সুপ্রিম কোর্টের রায় যদি বিরুদ্ধে যায়, তা হলে বর্তমান সিঙ্গুর আইন খারিজ করে বিধানসভায় নতুন বিল আনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে রাজ্য সরকার। ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে তৃণমূলের সূত্রের খবর।
ওই সূত্রটি জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রীর আশা, সিঙ্গুর মামলার রায় রাজ্য সরকারের পক্ষেই দেবে শীর্ষ আদালত। কিন্তু কোনও কারণে যদি তা না হয়, তার জন্য বিকল্প রাস্তাও খুলে রাখছেন তৃণমূল নেত্রী। সে ক্ষেত্রে আগের সিঙ্গুর আইনটি বাতিল করে দিয়ে নতুন বিল আনা হবে বলে মনস্থির করে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রের খবর, কার্যত পুরনো বিলটিই তখন নতুন ভাবে আনা হতে পারে। বিলটি বিধানসভায় পাশের পরে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনে যাঁরা মমতার সঙ্গে ছিলেন তাঁদের কারও কারও সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতাতেও মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োজনে নতুন বিল আনার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর। ওই সূত্রটি বলেন, সিঙ্গুর আইনটিকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টের বক্তব্য ছিল, জমি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি আইন রয়েছে। এমতাবস্থায় রাজ্য সরকার এ ধরনের কোনও আইন করতে পারে না। রাজ্য সরকার ওই আইন তৈরি করলে তাতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হবে। সিঙ্গুর আইনে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
তৃণমূল সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের হার হলে রাজ্য নতুন বিল তৈরি করিয়ে তা পাশ করাবে বিধানসভায়। রাজ্যপালের সম্মতি পাওয়ার পরে সেই বিল পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কাছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়া গেলে সেই আইনকে আর অসাংবিধানিক বলা যাবে না বলেই তৃণমূল সূত্রের দাবি। |
সম্প্রতি সিঙ্গুরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলে এসেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় পক্ষে গেলে অনিচ্ছুক কৃষকদের হাতে জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে তিনি যে আশাবাদী তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। গত রবিবার সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ি বাজারে কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না আর এক ধাপ এগিয়ে বলেছিলেন, “আমাদের আশা সুপ্রিম কোর্টের রায় আমাদের পক্ষেই যাবে।”
কিন্তু সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের অনেকেই ইতিমধ্যে অধৈর্য হয়ে পড়েছেন। তাঁদের অনেকেই চেক পাওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দরবার করার কথা ভাবছেন। মমতা কিংবা বেচারাম সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে আশার কথা শোনালেও কৃষকেরা আর সময় দিতে রাজি নন। সিঙ্গুরের এক অনিচ্ছুক কৃষকের মন্তব্য, “অনেক হয়েছে আর নয়। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য জিতলেও যে আইনের যুদ্ধ শেষ হবে, তা তো নয়! কারণ, মামলায় হারলে টাটারা ফের আদালতের দ্বারস্থ হবে। দেড় বছরেও চলতি মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। নতুন মামলা হলে তা কত দিন যে যাবে, তা কে বলতে পারে!”
বস্তুত, রাজ্য সরকার বা তৃণমূলের প্রতি সিঙ্গুরের আস্থা যে ক্রমেই কমছে সেটা সাম্প্রতিক ঘটনাক্রমেই স্পষ্ট। ক’দিন আগে সিঙ্গুরে গিয়ে খোদ মমতাও তার আঁচ পেয়েছেন। আগে তিনি গেলে যে ভাবে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেতেন, এ বার তা হয়নি। সেটা বিলক্ষণ বুঝেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই সুপ্রিম কোর্টে হেরে গেলে কী করবেন, সেটা আগে থেকেই ভেবে রাখতে হচ্ছে তাঁকে। |