|
|
|
|
ভোটের উত্তাপে শীতের কামড়ও হার মানছে ঢাকায় |
প্রেমাংশু চৌধুরী • ঢাকা |
নয়াদিল্লির রেস কোর্স রোডের ৭ নম্বর বাড়ি থেকে ঢাকার গণভবনের দূরত্ব প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার। অথচ ঢাকায় এসে মনে হচ্ছে, দুই বাড়ির বাসিন্দার ভাবনাচিন্তা এখন একই খাতে বইছে।
আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যেই দু’জনকে মানুষের রায়ের মুখোমুখি হতে হবে। দু’জনের সরকারের বিরুদ্ধেই জোরালো অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার। আবার আর্থিক সংস্কার ও উন্নয়নেই জোর দিচ্ছেন মনমোহন সিংহ ও শেখ হাসিনা, দু’দেশের দুই প্রধানমন্ত্রীই। দুই রাজধানী শহরের ছবিটা অবশ্য আলাদা। আগামী লোকসভা নির্বাচনের কত দেরি, তা দিল্লিতে পা দিয়েই কারও পক্ষে বোঝা কঠিন। আর ঢাকায় প্রতি পদে মালুম পড়বে, বছর ঘুরলেই নির্বাচন। যুদ্ধের দামামা বেজে গিয়েছে। মোড়ে মোড়ে ব্যানার, দেওয়ালে পোস্টার, টেলিভিশনে তরজা, প্রতিদিনই জনসভা-মিছিল-বিক্ষোভ। আওয়ামি লিগ, বিএনপি, জামাতে ইসলামি, জাতীয় পার্টি সকলেই নেমে পড়েছে মাঠে। রাজনীতির উত্তাপে শীতও কামড় বসাতে পারছে না ঢাকায়।
সামনের শক্ত চ্যালেঞ্জের কথা মাথায় রেখেই শাসক আওয়ামি লিগ ও বামপন্থী দলগুলির জোট আশা করছে, নির্বাচনের আগে তিস্তা চুক্তি সই হলে তারা কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেত। দেশের তথ্য-সম্প্রচারমন্ত্রী, শরিক দল জাসদ-এর নেতা হাসানুল হক ইনুর মতে, “কোন দল ভারতপন্থী আর কারা ভারত-বিরোধী, শুধু তার ভিত্তিতে এখন আর সব কিছু নির্ধারণ হবে না। ঘরোয়া রাজনীতিই তা ঠিক করবে, ভোটের ফল কোন দিকে যাবে। তবে তিস্তা চুক্তি সই হলে সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি হত। মনমোহন সিংহের সফরকে এ দেশের মানুষ খুবই ইতিবাচক দিক হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ফরাক্কার পরে তিস্তা-চুক্তি দু’দেশের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ মাইল-ফলক হতে পারত।” ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় মনমোহন সিংহ চাইলেই যে সব কিছু করা সম্ভব নয়, হাসিনা-সরকার তা মানছে। ইনু বলেন, “দেখতে পাচ্ছি, কাবেরী নদীর জল নিয়ে ভারতের মধ্যেই তো দু’টি রাজ্য ঝগড়া করছে। তাই তিস্তার জল বণ্টনের ক্ষেত্রেও যৌথ পর্যালোচনার যুক্তি মেনে নেওয়া হয়েছে।”
মনমোহন-সরকারের মতো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় অবশ্য হাসিনার হাত-পা বাঁধা নয়। কিন্তু মনমোহনের মতো তাঁকেও বিদুৎ-জ্বালানিতে ভর্তুকি কমাতে গিয়ে আমজনতার ক্ষোভের আঁচে পুড়তে হচ্ছে। হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসে শ্রেষ্ঠ চরিত্র কোনটি, মিশির আলি না হিমু, তা নিয়ে জোর বিতর্ক হলেও ঢাকার মানুষ একটি বিষয়ে একমত, হাসিনা-সরকার কিছুতেই মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে
পারছে না। এই ক্ষোভ প্রশমিত করতে হাসিনা-সরকার একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নাশকতায় নামা রাজাকার নেতাদের শাস্তি দিতে চাইছে। এঁরা প্রায় সকলেই কট্টর মৌলবাদী জামাতে ইসলামি ও ইসলামি ঐক্যজোটের নেতা।
কুখ্যাত সাকা চৌধুরীর মতো দু’এক জন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-তেও রয়েছেন। নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে হিংসা ও হামলার পথ নিয়েছে জামাত। মদত দিচ্ছে বিএনপি-ও। বিজয় দিবস উদযাপনের মধ্যেই খালেদা জিয়া সরকার-বিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘উনি কি তা হলে বিজয় চাননি?’ তথ্যমন্ত্রী ইনুর কথায়, “সংসদীয় গণতন্ত্রে মৌলবাদী জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ও সামরিক হস্তক্ষেপ রোখাটাই আগামী নির্বাচনের বড় চ্যালেঞ্জ।”
দুর্নীতি, কালো টাকা নিয়ে বিতর্কও পুরোমাত্রায় উপস্থিত। বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় পদ্মা নদীর ওপরে সেতু প্রকল্পে হাসিনা-সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুই প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
পাল্টা হিসাবে হাসিনা বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে জনকল্যাণে খরচ করার কথা ঘোষণা করেছেন। প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনতে হাসিনা-সরকারই তথ্যের অধিকার আইন এনেছে বলে সগর্বে জানালেন ইনু। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার, শিল্প ও পরিঠামোয় বিদেশি বিনিয়োগও শাসক জোটের অন্যতম অস্ত্র। দেখেশুনে মনে হয়, দিল্লি ও ঢাকার চরিত্রগুলো আলাদা হলেও রাজনৈতিক তরজার বিষয় একই। আর সেই কারণেই যেন ফারাক মুছে গিয়েছে দিল্লির ৭ নম্বর রেস কোর্স রোডের সঙ্গে ঢাকার গণভবনের। |
|
|
|
|
|