বালির তৃণমূল নেতা তথা পরিবেশকর্মী তপন দত্তের হত্যার তদন্তে রাজ্যের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাইলেন তাঁর স্ত্রী প্রতিমা দত্ত। তিনি শনিবার প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে দলের প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দ্বারস্থ হওয়ার ব্যাপারে তাঁর সাহায্য চান। প্রদীপবাবু বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হন। রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে তপনবাবুর পরিজনদের দেখা করানোর জন্যও এ দিনই তৎপর হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
২০১১-র ৬ মে তপনবাবু খুন হন। প্রতিমাদেবীর দাবি, জলা ভরাটের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্যই তাঁর ওই পরিণতি হয়েছে। কিন্তু গত দেড় বছরে অভিযুক্তরা গ্রেফতার হননি। উল্টে চার্জশিট থেকে রাজ্যের এক মন্ত্রী-সহ কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম বাদ গিয়েছে। সিআইডি যথাযথ তদন্ত করছে না বলে অভিযোগ করে ঘটনার সিবিআই তদন্তও চেয়েছেন তিনি। এমনকী, তদন্তে গড়িমসির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেও আঙুল তুলেছেন তিনি। ওই সমস্ত অভিযোগ জানাতে অতি সম্প্রতি বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের সঙ্গে দেখা করেছিলেন প্রতিমাদেবী। প্রদীপবাবুর সঙ্গে দেখা করেও তিনি এই অভিযোগই জানান। প্রতিমাদেবীর সঙ্গে তাঁর দেওর দীপক দত্ত ও পরিবেশবিদ কুনাল গুহরায়ও ছিলেন।
প্রদীপবাবুর কাছে প্রতিমাদেবীর আর্জি, “সিআইডি আমার স্বামীর খুনের তদন্ত করলেও তা আসলে একটা খেলা। আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রায়ই আমাদের প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের শান্তিতে বাঁচার ব্যবস্থা করে দিন।” তপনবাবুর হত্যার সুবিচার পেতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সাহায্যের জন্যও প্রদীপবাবুকে অনুরোধ করেছেন প্রতিমাদেবী। |
প্রতিমাদেবীর সঙ্গে কথা বলার পরে প্রদীপবাবু বলেন, “জানি, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। কিন্তু ওঁরা যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সাহায্য চাইছেন, তা খুবই ন্যায়সঙ্গত। কারণ, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নিশ্চয়ই রাজ্য সরকারের কাছে ওই খুনের তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইবে। তখন রাজ্য সরকার নড়েচড়ে বসবে।” প্রদীপবাবু জানান, এ দিনই তিনি তপনবাবু হত্যা-মামলার চার্জশিট এবং অন্যান্য নথি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠিয়েছেন। তাঁর আশ্বাস, “আমাদের তরফে যে ধরনের পদক্ষেপ করা দরকার, করব। ওঁরা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে সুবিচার পাচ্ছেন না বলে ওঁদের রাজ্যপালের কাছেও নিয়ে যাব।” প্রদীপবাবু জানান, তিনি এ দিনই রাজ্যপালের সময় চাইতে তাঁর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ৭ ডিসেম্বর তপনবাবুর স্ত্রী ও পরিজনদের রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার কথা।
প্রতিমাদেবীর ক্ষোভ, “স্বামীর হত্যা নিয়ে কথা বলতে গত দেড় বছরে বহু বার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু উনি আমাকে সময় দেননি।” তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্রতিমাদেবী নিজেও তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যা। এই প্রেক্ষিতে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “মা-মাটি-মানুষের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দলের পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামীর খুনের তদন্ত নিয়ে কথা বলার জন্য সময় দিতে পারেন না। কিন্তু সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদকে সময় দেন, তাঁর স্বামীকে বাঁচানোর জন্য।” তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে প্রতিমাদেবীর যাবতীয় অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “খবরের কাগজ সাজিয়ে গুছিয়ে গল্প লিখছে।” বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুও ফের তপন-কাঁটায় বিঁধেছেন রাজ্য সরকারকে। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দলের নেতা খুন হয়েছেন। তার জন্য তাঁর দলেরই একাংশ সিবিআই তদন্ত দাবি করছে। কিন্তু আমাদের অবস্থান সিবিআই নিয়ে আগে যা ছিল, এখনও তা-ই। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের ব্যাপার।” তাঁর কটাক্ষ, “আমাদের এক জনের বিরুদ্ধেও কংগ্রেস সিবিআই লাগাতে পারেনি। কিন্তু এখন তৃণমূলের খোদ সাংসদ-মন্ত্রীরা সিবিআইয়ের ভয়ে বসে আছেন।” |