বহরমপুরের বৃদ্ধ দম্পতি খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার তিন জনকে গ্রেফতার করেছে বহরমপুর থানার পুলিশ। ধৃত তিন জনের নাম স্বপন দেবনাথ, আশিস দে ও দীপক রিওয়ানি। তার মধ্যে স্বপন ও আশিস প্রোমোটার ব্যবসায় যুক্ত আর দীপক ভাড়াটে হিসেবে ওই বাড়িতেই থাকত। বুধবার বিকেলে বহরমপুরের চোঁয়াপুর রেলগেটের কাছে শাম্তিকাননের দোতলা বাড়ি থেকে তুষারকান্তি ও পারুল দে নামে নিঃসন্তান দম্পতির দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরেই দীপক ও নমিতাদেবী নামে দুজন ভাড়াটেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে দীপক তাঁদের কাছে সব কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
এর পরেই দীপকের বয়ান অনুযায়ী পুলিশ শান্তিকাননের লাগোয়া রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা স্বপন ও আশিসকে গ্রেফতার করে। পুলিশের ধারণা, স্বপন, আশিস, দীপক ছাড়াও চতুর্থ এক ব্যক্তি ওই ঘটনার সময়ে ছিল। সেই যুবকই বৃদ্ধের গলার নলি কেটেছে বলে ধৃতরা জানিয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, “পরিকল্পনা করে ওই দম্পতিকে খুন করা হয়েছে। গোটা খুনের পরিকল্পনা করে স্বপন ও আশিস। তারা দুজনে প্রোমোটার ব্যবসায় জড়িত। বছর খানেক আগে তাদের কাছে বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু ওই দম্পতি রাজি হননি। এর পরে বৃদ্ধ দম্পতিকে বোঝানোর জন্য ওই বাড়ির এক জন ভাড়াটিয়াকেও কাজে লাগায় তারা। কিন্তু ভাড়াটিয়া যুবক উত্ত্যক্ত করত বলে ওই বৃদ্ধ বাড়ি থেকে তাকে উঠিয়ে দেন।” |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বাড়ির তিন ভাড়াটিয়ার মধ্যে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বহরমপুর স্টেশনের আরপিএফ হাবিলদার বারিয়ার হাঁসদা একটি ঘরে থাকেন। অন্য দুটি ঘরের একটিতে জেলাপ্রশাসনিক দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নমিতা হাজরা ও বেসরকারি সংস্থার কর্মী দীপক রিওয়ানি থাকত। ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা দীপক ঘর ভাড়া নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতে শুরু করলে তাকেও ব্যবহার করে ওই দুজন প্রোমোটার। সেই মত রবিবার সকালে ওই বৃদ্ধ বাজারে বেরিয়ে যেতেই টেলিফোন করে বাকি তিন জনকে দীপক নিজের ঘরে ডেকে নেয়। বাড়ির অন্য দুটি ভাড়াটের মধ্যে নমিতাদেবী তখন বাড়িতে ছিলেন না। বারিয়ারবাবু সারা রাত ডিউটি করে এসে ঘুমোচ্ছিলেন। এর পরে বাজার শেষে বাড়িতে ঢুকতেই বৃদ্ধের পিছন পিছন সিঁড়ি বেয়ে ওই চার জন দোতলায় ওঠে। রান্নাঘরের সামনে বাজারের ব্যাগ রাখতেই পিছন থেকে মাথায় হাতুড়ির আঘাত করে দীপক। বৃদ্ধ মেঝেতে পড়ে গেলে তাকে ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে চতুর্থ যুবক ধারাল ছুরি দিয়ে গলার নলি কেটে দেয়। পাশের ঘরে তখন ওই বৃদ্ধা শুয়েছিলেন। তাকে ওই অবস্থায় বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়ে বলেও ধৃতদের কাছ থেকে পুলিশ জেনেছে।
পুলিশ সুপার বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে ওই দম্পতির উপরে নজর ছিল। ওই বাড়িতে কোনও আত্মীয়স্বজন যাতায়াত করে না। বৃদ্ধ দম্পতিও কোথাও যেতেন না। এমনকী পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে বৃদ্ধ দম্পতির সদ্ভাব ছিল না। এক প্রকার অসামাজিক জীবনযাপন করতেন তাঁরা। ওই সুযোগ গ্রহণ করে খুনিরা। কোনও ভাবে দম্পতিকে মেরে ফেললে ওই বাড়ি নিজেদের দখলে হয়ে যাবে ভেবে তারা খুনের ছক কষে।” তবে এখন পর্যন্ত ওই দম্পতির পরিবারের কারও খোঁজ পায়নি পুলিশ। যদিও পাড়া-প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছেতুষারবাবুরা দুই ভাই এবং ৪ বোন। তুষারবাবু ছোট। বাবা অটলবিহারী দে বহরমপুরে স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ছিলেন। |