চোরাপথে বাংলাদেশি বীজ কোচবিহারে, ফলন কমার আশঙ্কা
বোরো চাষের মরসুম শুরু হতেই বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে আসা ধান বীজ বিক্রি শুরু হয়েছে কোচবিহার জেলা জুড়ে। দিনহাটা, তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙা ও মেখলিগঞ্জ মহকুমার সীমান্ত লাগোয়া নানা গ্রাম তো বটেই, সদর মহকুমার কিছু এলাকাতেও ব্যাপক হারে ওই বীজ বিক্রির কারবার চলছে। এ দেশে তৈরি সার্টিফায়েড ধান বীজের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে আসা ওই ধান বীজের দাম তুলনামূলক কম বলে চাষির একাংশ সে সব লুফে নিচ্ছেন।
এই ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন কোচবিহারের সার ও কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে ওই ব্যাপারে উদ্বেগের কথা তাঁরা জেলা কৃষি দফতরের কর্তাদের কাছে জানিয়েছেন। তার পরেও চোরাপথে ওই বীজের এ দেশে ঢোকা বন্ধে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করছে না বলে অভিযোগ। কৃষি দফতর জানিয়েছে, এ সপ্তাহেই কারবার বন্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। জেলার কোচবিহার সদর মহকুমা কৃষি আধিকারিক বলরাম দাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে গত দু’দিনে পৌনে দু’শো কেজির বেশি বাংলাদেশি ধান বীজ আটক করা হয়েছে। তার মধ্যে তুফানগঞ্জ থেকে বৃহস্পতিবার ১৭০ কেজি বাংলাদেশ থেকে আসা ধান বীজ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার কোচবিহার সদরের পসারিরহাট এলাকা থেকে ৬ কেজি বাংলাদেশি বীজ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি বীজ। নিজস্ব চিত্র।
কোচবিহারের মুখ্য কৃষি আধিকারিক প্রণবজ্যোতি পণ্ডিত বলেন, “জেলার সমস্ত মহকুমা কৃষি আধিকারিকদের ওই ব্যাপারে সতর্ক নজর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসা বেশ কিছু ধান বীজের প্যাকেট উদ্ধার করা গিয়েছে। ওই বীজ ব্যবহারের ঝুঁকির বিষয় নিয়ে কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানোর ব্যাপারেও জোর দিচ্ছি।” জেলাশাসক মোহন গাঁধী পুরো বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
কৃষি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলায় ফি বছর গড়ে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়। ডিসেম্বর মাস পড়তেই এবারেও ওই চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা। ওই চাষের জন্য কৃষকদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশ থেকে আসা হাইব্রিড বীজ ব্যবহারে ঝুঁকেছেন। ওই ধরনের বীজ সার্টিফায়েড কিনা সে ব্যাপারে সংশয় যেমন রয়েছে, তেমনই এখানকার মাটিতে তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে কোন পরীক্ষা হয়নি। ফলে রোগ পোকার সংক্রমণ হলে ওই বীজ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সমস্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তা ছাড়া চাষে ক্ষতি হলে ওই ধরনের বীজ ব্যবহারে কৃষিবিমার টাকা পাওয়া নিয়েও জটিলতা হতে পারে বলে দফতরের কর্তারাই মনে করছেন। তার পরেও সীমান্ত পেরিয়ে কী ভাবে ওই বীজ ঢুকে জেলার বিভিন্ন হাট, দোকান তো বটেই, বাড়ি বাড়ি ঘুরে দালাল চক্রের লোকেদের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে তা নিয়ে কৃষি কর্তাদের একাংশের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর জেলাশাসকের সঙ্গে এক বৈঠকে চোরাপথে ওই বীজ ঢোকা বন্ধে বিএসএফ যাতে কড়া ব্যবস্থা নেয়, সেই দাবিও কৃষি কর্তাদের একাংশ জানাতে চাইছেন।
বিষয়টি নিয়ে সরব কোচবিহার জেলা সার ও কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। সমিতির অভিযোগ, দিনহাটার বামন হাট, চৌধুরী হাট, কালমাটি, সিতাই ও তুফানগঞ্জের বালাভূত, কৃষ্ণপুর, নাককাটিগছ, দেওচড়াইয়ে ওই ধরনের বীজ বাড়ি বাড়ি ঘুরে দালাল চক্রের লোকেরা বিক্রি করছে। মাথাভাঙার শীতলখুচি, গোঁসাইয়েরহাট, ডাকঘরা ও মেখলিগঞ্জের কিছু এলাকার হাটেও অনায়াসে বাংলাদেশের ধান বীজ বিক্রি চলছে। কৃষি ও সার উপকরণ ব্যবসায়ী সমিতির কোচবিহার জেলার কার্যকরী সম্পাদক রবিরঞ্জন ভাদুড়ি বলেন, “কৃষি দফতর অনুমোদিত এদেশের হাইব্রীড ধান বীজ কেজি প্রতি ২০০-২৫০ টাকা দাম পড়ছে। অথচ বাংলাদেশের বীজ ২০০ টাকার কমে বাড়িতে, হাটে দালাল মারফত বিক্রি হচ্ছে। মূলত কম দাম ও বেশি ফলনের টোপে কৃষকরা অনেকে ওই বীজ কিনছেন। কৃষি দফতরে আমরা অভিযোগ জানিয়েছি। বিক্ষিপ্ত অভিযান চালালে সমস্যা মিটবে না। চোরাপথে ওই ধরনের বীজ যাতে ঢুকতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা দরকার। কৃষি আধিকারিকদের সংগঠন স্যাটসা-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক ভাস্কর রায় বলেন, “বাংলাদেশ থেকে আসা বীজ ব্যবহার বন্ধে সচেতনা বাড়াতে সাংগঠনিক ভাবে প্রচার চালাতে আমরাও উদ্যোগী হচ্ছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.