রাজ্যের জমি নীতির জটে কাটোয়ায় এনটিপিসি-র প্রস্তাবিত ১৬০০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন বিশ বাঁও জলে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, ওই প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার আর কোনও জমি অধিগ্রহণ করবে না। তবু রাজ্যকে বুঝিয়ে যাতে বাড়তি কিছু জমি পাওয়া যায়, সেই আশায় ফের মহাকরণে বৈঠক করতে আসছেন এনটিপিসি-র চেয়ারম্যান অরূপ রায়চৌধুরী। সংস্থা সূত্রে খবর, সম্ভবত আগামী সোমবার তিনি দেখা করবেন বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত ও মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের সঙ্গে।
সংস্থা সূত্রে খবর, এনটিপিসি-র কর্তারা কাটোয়া প্রকল্পের ব্যাপারে প্রায় হাল ছেড়ে দিলেও সম্প্রতি সংস্থার বিভিন্ন বৈঠকে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসায় অরূপবাবু ফের রাজ্যের মনোভাব বুঝতে কলকাতায় আসছেন। ঘটনাচক্রে, এ দিনই ইনফোকম সম্মেলনের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন বলেছেন, “রাজ্যে শিল্পায়নের পরিস্থিতি রয়েছে। তবে জমি একটা বিষয় (ইস্যু)।
এ দিকে নজর দেওয়া দরকার। ”
কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ১,০৭১ একরের মতো জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা রয়েছে আগের বাম আমলে। প্রয়োজন আরও ৫১৫ একরের মতো জমি। কিন্তু মমতা ক্ষমতায় এসে জানিয়ে দেন, তাঁর সরকার নতুন করে কোনও জমি অধিগ্রহণ করবেন না। বাকি জমি এনটিপিসি-কেই কিনে নিতে হবে।
রাজ্যের সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, প্রকল্প গড়তে চাইলে জমির ব্যবস্থা রাজ্য সরকারকেই করতে হবে। এনটিপিসি-র এক কর্তা বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হয়ে আমরা বেসরকারি সংস্থার মতো দরাদরি করে জমি কিনতে পারি না। তা-ও আমরা মাঝে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এতে বিদ্যুৎ মন্ত্রকেরও আপত্তি রয়েছে। তাই রাজ্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
পরিস্থিতি বুঝে এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ এখন আগের তুলনায় কিছুটা কম জমিতেই প্রকল্প গড়তে রাজি হয়েছেন। সংস্থার দাবি, কম জমিতে এই ধরনের বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার মতো আধুনিক প্রযুক্তি এখন সহজলভ্য। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর যা মনোভাব, তাতে কাটোয়া প্রকল্পের জন্য বাড়তি এক ছটাক জমিও অধিগ্রহণ করে দিতে তিনি রাজি নন। রাজ্যের পদস্থ আমলারাও সুযোগ পেলেই ইদানীং কাটোয়া প্রকল্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। এক আমলার বক্তব্য, শালবনিতে জিন্দল গোষ্ঠীর ইস্পাত প্রকল্পের কাজ কবে শুরু হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না। অন্য শিল্পও আসছে না। সেখানে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পই রাজ্যের মুখ রাখতে পারে। কারণ, ওই প্রকল্পে এনটিপিসি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। কর্মসংস্থান হবে ৫ হাজার।
কাটোয়া বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে ইতিমধ্যেই বাম দলগুলি প্রচারে নেমে গিয়েছে। প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজ্যের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে সিপিএম। এনটিপিসি-র এক কর্তা জানান, কাজ শুরু করতে পারলে, ২০১৭ সাল নাগাদ কাটোয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়ে যেত।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যে শিল্প নেই বলে এমনিতেই বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত। তা হলে কাটোয়ার বিদ্যুৎ নিয়ে রাজ্য করবে টা কী! বস্তুত, বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, রাজ্যের এখন যা বিদ্যুৎ পরিস্থিতি তাতে ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত চাহিদা সামলে দেওয়া যাবে। কিন্তু কাটোয়া প্রকল্প হলে এক দিকে রাজ্যে যেমন কর্মসংস্থান হতো, তেমনই জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে তা অন্য রাজ্যকে বিক্রি করা যেত। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত হলেও অন্য রাজ্যে বিদ্যুতের ভালই চাহিদা রয়েছে। তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশের মতো বহু রাজ্যে এখন বিদ্যুৎ ঘাটতি প্রবল। |