আপাতদৃষ্টিতে ক্ষুদ্র একটি ঘটনা। জম্মু-কাশ্মীরের বিধান পরিষদে চারটি আসনের জন্য নির্বাচন। কিন্তু তাহাই তাৎপর্যপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে নির্বাচনে যোগদানকারী ৩৩ হাজার সরপঞ্চের উৎসাহে। এই সরপঞ্চরা মাত্রই গত বছর নির্বাচিত হন। সন্ত্রাসবাদীদের হুমকি ছিল, জঙ্গি গোষ্ঠী ও সর্বদলীয় হুরিয়ত সম্মেলনের চোখরাঙানিও ছিল। তথাপি তাঁহারা ২০১১ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হইয়াছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পর এ বার তাঁহাদের কৃত্য ছিল, রাজ্যের বিধান পরিষদে চার জন সদস্যকে পঞ্চায়েত কোটায় নির্বাচিত করিয়া পাঠানো। প্রক্রিয়াটিকে বানচাল করিতে জঙ্গিরা হুমকি দেয়, এমনকী তিন জন নির্বাচিত সরপঞ্চকে হত্যা এবং ১১ জনকে আহতও করে। প্রকাশ্যে তাঁহাদের সরপঞ্চ পদ হইতে ইস্তফা দিতে বলা হয়। অনেকে সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়া ইস্তফা দেনও। কিন্তু নির্বাচনের লগ্ন সমাসন্ন হইলে তাঁহাদের ৯০ শতাংশই হুমকি উপেক্ষা করিয়া বিধান পরিষদে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করিয়া পাঠাইয়াছেন।
গত বত্রিশ বছরে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম। জঙ্গি তৎপরতার কারণে শ্রীনগর উপত্যকা সহ সমগ্র জম্মু-কাশ্মীরে যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তাহাতে এক সময় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু রাখাই অসম্ভব হইয়া পড়িয়াছিল। রাজ্য বিধানসভার আসনগুলিতে যদি বা ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের তৃণমূল স্তরের স্বশাসিত সংস্থাগুলিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান এক প্রকার অসম্ভব হইয়া ওঠে। নিরাপত্তা রক্ষীদের বলয় সরিয়া গেলে গণতন্ত্রীরা যে নূতন করিয়া সশস্ত্র জঙ্গিদের আওতায় আসিয়া পড়িবেন, এই শঙ্কাই প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের বিকাশে বাধা হইয়া ওঠে। তবে গত বছর প্রায় ৩৩ হাজার সরপঞ্চের নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা বুঝাইয়া দেয়, কাশ্মীরের আম জনতা শান্তি, সুস্থিতি ও বিকাশ চাহিতেছেন। তাই বত্রিশ বছর পরে বিধান পরিষদের চারটি শূন্য আসনে সরপঞ্চ-প্রতিনিধি প্রেরণের আয়োজন জঙ্গি ও হুরিয়ত হুমকির সম্মুখীন হইলেও সরপঞ্চরা নির্ভয়ে তাহাকে স্বাগত জানান।
এই ঘটনা জঙ্গিদের উত্তরোত্তর জনবিচ্ছিন্নতার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে। উল্লেখ্য, হুরিয়ত সম্মেলনের উগ্রপন্থী অংশের নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির আহ্বান অগ্রাহ্য করিয়াই বদগাঁও, গণ্ডেরবাল, বারামুল্লা, কুপওয়ারা, বান্দিপোরা, পুলওয়ামা, সোপিয়ান, অনন্তনাগ প্রভৃতি জঙ্গি-প্রভাবিত এলাকার সরপঞ্চরাও ভোট দিতে আগাইয়া আসিয়াছেন। কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসের আকর্ষণ যে ক্রমেই কমিয়া আসিতেছে, তাহার লক্ষণ আগেই মিলিয়াছে। পুলিশে চাকুরির জন্য উপত্যকার যুব সম্প্রদায় যে ভাবে অধীর আগ্রহে রাত জাগিয়া লাইনে দাঁড়াইয়াছে, তাহাতেই স্পষ্ট, রাজ্যের কর্মহীন শিক্ষিত তরুণদের কাছে জেহাদি মতাদর্শ অপেক্ষা কর্মসংস্থানের সুযোগ অধিকতর বাঞ্ছনীয়। রাষ্ট্র তথা নির্বাচিত সরকারকে দেখিতে হইবে, পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে ওই তরুণরা যেন পুনরায় সীমান্ত-পারের জেহাদি প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলিতে ফিরিয়া না যায়। |