত্যুর আরও দু’ঘণ্টা পরে পুলিশ এসে দেহটা তুলে নিয়ে গেল।
ইউটিউবে ক্লিক করলে এখনও দেখা যাবে দৃশ্যটা। ২০১১ সালের ১০ জুলাইয়ের দুপুর। কোয়েম্বত্তুরের সইবাভা কলোনির ব্যস্ত মোড়। মোড়ে লাগানো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় পুরো ঘটনাটা ধরা পড়েছিল। চার জন মদ্যপ যুবককে একটা স্কুটার এসে সামান্য ধাক্কা মারল। স্কুটারে দু’জন ছিলেন। চালক বছর আঠাশের সন্তোষ কুমারকে সিট থেকে টেনে নামিয়ে রাস্তায় শুইয়ে মাথাটা থান ইঁট দিয়ে থেঁতলে দিল ওই চার মাতাল।
স্কুটারের আর এক আরোহী কোনও ক্রমে পালিয়ে গিয়েছিলেন। থেঁতলানো অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা সন্তোষের দেহটাতে মাতালগুলো লাথির পর লাথি মারতে লাগল। তার পর পালা করে ইট ছুড়ে মাথা-হাত-ঘাড় আরও খানিকটা থেঁতলানো হল। চার পাশে ভরা ট্র্যাফিক। গাড়ি-স্কুটার-অটোর ভিড়। সবাই পাশ কাটিয়ে পালাতে পারলে বাঁচে। ট্র্যাফিক পুলিশের টিকিটাও দেখা গেল না। অজস্র লোকের সামনেই স্রেফ খুন হয়ে গেলেন সন্তোষ।
গত বছরই অক্টোবরের ঘটনা। বান্ধবীদের নিয়ে মুম্বইয়ের ‘আম্বোলি বার অ্যান্ড কিচেন’-এ ডিনারে গিয়েছিলেন দুই বন্ধু, কিনান সন্তোষ আর রিউবেন ফার্নান্ডেজ। রাত সাড়ে দশটা হবে। খাওয়া সেরে বাইরে বেরিয়ে গল্প করতে করতে চার জন মিলে পান খেতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় কয়েকটা বেহেড মাতাল বান্ধবীদের লক্ষ্য করে অশ্লীল টিটকিরি ছুড়ে দিল। দুই বন্ধু এগিয়ে গিয়ে মাতালদের দু’ঘা দিয়ে এলেন। তার পর পান খেয়ে যখন ফিরছেন তখন আবার রাস্তা আটকে দাঁড়াল ছেলেগুলো। এ বার তাদের সঙ্গে আরও অনেক সাঙ্গোপাঙ্গ, হাতে লাঠি-ছুরি।
কিনান আর রিউবেনকে মাটিতে ফেলে ছুরি দিয়ে একের পর এক কোপ মারতে লাগল ছেলেগুলো। বান্ধবীরা চিৎকার করে এ-দিক ও-দিক দৌড়ে সাহায্যের জন্য কাকুতিমিনতি করতে লাগলেন। ওই হোটেল পাড়ায় তখনও বেশ ভিড়। কিন্তু এক জনও এগিয়ে আসেনি। কিনান আর রিউবেন মারা যাওয়ার পর ক্যান্ডল-লাইট প্রোটেস্ট মার্চ-এ অবশ্য লোকের অভাব হয়নি। ফেসবুকে নিহতদের স্মৃতিতে পুরোদস্তুর একটা গ্রুপ তৈরি হয়ে গিয়েছে। দু’দিনে সেই গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ৪০ হাজার! মোদ্দা কথা, বাস্তবে, জরুরি মুহূর্তে আমরা নেই, অথচ মোমবাতি-ফেসবুকের দেখনদারি মানবিকতায় আমরা আছি।
