|
|
|
|
চিটফান্ডের বাড়বাড়ন্তে উদ্বেগ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিভিন্ন মহল থেকে দীর্ঘ দিন ধরেই উদ্বেগ জানানো হচ্ছিল। এ বার পশ্চিমবঙ্গে চিটফান্ডের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ জানাল রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। বৃহস্পতিবার কলকাতায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকের পরে শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও বলেন, “ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারকে লিখিত ভাবে উদ্বেগের কথা জানিয়েছি।” রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, সারা
দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই ওই ধরনের আর্থিক সংস্থা সব থেকে বেশি। সুব্বারাও এ দিন বলেন, “চিটফান্ডকে
|
কলকাতায় ডি সুব্বারাও।
—নিজস্ব চিত্র |
নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব রাজ্যের।” ওই সংস্থাগুলির ব্যাপারে রাজ্যবাসীকে সচেতন করার উপর জোর দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যদিও মহাকরণে চিটফান্ড নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে ওই সব আর্থিক সংস্থা। দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠছে, বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে এই সব আর্থিক সংস্থা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে আমানত সংগ্রহ করছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সেবির আইন না মেনে করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে, এগুলির জন্যই তাদের কাছে জমা পড়া আমানতের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে বলেও অভিযোগ করছে ব্যাঙ্কগুলি। এ দিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নরও স্বীকার করেন, ব্যাঙ্কের আমানত সংগ্রহে চিটফান্ডগুলি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজ্যের অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত গ্রামে ব্যাঙ্ক-পরিষেবা পৌঁছয়নি বলেই চিটফান্ডের রমরমা বাড়ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের পরে মহাকরণে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এ রাজ্যে ৩৭ হাজার গ্রাম রয়েছে। তার মধ্যে ২৭ হাজার ৭৬৭ গ্রামে এখনও ব্যাঙ্কের কোনও শাখা নেই।” রাজ্যের সব মানুষের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য (ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন) ব্যাঙ্কগুলির আরও উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজন বলে এ দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকে জানিয়েছেন অমিতবাবু।
চিটফান্ডগুলিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন আরও কড়া হওয়া জরুরি বলে মনে করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এ দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক ডিরেক্টর বি পি কানুনগো বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হওয়া একটি আইন রয়েছে। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হচ্ছে না। নতুন একটি আইন ইতিমধ্যেই বিধানসভায় পাশ হয়েছে। তবে সেটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায়। নতুন আইন চালু হলে ওই সব আর্থিক সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা সুবিধা হবে।”
টাকা লেনদেনের ব্যাপারে কোনটা আইনি, কোনটা বেআইনি, তা নিয়ে পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একটি প্রশিক্ষণ প্রকল্প চালু করেছে বলে জানান সুব্বারাও। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর কে সি চক্রবর্তী বলেন, “পুরো ব্যবস্থাটি শোধরাতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা জরুরি। এ ছাড়া বেআইনি সংস্থার লেনদেন বন্ধ করতে পুলিশকেই ব্যবহার করতে হয়। তাই পুলিশের এই সব জানা প্রয়োজন। তাই এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।”
অমিতবাবু জানান, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছ’মাসে এ রাজ্যের ব্যাঙ্কগুলি কৃষিক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার ২৯ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার ৩২ শতাংশ ঋণ দিয়েছে। যা দেশের অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় নিতান্তই কম। একই ভাবে ২০১১-১২ আর্থিক বছরে অন্ধ্রে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ব্যাঙ্ক যেখানে ৮১৭১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের গোষ্ঠীগুলিকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫৫১ কোটি। পশ্চিমবঙ্গে ব্যাঙ্কগুলির আমানতের মাত্র ৬৩ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়েছে। যেখানে সারা দেশে এই গড় ৭৪ শতাংশ। ব্যাঙ্কগুলির আমানতের সাপেক্ষে ঋণের পরিমাণ যাতে আরও বাড়ানো যায়, সে জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান অমিতবাবু। |
|
|
|
|
|