বছর দুয়েক আগেও পার্টি অফিস চত্বরে ভিড় লেগেই থাকত। পঞ্চায়েত প্রধান থেকে জন প্রতিনিধিদের ভিড় তো বটেই, স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে রোজই যেন ছোট মাপের সভা হত। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরেই ওই ছবিটা পুরো পাল্টে গিয়েছে। জমজমাট ‘লালবাড়ি’ এখন সুনসান। আগাছার জঙ্গল, সংস্কারহীন ওই অফিস সন্ধের পর অন্ধকারে ডুবে থাকছে। অনেকটা পোড়োবাড়ির চেহারা নিয়েছে। পক্ষান্তরে, কাছেই নতুন তৈরি অফিস জমজমাট। সব সময়ই ভিড়। কারণ, রাজনৈতিক পালাবদলের পরে বাম শিবির ছেড়ে কর্মী-সমর্থক থেকে নেতাদের বড় অংশ ডান শিবিরে নাম লেখান।
কোচবিহারের বক্সিরহাট ব্লকের জোড়াই মোড় এলাকায় এখন এমনই ছবি। ওই ব্লকের ৪টি এলাকায়। তার মধ্যে ভানুকুমারী, ফলিমারি, রামপুর, শালবাড়ি অন্যতম। সব মিলিয়ে এলাকার প্রায় দেড় বছর ধরে সিপিএমের ৫টি দলীয় অফিস তালাবন্ধ। জোড়াই মোড়েরটি ছাড়া সবই দলের লোকাল অফিস।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে ওই বন্ধ অফিস খোলাই সিপিএমের মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। অন্তত দলের নেতা-কর্মীরা অনেকেই তাই-ই মনে করছেন। |
বস্তুত, ওই অফিস ফের না-খুললে কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার বার্তা দেওয়া পৌঁছবে না বলে স্বীকার করছেন দলের জেলা নেতারাও। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “বক্সিরহাটে তৃণমূলের সন্ত্রাস এতটাই বেশি, এত দিনেও বেশ কিছু অফিস খোলা যায়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা সেগুলি ফের সচল করার পরিকল্পনা নিচ্ছি। এটাও ঠিক অবাধ ভোট হলে বক্সিরহাটেও আমরাই জয়ী হব।”
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে বক্সিরহাটে সিপিএম ধাক্কা খেতে শুরু করে। পঞ্চায়েত সমিতি তো বটেই, হাতছাড়া হয় একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত। বিধানসভা নির্বাচনে বক্সিরহাটের আওতাধীন তুফানগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয় তৃণমূল। তার পর থেকেই দল বদলের হিড়িক পড়ে যায়। ওই ব্লকের ভানুকুমারি-২, বারকোদালী-২, শালবাড়ী-২, রামপুর-১, ফলিমারি সিপিএমের দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের দলবদলে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। এমনকী ফলিমারিতে সিপিএমের প্রধান ছিলেন ভারতী বিশ্বাস। এখন দলবদলের পরে তৃণমূলের প্রধান হিসাবে রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এলাকায় এসবের মারাত্মক প্রভাব পড়ে। সাংগঠনিক ভাবেও সিপিএমের দুর্বলতা চরম আকার নেয়। তার পরে থেকেই নিচুতলার কর্মীদের দলবদল বেড়ে যায়। এক সময় যাঁরা ওই পার্টি অফিসে নিয়মিত যাতায়াত করতেন, তাঁদের বড় অংশই মুখ ফিরিয়ে নেন। স্বাভাবিকভাবেই বাড়তে থাকে বন্ধ পার্টি অফিসের সংখ্যা।
এতদিনেও যা স্বাভাবিক না হওয়ার প্রমাণ ওই অফিসগুলির তালা না খোলাতেই স্পষ্ট। সিপিএমের বক্সিরহাট জোনাল সম্পাদক ধনঞ্জয় রাভা অবশ্য বলেন, “আমাদের প্রধান, পঞ্চায়েতদের জোর করে নিজেদের দলে নাম লেখাতে বাধ্য করে তৃণমূল। ফলিমারিতে আমাদের প্রধান দল বদলে তৃণমূলের প্রধান হন। অফিস খুলতে বাধা দেওয়া হয়। সবই জোর করে। এখন পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে বলে পঞ্চায়েতের আগে মানুষই চাইছেন ফের ওই অফিসগুলি স্বাভাবিক হোক।” তৃণমূলের বক্সিরহাট ব্লক কার্য্যকরী সভাপতি স্বপন সাহা অবশ্য তা মানতে চাননি। স্বপনবাবুর কথায়, “দুর্নীতি, স্বজনপোষণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঁদের লোকেরা দলে এসেছেন। কাউকে জোর করা হয়নি। কর্মী না থাকায় সিপিএম এলাকার অফিসগুলি খুলতে পারছে না তাও সবাই জানেন। অপপ্রচারে লাভ হবে না।” |