আমাদের রাজ্যেই চোখ রাখা যাক। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার দুবরাজপুর গ্রাম। গত ১৭ অক্টোবর সালিশি সভার নির্দেশে ডাইনি সন্দেহে তিন মহিলাকে গোটা গ্রামের সামনে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হল। তার পর দেহ পুঁতে দেওয়া হল নদীর চরে। দুবরাজপুর কিন্তু গণ্ডগ্রাম নয়, লোকজন যথেষ্ট শিক্ষিত। তিন কিলোমিটারের মধ্যে হাইস্কুল আর নাড়াজোল রাজ কলেজ রয়েছে। বাইরের জগতের সঙ্গে গ্রামের অহরহ যোগাযোগ। তা সত্ত্বেও সর্বসমক্ষে এই খুনের প্রত্যক্ষদর্শী বা সাক্ষী পেতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে পুলিশকে।
একই রকম ঘটনা ঘটেছিল এ বছর সেপ্টেম্বরে। হাজারিবাগের চুরচু গ্রামের নানকু বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। ওঝা ডাকা হল। তিনি এসে ঝাড়ফুঁক করে বিধান দিলেন, নানকুর জা ধানী মুর্মু আসলে ডাইনি। ওকে মেরে ফেললেই অসুখ সেরে যাবে। নানকু আর তাঁর তিন আত্মীয় মিলে ধানীকে সবার সামনে পিটিয়ে মেরে ফেলল। এরও সাক্ষী জোগাড় করতে পুলিশকে নাস্তানাবুদ হতে হল।
এই নভেম্বরের ১০ তারিখ কলকাতায় শিয়ালদহ থেকে একডালিয়া যাওয়ার জন্য ৪৫ নম্বর বাসে উঠেছিলেন অশোক আচার্য। তিন ছিনতাইবাজ বাসে উঠল। বুকপকেটে বেশ কিছু টাকা রয়েছে আঁচ পেয়ে অশোকবাবুকেই টার্গেট করল তারা। বুঝতে পেরে অশোকবাবু যেই এক জনের হাত চেপে ধরেছেন, অন্য এক ছিনতাইবাজ ছুরি বার করে তাঁর বাঁ হাতে বসিয়ে দিল। এত কিছু যখন ঘটছে তখন বাসের চালক-কন্ডাক্টর থেকে শুরু করে বাকি যাত্রীরা স্ট্যাচু! যেন সামনে কিছু ঘটছে সেটাই দেখতে পাচ্ছে না। তিন ছিনতাইকারী যখন নেমে পালিয়ে যাচ্ছে তখন রক্তঝরা হাত নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করে এক জনকে ধরে টেনে বাসে উঠিয়েছিলেন একা অশোকবাবু। বাসের চালক শুধু একটাই কৃপা করেছিলেন। অশোকবাবুর অনুরোধে বাসটাকে সরাসরি গড়িয়াহাট থানায় নিয়ে গিয়েছিলেন। বাকি যাত্রীরা অশোকবাবুর কথায় তখনও ‘পুতুলের মতো বসে প্যাট প্যাট করে তাকিয়ে রয়েছেন!’
