আরও অস্বস্তির জোড়া ফলা
কাঁটা ১: ত্রিফলায়
গরমিল পুরসভা-অডিটেও
হরে ত্রিফলা আলো লাগানোয় অনিয়ম ধরা পড়ল পুরসভার নিজস্ব অডিটেও। শনিবার ওই অডিটের খসড়া রিপোর্ট জমা পড়েছে পুর কমিশনার খলিল আহমেদের কাছে। পুর সচিবালয় সূত্রের খবর, ত্রিফলা আলো লাগানোর ক্ষেত্রে অনিয়ম নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলা হয়েছে ওই অন্তর্বর্তী রিপোর্টে।
কী রয়েছে ওই রিপোর্টে?
পুর সচিবালয় সূত্রে খবর, রিপোর্টে বলা হয়েছে, দরপত্র প্রকাশিত হওয়ার আগেই কাজের বরাত পাওয়ার আবেদনপত্রের সঙ্গে দেয় অগ্রিম বা আর্নেস্ট মানি জমা পড়েছে পুর- কোষাগারে কাজের অর্ডার পাওয়ার আগেই ঠিকাদার সেই কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন একই কাজের জন্য এক এক জন ঠিকাদারকে এক এক রকম মূল্য (পেমেন্ট) দেওয়া হয়েছে পুরসভার স্টোরে ৩৮ হাজার মিটার পাইপ থাকা সত্ত্বেও বাতিস্তম্ভ বানানোর কাজে তা ব্যবহার না করে বাইরে থেকে পাইপ কেনা হয়েছে বাজারের থেকে একশো টাকা বেশি দামে বাল্ব কেনা হয়েছে এবং নির্ধারিত মূল্য (ফেয়ার রেট) ঠিক করার সময় কেবল মাত্র এক জনের কাছ থেকেই দর নেওয়া হয়েছিল।
এ দিন বিকেলে খলিল আহমেদের কাছে খসড়া রিপোর্ট জমা পড়ে। তার পরই পুরসভার আলো বিভাগের বর্তমান ডিজি মনোব্রত চৌধুরীকে ডেকে পাঠান পুর-কমিশনার। পুর- সচিবালয়ের এক অফিসার জানান, শুধু বাতিস্তম্ভ লাগানোর বরাতেই অনিয়ম নয়, কম ওজনের মাল দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে ওই অন্তর্বর্তী অডিটে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বরাতে বাতিস্তম্ভের দৈর্ঘ্য দেওয়া হয়েছিল ৫.১২ মিটার। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তার থেকে কম দৈর্ঘ্যের বাতিস্তম্ভ লাগানো হয়েছে। অর্থাৎ কম লোহা ব্যবহার করে বাড়তি মুনাফা করা হয়েছে।
দুর্নীতির ছয় দফা
• টেন্ডারের আগেই জমা আর্নেস্ট মানি
• ওয়র্ক অর্ডার দেওয়ার আগে কাজ শেষ
• এক জনের থেকে দর নিয়েই ফেয়ার রেট
• একই কাজের জন্য বিভিন্ন দর
• বাজারের থেকে ১০০ টাকা বেশিতে বাল্ব
• মজুত থাকা সত্ত্বেও ফের পাইপ কেনা
কলকাতার সৌন্দর্যায়নের জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ লাগিয়েছে পুরসভা। অভিযোগ, দরপত্র এড়াতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কাজ পাঁচ লক্ষ টাকার নীচে ৬০০টি ফাইলে ভাগ করে বরাত দেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে এ নিয়ে রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু হয়। ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানায় কংগ্রেস ও বামেরা। রাজ্যের কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলও (সিএজি) পুরসভার কাছে ত্রিফলা সংক্রান্ত ফাইল দেখতে চায়। পুরসভা তা দিতে গড়িমসি করে। তখনই মেয়র জানিয়েছিলেন, এ ব্যাপারে পুরসভার ইন্টারনাল অডিটই যথেষ্ট। পরে পুরসভা সিএজি-কে ওই সব ফাইল দেখাতে রাজি হলেও এখনও সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
ইতিমধ্যে পুরসভার আলো বিভাগের ডিজিকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেন পুর-কমিশনার। পুরো বিষয়টি নিয়ে ইন্টারনাল অডিট করারও নির্দেশ দেন তিনি। পুরসভার মুখ্য অডিটর বিপ্লব গুহরায়কে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুরসভার নিজস্ব অডিট কাঠামো মজবুত না থাকায় পুরসভা অনুমোদিত একটি অডিট সংস্থাকে ওই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুরসভা সূত্রের খবর, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ওই রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তার এক দিন পরে, শনিবার সেই রিপোর্ট জমা দিল সংস্থাটি।
পুর-সচিবালয় সূত্রের খবর, খসড়া রিপোর্ট হলেও পুর কমিশনারের স্বাক্ষরের পরই ওটা পূর্ণাঙ্গ অডিট রিপোর্ট হিসেবে গৃহীত হবে। এখন প্রশ্ন উঠছে, ওই রিপোর্ট কি মেনে নেবেন পুরকর্তারা?
মহাকরণের এক পদস্থ অডিটর জানান, রিপোর্টটি দিয়েছে পুরসভার অনুমোদিত এক বেসরকারি অডিট সংস্থা। রিপোর্ট পরিবর্তন বা সংযোজন করা খুব ঝুঁকির। কারণ যে কোনও সময় ওই সংস্থা থেকে তা বেরিয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া এখন বিষয়টি নিয়ে জনস্বার্থ মামলা হয়ে যাওয়ায় এই ধরনের অডিট রিপোর্ট রদবদল করা খুব সহজ নয়।
পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ রিপোর্ট জমা পড়ার কথা মেনে নিলেও এ নিয়ে কোনও রকম মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটা খসড়া রিপোর্ট। চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা পড়লে যা বলার বলব।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.