আসন্নপ্রসবাকে কাঁচির খোঁচা, অভিযোগ কমিশনে
প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করে কাঁদছেন বছর পঁচিশের তরুণী। এই ছটফটানি আর গোঙানির ‘শাস্তি’ হিসাবে চিকিৎসকের উপস্থিতিতে কর্তব্যরত নার্স তাঁকে ক্রমাগত মেরেছেন, গালাগাল দিয়েছেন এবং কাঁচি দিয়ে খুঁচিয়ে তাঁর ডান পায়ের উরু ক্ষতবিক্ষত করেছেন বলে অভিযোগ ওই তরুণীর। ২৩ নভেম্বর তিনি এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেছেন কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রসূতিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ শোনা যায় না, এমন নয়। কিন্তু এ বার জল গড়িয়েছে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন পর্যন্ত।
মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি থানার সাদিখাড় দিয়ার গ্রামীণ হাসপাতালের এক নার্স ও এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গত ৩ অক্টোবর স্বাস্থ্য দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সারথী মণ্ডল নামে ওই প্রসূতি। অভিযোগ জানানো হয়েছিল জেলাশাসককেও। স্বাস্থ্য দফতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু প্রায় দেড় মাস কাটলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা স্বাস্থ্য দফতর তদন্তের ফল বা অগ্রগতি নিয়ে অভিযোগকারীকে কিছু জানায়নি বলেও অভিযোগ।
গত শুক্রবার, ২২ নভেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের আওতাধীন সংস্থা ‘ইউনাইটেড নেশনস ভলান্টারি ফান্ড ফর ভিকটিম অফ টরচার্স’ (ইউএনভিএফভিটি)-এর কর্মীরা সারথী মণ্ডলের গ্রাম সাহরামপুরে স্বাস্থ্য-শিবির করতে গিয়েছিলেন। তাঁদেরই সব জানান ওই তরুণী। সেই সূত্রেই পৌঁছন কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন পর্যন্ত।
অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন সাদিখাড় দিয়ার গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার অমর ঘোষ। তিনি বলেন, “পরীক্ষা করে দেখেছি, উরুর ক্ষতগুলি কোনও ছোট ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হয়েছে। ওটা কাঁচির আঘাত হতে পারে। আমি অভিযুক্ত নার্সকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি অভিযোগ স্বীকার করেননি। প্রত্যক্ষদর্শীও মেলেনি। অগত্যা আমার রিপোর্ট কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাঁরা জবাব না দিলে আমার কিচ্ছু করার নেই।”
দেড় মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে সারথী মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র
রাজ্যের পরিবারকল্যাণ আধিকারিক জ্যোতির্ময় চাকী অবশ্য জানিয়েছেন, এমন অভিযোগ তাঁর কানে আসেনি।
কী হয়েছিল ১ অক্টোবরের সেই রাতে?
সারথী জানিয়েছেন, প্রসব-যন্ত্রণা নিয়ে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তিনি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হন। যন্ত্রণায় কোঁকাচ্ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “ভর্তি হওয়ার পর থেকে ওই নার্স আমাকে মারতে শুরু করলেন। সঙ্গে অশ্রাব্য সব কথা। সামনে ডাক্তারবাবু দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি কিছু বললেন না। উল্টে ইন্ধন দিলেন। রাত একটা নাগাদ আমাকে জোর করে রেফার করে দিলেন। গাড়িতে ওঠার সময় বাচ্চা হয়ে গেল। তখন নার্স আবার মারতে লাগলেন।” সারথীর দাবি, “যোনিমুখ সেলাই করার সময় আমি আবার ব্যথায় কঁকিয়ে উঠতে ওই নার্স আমার ডান পায়ের উরুতে বার বার কাঁচি ফুটিয়ে দিতে থাকেন। এ ব্যাপারে মুখ খুললে আমার অবস্থা খারাপ করে দেবেন বলেও হুমকি দেন।”
ইউএনভিএফভিটি-র চিকিৎসকেরা সারথীকে পরীক্ষা করে মানবাধিকার কমিশনে জানিয়েছেন, মারের চোটে সারথীর ডান পা ও বাঁ কান জখম হয়েছে। মানসিক ভাবে এখনও তিনি বিপর্যস্ত। অভিযুক্ত নার্সের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে অভিযুক্ত চিকিৎসক সুজয় মোদক বলেন, “ব্যাপারটা নিয়ে হইচই হচ্ছে জানি। তদন্তকারীদের সব জানিয়েছি। সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলব না।” রাজ্যে নার্সদের বৃহত্তম সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক শিখা মুখোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি হাসপাতালে পরিকাঠামো কম, লোকজন নেই। অথচ রোগীর চাপ বাড়ছে। নার্সদের প্রচুর বাড়তি দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। এতে অনেকেই মেজাজ হারাচ্ছেন। যত দিন যাচ্ছে, এই ঘটনা বাড়ছে। আমরা চিন্তিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.