এই রকম গুচ্ছ-গুচ্ছ ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতি সেকেন্ডে, দেশের কোনও না কোনও প্রান্তে। ২০১০-এর ১৩ অগস্ট। কলকাতা থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামে এক আদিবাসী তরুণীকে নগ্ন করে আট কিলোমিটার হাঁটানো হল। সবাই তারিয়ে তারিয়ে সেই দৃশ্য দেখল, অনেকে মোবাইল ফোনে ছবি তুলল, প্রচুর লোক মেয়েটির বুক-পিছন টিপে দিয়ে অর্গ্যাজ্মের আনন্দ পেল, তার যৌনাঙ্গে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হল। অপরাধ ভিন জাতের ছেলের সঙ্গে প্রেমে পড়েছিল সেই মেয়ে। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের অপরাধে মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ের নন্দের গ্রামে ৩২ বছরের এক মহিলা আর তাঁর প্রেমিক ভেটেরিনারি চিকিৎসককে নগ্ন করে তিন ঘণ্টা ধরে গোটা গ্রাম ঘোরানো হয়েছিল। কোনও প্রতিবাদ হল না। উল্টে গ্রামের মানুষ, এমনকী কিশোররাও নগ্ন, ধ্বস্ত যুগলের পাশে বীরদর্পে পোজ দিয়ে ছবি তুলেছিলেন।
২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর। মহারাষ্ট্রের ভান্ডারার খেইরলাঞ্জি গ্রামে এক রাতে ভুতমাঙ্গে সম্প্রদায়ের এক পরিবারের বাড়ি আক্রমণ করল কুম্ভি সম্প্রদায়ের কয়েক জন। কারণ, সেই দলিত ভুতমাঙ্গে পরিবার রাস্তা তৈরির জন্য সরকারকে জমি দিতে চায়নি। কুম্ভি-রা ছিল সরকার-ঘনিষ্ঠ। ভুতমাঙ্গে পরিবারের দুই পুরুষকে তারা প্রথমে কুপিয়ে খুন করল। তার পর দুই মহিলা সুরেখা ও প্রিয়ঙ্কাকে উলঙ্গ করে গ্রামবাসীদের সামনে ঘুরিয়ে, গণধর্ষণ করে শেষে খুন করা হল। সবাই শুধু দেখলেন আর দেখলেন আর দেখলেন!
১৬ জুলাই, ২০১১। উত্তরপ্রদেশের লখিমপুরখেরি গ্রামে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে বাড়ি থেকে সকলের সামনে টেনে গ্রামের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে পর পর ১০-১২ জন ধর্ষণ করল। ‘শাস্তি’-র কারণ, মেয়েটির নাকি স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে প্রেম ছিল। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে খোলা জায়গায় গণধর্ষিতা হওয়ার পর আত্মহত্যা করেছিল সেই কিশোরী।
অপ্রতিবাদ, কাপুরুষতা, অমানবিকতার ঘটনার তালিকা এতটাই দীর্ঘ যে পড়তে পড়তে এক সময় হাঁফ ধরবে, কিন্তু অপ্রতিবাদী জনগণ নিজেদের চরিত্রে অটল থাকার ব্যাপারে ক্লান্তিহীন। নিষ্ক্রিয়তাটা আমরা এত চমৎকার রপ্ত করেছি যে হাইওয়েতে পড়ে থাকা মৃতদেহের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যেতেও আমাদের বিন্দুমাত্র বাধে না। সারা রাত অবিশ্রান্ত গাড়ি উপর দিয়ে যাওয়ার পর যখন সেই মৃতদেহ উদ্ধার হয় তখন তাতে আর কোনও হাড় অবশিষ্ট নেই, পুরোটাই স্রেফ মাংসের দলা।
আশির দশকের একটা হিট হিন্দি সিনেমা ছিল। ‘মশাল’। তার একটা বিখ্যাত দৃশ্যে অসুস্থ ওয়াহিদা রহমান ব্যথায় পেট চেপে রাতের রাস্তায় বসে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার গাড়ি পাচ্ছেন না দিলীপকুমার। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলে যাওয়া একের পর এক গাড়ির দিকে পাগলের মতো ছুটে গিয়ে বলছেন, ‘এ ভাই, গাড়ি রোকো ভাই, গাড়ি রোকো।’ আমরা আসলে দিলীপকুমারের সামনে দিয়ে হুশ-হুশ করে চলে যাওয়া গাড়িগুলির সওয়ারি।
নিউটনের গতিসূত্র বলে, প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। কিন্তু ভারতীয় জনগণের নিরানব্বই শতাংশের সামনে কোনও ঘটনাক্রিয়া ঘটলে তাদের কোনও প্রতিক্রিয়া হয় না। প্রতিক্রিয়াহীন ‘মেরা ভারত মহান’-এর সামনে নিউটনও ফেল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.