|
|
|
|
|
কাঁটা ২: এবিজি-রিপোর্ট
চান রাজ্যপাল
জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
এবিজি-কে কেন হলদিয়া ছাড়তে হল, সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, শ্রমিক অসন্তোষ, স্থানীয়
সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা এবং রাজ্যের অবস্থান জানতে চান রাজ্যপাল। রাজভবনের চিঠি রাজ্যকে। |
এবিজি বিতাড়ন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি বাড়ল!
কী পরিস্থিতিতে এবিজি-কে রাজ্য ছাড়তে হল এবং সে ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাই বা কী, মুখ্যমন্ত্রীর অধীন স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে সেই রিপোর্ট চাইলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন।
এ নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাদের। কারণ হলদিয়ায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা করেছেন, সেখানকার অবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক। কিন্তু রাজ্যপালের কাছে হলদিয়া নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সূত্র থেকে রিপোর্ট জমা পড়েছে। ওই সব রিপোর্টে এবিজি হলদিয়া ছাড়ার ফলে ব্যবসায়িক লোকসানের কথা তো বলা হয়েছেই, পাশাপাশি সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকেও দায়ী করা হয়েছে। যা প্রথম থেকেই মানতে নারাজ মহাকরণ। এখন রাজ্যপালের কাছে এ নিয়ে বিশদে জানতে চেয়েছে কেন্দ্রও। তাই তিনি রিপোর্ট চেয়েছেন বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।
কী জানতে চেয়েছেন নারায়ণন?
গত ২২ নভেম্বর রাজ্যপালের সচিব চন্দন সিনহা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘হলদিয়া বন্দরের চলতি পরিস্থিতি ধারাবাহিক ভাবে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে রয়েছে। এবিজি-কে কেন হলদিয়া ছাড়তে হল, সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, শ্রমিক অসন্তোষ, স্থানীয় সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা এবং রাজ্যের অবস্থান রাজ্যপাল জানতে চান। সে জন্য আপনার কাছে একটি রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে।’
রাজ্যপাল জানতে চান, হলদিয়ায় গত তিন মাসে যা ঘটেছে, তার খুঁটিনাটি। এবং জানতে চান, এমন ঘটনা কেন ঘটল। রাজ্য এই পরিস্থিতি এড়াতে কী ভূমিকা নিয়েছে এবং এবিজির প্রস্থান নিয়ে রাজ্যের নীতিগত অবস্থানই বা কী, তা-ও তিনি জানতে চেয়েছেন। রাজ্যপালের সচিব রাজ্যকে এ-ও জানান যে, রাজভবন এই সংক্রান্ত রিপোর্ট দ্রুত পেতে চায়।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ মাস আগে এই শুভেন্দু অধিকারীরই নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নারায়ণন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরকারকে চিঠি লিখেছিলেন। যদিও রাজ্যপালের রিপোর্ট তলব নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তমলুকের সাংসদ। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “রাজভবনের এমন চিঠির কথা আমার গোচরে আসেনি। ফলে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না।”
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অবশ্য মনে করেন, রাজ্যপালের সব সময়েই রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চাওয়ার অধিকার রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “সরকারের উচিত হলদিয়ায় যা ঘটেছে, তা রাজ্যপালকে জানানো।” রাজভবনের চিঠি পেয়ে অস্বস্তিতে পড়লেও তাই উত্তর দিতে তৎপর হয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর। স্বরাষ্ট্রসচিব দফতরের অফিসারদের দ্রুত রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এই সূত্রে গোয়েন্দা দফতর, পুলিশ বিভাগ এবং শিল্প দফতরের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে।
এবিজি বিতাড়ন পর্বে কী ঘটেছে হলদিয়ায়?
বন্দর ও সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর ২৩ অগস্ট বন্দরকে একটি নোটিস পাঠিয়ে এবিজি জানায়, তারা হলদিয়া ছাড়তে চায়। তাদের অভিযোগের আঙুল ছিল শ্রমিক সংগঠনগুলির দিকে। এবিজি-র অভিযোগ, পূর্ব মেদিনীপুরের এক সাংসদ এবং বন্দর কর্তাদের মধ্যস্থতায় রফা হয়েছিল, প্রয়োজন না থাকলেও ৬২৭ জন শ্রমিককেই রাখবে তারা। পরিবর্তে পাবে মাসে ৯ লক্ষ টন পণ্য খালাসের দায়িত্ব। কিন্তু পণ্য খালাসের প্রতিশ্রুতি রাখা হয়নি। তাই লোকসান বাড়ছে। এই চাপে তারা হলদিয়া ছাড়তে চায়।
এবিজি-র এই নোটিস পেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। আদালতে এবিজি জানায়, স্থানীয় সাংসদ ও শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের জঙ্গিপনায় তারা ২২ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের দুই বার্থে কাজ বন্ধ। আদালত পুলিশি নিরাপত্তায় কাজ শুরু করার নির্দেশ দেয়। কাজ শুরুর কথা ছিল ২৯ অক্টোবর। কিন্তু তার ঠিক আগের রাতে এবিজি-র তিন অফিসার, এক কর্তার স্ত্রী ও এক বছরের শিশু কন্যাকে অপহরণ করা হয়। এর পর এবিজি-র ফরাসি সহযোগী সংস্থা এলডিএ হলদিয়ায় কাজ করতে রাজি হয়নি। বাধ্য হয়ে হলদিয়া ছেড়ে চলে যায় ওই সংস্থা।
বিরোধীরা এই নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা প্রশ্ন সরব হয়। কংগ্রেসও কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী জি কে ভাসানের কাছে হলদিয়া নিয়ে হস্তক্ষপ করার জন্য দরবার করেন। যদিও এত কিছুর পরেও রাজ্যের হেলদোল ছিল না বলেই অভিযোগ। রাজ্যপালের কাছেও তাঁরা অভিযোগ জানান। এর মধ্যে অনেকটা সময় কলকাতায় ছিলেন না রাজ্যপাল। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি শহরে ফেরেন। ২১ নভেম্বর রাজ্য মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হয়। সে দিন রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে একান্তে বৈঠকও সারেন মমতা। তার পর দিনই রাজভবন থেকে মহাকরণের কাছে এবিজি সংক্রান্ত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। |
|
|
|
|
|