চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
পৌরাণিক আদর্শ রূপায়িত আধুনিক মননে
ম্প্রতি ‘মিনিয়েচার ১০১’ শিরোনামে একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল কেমোল্ড আর্ট গ্যালারিতে। এর উদ্যোক্তা ছিলেন ‘কালার্স ল্যান্ড’ নামে একটি চিত্রকলার সংস্থা। এর সঙ্গে যুক্ত আছেন অনেক প্রতিষ্ঠিত ও উদীয়মান শিল্পী। ১০১টি ছোট মাপের ছবি নিয়ে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে ৫৭ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করেছেন। ছোট ছবির যৌক্তিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ছবির বাজার এখন খুবই ম্রিয়মাণ, বড় ছবির দাম বেশি। তাই বিক্রি হয় খুব কম। দাম কম রেখে ছোট ছবি করলে তার বিপণনযোগ্যতা বাড়ে। এ কথা মনে রেখেই যে সব শিল্পী সাধারণত বড় ছবি আঁকতেই অভ্যস্ত, তারাও তাঁদের বড় ছবিকে সংকুচিত করে ছোট মাপের মধ্যে নিয়ে এসেছেন। এই ‘মিনিয়েচার’ অভিধাটির খানিকটা অপপ্রয়োগই হয়েছে এখানে, এ রকম বলা যায়।
আকারে ছোট হলেই ‘মিনিয়েচার পেইন্টিং’ হয় না। এটি একটি বিশেষ ঘরানা, চিত্রের একটি বিশেষ দর্শন। মধ্যযুগে যার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছিল। পাশ্চাত্যে মিনিয়েচার কথাটি এসেছিল ল্যাটিন ‘মিনিয়াম’ শব্দ থেকে। যার অর্থ ‘রেড লেড’ বা সিসা থেকে উদ্ভূত লাল রং। পাণ্ডুলিপি অলঙ্করণের কাজে এই রং ব্যবহার করা হত। পাণ্ডুলিপির সূচনার প্রথম অক্ষরটিকে চিত্রায়িত করা হত এই রং দিয়ে। আমাদের দেশে অণুচিত্রের উদ্ভব ও বিকাশ আরও অনেক প্রাচীন। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক থেকে প্রায় অষ্টাদশ ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত বিভিন্ন ঘরানায় বিবর্তিত হয়েছে এই ধারা।
শিল্পী: ধীরেন শাসমল
আলোচ্য প্রদর্শনীর ছবিগুলিকে আমরা বড় ছবির ছোট সংস্করণ হিসেবেই দেখব। যোগেন চৌধুরীর ২০০৯-এ আঁকা যে ছবিটি ছিল এই প্রদর্শনীতে তাতে একটি বৃহদাকার সারসজাতীয় পাখি দুই ঠোঁটে একটি শিশুর ছিন্ন মাথা ভূমি থেকে তুলে নিচ্ছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এই ছবি বড় ভাবনারই ছোট পরিমাপের রূপায়ণ। প্রকাশ কর্মকারের নিসর্গেও বিস্তীর্ণ প্রকৃতিকে ধরার প্রয়াস। বিজন চৌধুরীর বীণাবাদিনীর রূপায়ণও ম্যুরালধর্মী। রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় তুলি চালনার স্বতঃস্ফূর্ততায় যে বিহঙ্গটি এঁকেছেন ছোট পরিসরেই অবশ্য তার সৌন্দর্য সবচেয়ে সংহত হয়। দেবব্রত চক্রবর্তীর অসি হাতে অশ্ববাহিনী মানবীর শৌর্য বড় মাপেই খুলত বেশি। উমা সিদ্ধান্তের দশভুজার মূর্তিও তাই। জহর দাশগুপ্তের প্রকৃতি-সংশ্লেষিত মদিগলিয়ানি ঘরানার মুখটিতে প্রসারিত ভাবনার সংকোচন পদ্ধতিটি উপভোগ্য। সমীর আইচের সাদা রেখায় গড়ে তোলা কিমাকার মুখটিতে আধুনিকতার সংকট ঘনীভূত হয়ে আছে। সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের কমনীয় যুবতীর আলোকচিত্র-সদৃশ মুখাবয়বটি খুবই ‘সুন্দর’। ওয়াসিম কাপুরের কণ্টকাকীর্ণ যিশুমুখ হিংসার বিরুদ্ধে করুণার প্রতীক। ধীরেন শাসমলের গণেশ মূর্তিটি বিশেষ ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মধ্যযুগীয় পৌরাণিক আদর্শকে তিনি রূপায়িত করেছেন আধুনিক মননের দৃষ্টিকোণ থেকে। সুজাতা চক্রবর্তী এঁকেছেন তরুমূলে বসে বাঁশি বাজিয়ে কৃষ্ণের গোচারণের প্রতিমাকল্প। মলয়চন্দন সাহা তাঁর পরিচিত আঙ্গিকের নিপুণ নিসর্গ এঁকেছেন। বর্ণিল জলভূমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে অজস্র বক। জয়দেব বালার নারী মুখাবয়বে লৌকিকের সারল্যের সঙ্গে মিশেছে ধ্রুপদী সংহতি। অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের ত্রিশূল ও পদ্ম হাতে দেবীমূর্তি, অরুণকুমার সমাদ্দারের প্যাঁচা সহযোগে দেবীত্বে উত্তীর্ণ মানবীমূর্তি, মলয় দত্তের বাচ্চা সহ মা-প্যাঁচা, পার্থ মৈত্রের সুনীলবরণ শ্রীকৃষ্ণ, সুব্রত ঘোষের দেবীর আদলে মানবী মূর্তি, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্যাঁচার রূপারোপ, দেবাশিস মল্লিক চৌধুরী, গৌতম সরকার, নিখিল বিশ্বাস, পরমা সান্যাল, পুর্ণেন্দুবিকাশ মণ্ডল, সুজিতকুমার ঘোষ প্রমুখ অনেকের ছবিতেই দেশীয় ঐতিহ্যগত আঙ্গিক আত্তীকরণের প্রয়াস দেখা যায়। আমাদের আধুনিক চিত্রকলায় যে ঐতিহ্যের সন্ধান শুরু হয়েছিল নব্য-ভারতীয় ঘরানায় তা যে এখনও যথেষ্ট ক্রিয়াশীল এই প্রদর্শনীতে তার কিছু আভাস উঠে আসে। পাশাপাশি আধুনিকতার সংকটকেও রূপ দিয়েছেন অনেক শিল্পী। আশিস কাবাসির কিশোরের মুখাবয়বে প্রতিফলিত হয় স্বপ্ন ও বাস্তবের দ্বন্দ্ব। দেবাশিস কাবাসি এঁকেছেন একটি ষাঁড়ের মুণ্ড। তার কপাল জুড়ে একটি দণ্ডায়মান পুরুষ। তপনকুমার দাসের মানুষের রূপায়ণে আতঙ্কের অভিব্যক্তি। অনেক ছবিতেই বড় ভাবনাকে ছোট পটে ধরতে গিয়ে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.