|
|
|
|
আলোচনার ইঙ্গিত লোবায় |
সরতে হল ডিআইজিকেও, চেক নিলেন পাঁচ আহতই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • লোবা |
লোবায় গুলিচালনার জেরে এক দিকে পুলিশকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা। অন্য দিকে আহতদের ক্ষতিপূরণ। ওই ঘটনায় বীরভূমের পুলিশ সুপার, দুবরাজপুর থানার ওসি-কে আগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ বার সরিয়ে দেওয়া হল ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) বাসব তালুকদারকেও। পুলিশি হামলায় আহতেরা বৃহস্পতিবার ক্ষতিপূরণের চেক নিয়েছেন পুলিশের হাত থেকেই। তাঁদের যুক্তি, চেক না-নেওয়াটা মুখ্যমন্ত্রীর অসম্মান।
ডিআইজি-কে সরানো হল কেন?
লোবার অশান্তি সামলাতে না-পারার জন্যই ডিআইজি-কে সরানো হল বলে মহাকরণ সূত্রের খবর। বর্ধমানের ডিআইজি হিসেবে বীরভূম ছিল বাসববাবুর অধীনেই। লোবা গ্রামে গোলমালের সময় তিনি সেখানকার দায়িত্বে ছিলেন। ওই ঘটনার জেরে বীরভূমের অপসারিত পুলিশ সুপার হৃষীকেশ মিনা প্রশাসনিক মহলে জানিয়েছিলেন, ডিআইজি-কে জানিয়েই ‘অপারেশন’ চালানো হয়েছিল। তার পরে এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) লোবায় যান তদন্ত করতে। এডিজি ফিরে আসার পরেই ডিআইজি-কে সরিয়ে দেওয়া হল। ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে বলেছিলেন, পদস্থ পুলিশকর্তারা কেউ আগাম ঘটনার কথা জানতেন না। কিন্তু প্রশাসনিক তদন্তে জানা গিয়েছে, জেলা থেকে অপারেশনের কথা উচ্চপদস্থ কর্তাদের বলা হয়েছিল।
বাসববাবুর জায়গায় ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) হচ্ছেন তাপস ঘোষ। আর মাত্র ছ’মাস চাকরি আছে তাপসবাবুর। তিনি এত দিন ছিলেন ডিআইজি (এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ)।
মঙ্গলবার লোবা গ্রামে দলীয় মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জানতে চেয়েছিলেন, আহতদের পরিবারের কেউ আছেন কি না। সাড়া পাননি তিনি। আহতদের আত্মীয়েরা তখন মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূরে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির ধর্নামঞ্চে অবস্থান-বিক্ষোভ করছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে চেক দিলে নেওয়া হবে, পুলিশের হাত থেকে তা নেওয়া হবে না বলে সভার দিন জানিয়েছিলেন কৃষিজমি রক্ষা কমিটির কিছু নেতা ও গ্রামবাসীর একাংশ।
সাড়া না-পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণের চেক বীরভূমের পুলিশ সুপারের হাত দিয়ে আহতদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সেই পাঁচ জন আহতের কাছে গিয়েই তাঁদের প্রত্যেকের হাতে ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেয় পুলিশ। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সভাপতি ফেলারাম মণ্ডল, কমিটির সদস্য এবং ঘটনার দিন আহত শ্যামল ঘোষের কথায়, “চেক না-নেওয়া মানে মুখ্যমন্ত্রীকে অসম্মান করা! সেটা আমরা কেন করব? আহতেরা চেক নেবেন না, সে-কথাও আমরা কখনও বলিনি।” সভার দিন কেউ চেক নিতে যাননি কেন? কমিটির সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার বলেন, “ওটা দলীয় সভা ছিল। তা ছাড়া আমাদের আশা ছিল, মুখ্যমন্ত্রী ধর্নামঞ্চে আসবেন।”
বস্তুত, সিউড়িতে জেলাশাসকের দফতর ঘেরাও বা মহাকরণ অভিযানের হুঁশিয়ারি দিলেও চেক নেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখার ইঙ্গিত দিতে চায় কমিটি এমনটাই মনে করা হচ্ছে। পুলিশি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুবরাজপুরের সদ্য বহাল ওসি অমরজিৎ বিশ্বাস লোবা এবং সংলগ্ন বাবুপুর গ্রামে গিয়ে আহত জীবন বাগদি, শ্যামল ঘোষ ও উপানন্দ মণ্ডলকে চেক দেন। ওই তিন জন সম্প্রতি সিউড়ি সদর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। পুলিশ সুপার মুরলীধর বলেন, “বৃহস্পতিবারেই বর্ধমান মেডিক্যালে গিয়ে আহত পূর্ণিমা ডোম ও গৌতম ঘোষের হাতে চেক তুলে দিয়েছে জেলা পুলিশ।”
লোবার ঘটনায় পুলিশকর্তাদের সরানোর সঙ্গে সঙ্গে তেহট্টের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এসডিপিও শৈলেশকে। তাঁকে বদলি করা হয়েছে রাজ্য পুলিশের তৃতীয় ব্যাটেলিয়নে। এ ছাড়া ডিজি (রেল) থেকে দিলীপ মিত্র হলেন ডিজি (প্রশিক্ষণ)। প্রোমোশন পেয়ে ডিজি (ইবি) হলেন বিজয়কুমার। আর এস নালোয়া ডিরেক্টর (সিভিল ডিফেন্স) থেকে হলেন ডিজি (হোমগার্ড)। |
|
|
|
|
|