সাহসিকতা, শিক্ষা, খেলাধূলা এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য উত্তরবঙ্গের ৪ ব্যক্তিকে ‘সালাম বেঙ্গল’ সম্মান জানানো হল। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে আনন্দলোক এবং ‘অফিসার্স চয়েস’-এর যৌথ উদ্যোগে ওই সম্মান জানানো হয়। সাহসিকতা এ বছর ওই সম্মান পেলেন রায়গঞ্জের উকিলপাড়ার বাসিন্দা কল্যাণ কুমার গুহ। তিনি পুরসভার একজন অস্থায়ী কর্মী। শিক্ষায় কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা রবিচন্দ্র বর্মন। তিনি প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক। খেলাধূলায় সালাম বেঙ্গল দেওয়া হল দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের সুরজিৎ বিশ্বাসকে। পেশায় চিকিৎসক না-হলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ওই সম্মান মেলেন মালদহ জেলা কৃষি বিভাগের সহ অধিকর্তা সৌমেন্দ্রনাথ দাস।
গত ৪ বছর ধরে এই সম্মান দেওয়া হচ্ছে। উদ্যোক্তারা জানান, কৃষি আধিকারিক সৌমেন্দ্রবাবু বাড়িতে সব্জি চাষের মাধ্যমে ‘পরিবারের পুষ্টি রক্ষা’ নিয়ে কাজ করছেন। প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক ক্ষেত্রে গরিব পরিবারের মহিলারা অপুষ্টিতে ভোগেন। তারা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বাড়িতে সব্জি চাষে উৎসাহী করছেন। তাতে পরিবারের পুষ্টি রক্ষা করতে পারছেন ওই মহিলারা। এখন পর্যন্ত জেলার প্রায় ৪০০ মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে দেখে প্রাণ কাঁদে রবিবাবুর। তিনি যা রোজগার করেন সবই দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েদের বই কেনা পড়াশোনার জন্য ব্যয় করেন। এলাকায় তিনি এ কারণে ‘বই-কাকু’ বলেও পরিচিত। |
সাহসিকতায় নজির গড়েছেন কল্যণবাবু। সেটা ২০০৮ সাল। পাড়ার একটি বাড়িতে আগুন লাগলে ছুটে যান। ওই বাড়িতে এক মহিলা তার তিন সন্তানকে নিয়ে থাকেন। যখন আগুন লাগে ওই মহিলা তখন বাইরে ছিলেন। ৪-১০ বছরের দুই মেয়ে এবং এক ছেলে তখন ঘরে। আগিন লাগলেও তারা ঘরে আটকে পড়ে। বাসিন্দারা জনো হয়ে হইচই করলেও তাদের উদ্ধার করতে কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন কল্যাণবাবু। স্ত্রীকে ডেকে এনে ওই বাড়ির পাঁচিলের পাশে দাঁড় করান। এর পর নিজে ৬ ফুট উঁচু পাঁচিল টপকে জ্বলন্ত বাড়িতে ঢুকে একে একে তিনটি শিশুকে উদ্ধার করেন। সে সময় বাড়িতে রাখা একটি গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুততার সঙ্গে শিশুদের বাড়ি থেকে বার করে পাঁচিলের তুলে দেন। ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর স্ত্রী তাদের নামান।
গঙ্গারামপুরের সুরজিৎবাবু ভলিবলের প্রশিক্ষণ দেন। কোথাও ভলি খেলা হচ্ছে জানলেই সেখানে গিয়ে উঠতি প্রতিভা বেছে নিজের প্রশিক্ষণ শিবিরে আনেন। উন্নত কোচিং দিতে নিজেও কলকাতায় গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁর চেষ্টাতেই ওই জেলার একাধিক ভলি খেলোয়াড় জাতীয় স্তরে খেলে পদক আনছে। |