নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কুকুরের নির্বীজকরণে সাংসদ তহবিলের ২০ লক্ষ টাকা বেশ কয়েক মাস পড়ে ছিল পুরসভায়। শেষ মুহূর্তে ঘুম ভাঙল পুরসভার। কারণ, এ মাসের মধ্যেই খরচ করতে হবে ওই টাকা। আধুনিক যন্ত্র দেখতে তাই তড়িঘড়ি সোমবার চেন্নাই ছুটছেন পুরকর্তারা।
রাজ্যসভার সাংসদ ফরওয়ার্ড ব্লকের বরুণ মুখোপাধ্যায় ওই টাকা দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার বরুণবাবু বলেন, “শহরে কুকুরের উৎপাত বাড়ায় এক পদস্থ পুর-অফিসার নির্বীজকরণের জন্য টাকাটা চান। ” যদিও বরাদ্দ ফেলে রাখায় কোনও রাজনীতি নেই বলে পুরকর্তাদের দাবি। পুরসভার ওএসডি দেবাশিস সেনের কথায়, “দীর্ঘকাল এ দিকটায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।” কী এমন যন্ত্র, যা কিনতে চেন্নাই ছুটতে হবে? পুরকর্তার কথায়, “এখানকার পদ্ধতিতে দিনে ৮-৯টার বেশি কুকুরের অস্ত্রোপচার করা যায় না। চেন্নাইতে ‘ল্যাপারোস্কোপি’-র মাধ্যমে একসঙ্গে ৩০টি অস্ত্রোপচার হচ্ছে। ব্যবস্থাটা দেখতে যাব,” বলছেন দেবাশিসবাবু।
পুরসভার এক পদস্থ কর্তা জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ৯৬% মানুষের জলাতঙ্ক হয় পথ-কুকুরের কামড়ে। তাই এই স্টেরিলাইজেশন জরুরি। রাজ্যের ‘সোসাইটি ফর স্ট্রে ক্যানাইন বার্থ কন্ট্রোল কমিটির (এসএসসিবিসি)’ সদস্য দেবশ্রী রায়ের বক্তব্য, “স্টেরিলাইজেশনে গাফিলতির জন্য জলাতঙ্কের ভয় থেকে যাচ্ছে। পুরসভা পরিকাঠামো ঢেলে সাজছে।” |
পাঁচ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দায়িত্বে পথ-কুকুরের স্টেরিলাইজেশনের কাজ ব্যাহত হয়েছে বলে মনে করছে পুরসভা। পুর-সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কুকুরের সংখ্যা বরং ক্রমেই বাড়ছে। পুর প্রশাসনের বক্তব্য, এর জন্য যে ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে, সেই মতো কাজ হলে কলকাতায় পথ-কুকুরের সংখ্যা লক্ষের কাছাকছি পৌঁছত না। আপাতত প্রায় ১২ লক্ষ টাকা দামের দু’টি ল্যাপারোস্কোপি-র যন্ত্র কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। চেন্নাই থেকে ফিরেই টেন্ডারের মাধ্যমে দ্রুত তা কেনা হবে।
পুরসভার নিযুক্ত প্রাণী বিশেষজ্ঞ প্রভাতকুমার সামন্ত বলেন, “আগে কুকুর ধরা থেকে নির্বীজকরণ এবং অস্ত্রোপচার-পরবর্তী সতর্কতা নেওয়া হত না। অনেক ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো চিকিৎসকের সাহায্যও নিত না।” তাঁর দাবি, তাই যথার্থ নির্বীজকরণ নিয়ে সন্দেহ থাকতই।
মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, সম্প্রতি এসএসসিবিসি-র বৈঠকে ঠিক হয়, ধাপায় পুরসভাই কুকুরের খোঁয়াড় চালাবে। ৩০০টি খাঁচায় নির্বীজকরণ এবং অস্ত্রোপচার-পরবর্তী সেবার বন্দোবস্ত হচ্ছে। এখন কুকুর ধরার গাড়ি আছে ছ’টি। কর্মীসংখ্যা ৩০। হেল্পলাইনে ফোন করলে পুর-বাহিনীর গিয়ে কুকুর ধরার কথা। কিন্তু তা-ও ঠিক মতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
অতীনবাবু বলেন, “পরিকাঠামো দুর্বল ছিল। ঢেলে সাজাচ্ছি।” |