বিনোদন ইংরেজি ছবির দর্শক কি
বাড়াবে ‘লাইফ অফ পাই’

ধীর আগ্রহে টিকিট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে দুই যুবক। তাঁদের বলা হয়েছে, পাঁচ জন না এলে ‘লাইফ অফ পাই’ চালানো হবে না। সেটা ছিল, ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো। ঘড়িতে ঠিক ৯টা ২৫, হল-এর সামনে হাজির হয়ে গেলেন পাঁচ জন।
ইংরেজি ছবির এত অল্প দর্শক? ছবিটা উল্টে গেল সপ্তাহের শেষে। রবিবারের সন্ধ্যায় ‘লাইফ অফ পাই’ দেখতে কানায় কানায় ভরে উঠল সাউথ সিটি-র ফেম। রবিবারের আইনক্স সিটি সেন্টারও প্রায় ভর্তি, ‘টোয়াইলাইট সাগা: দ্য ব্রেকিং ডন পার্ট ২’ দেখতে। তা হলে কি ‘লাইফ অফ পাই’ বা ‘টোয়াইলাইট’ কলকাতায় ইংরেজি সিনেমার দর্শক বাড়াতে পারবে? নাকি শহরে ইংরেজি সিনেমার দর্শক সত্যিই কমে গিয়েছে?
ফেমের এক কর্তা বললেন, “এটা ঠিক যে, কলকাতায় ইংরেজি ছবি দেখার দর্শক কম। লোক হয় শুধু ফেম সাউথ সিটি আর আইনক্স ফোরামে। ‘লাইফ অফ পাই’ দু’জায়গাতেই ভাল ব্যবসা করছে। ‘টোয়াইলাইট’ও ভালই চলছে।” এমনকী শহরের একটি স্কুল থেকে পড়ুয়াদেরও নিয়ে যাওয়া হয়েছে ফেম সাউথ সিটিতে। গত শনিবার ৮২.৭১% ভর্তি ছিল ‘লাইফ অফ পাই’-এর প্রেক্ষাগৃহ, ‘টোয়াইলাইট’-এ ছিল ৭৭.৯১%। রবিবারে দর্শক ছিল আরও বেশি। ‘লাইফ অফ পাই’-এর ক্ষেত্রে ৯০.১৯% আর ‘টোয়াইলাইট’-এর ক্ষেত্রে ৮০.১৩%। ব্যবসা ভাল করেছে হাইল্যান্ড পার্কের ফেমও। সেখানে রবিবারের পরিসংখ্যান ‘লাইফ অফ পাই’-এ ৮২.৪২% আর ‘টোয়াইলাইট’-এ ৭৬.২৭%।
এই দু’টি ব্যালান্সশিট দেখে কি বলা যায়, কলকাতায় ইংরেজি সিনেমা দেখার চল আবার ফিরে এল?
সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর সময় বোধহয় এখনও হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, ‘দ্য অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান’-এর জন্য বাংলা থেকে পরিবেশকের আয় হয়েছিল ১.২ কোটি। যেখানে মহীশূর-বেঙ্গালুরু অঞ্চলে এই পরিসংখ্যান ছিল ৩ কোটি। বাংলায় ‘স্কাইফল’-এর আয় ছিল ৬০ লক্ষ। মহীশূর-বেঙ্গালুরু অঞ্চলে ৩ কোটি।
‘দ্য অ্যাভেঞ্জার’-এর সময় বাংলা থেকে এসেছে ৮০ লক্ষ। মহীশূর-বেঙ্গালুরু থেকে ২.৮ কোটি। সোনি পিকচার্স সূত্রে জানা গেল, ‘টিনটিন’ কলকাতায় ব্যবসা করেছে, তাতে তাঁরা খুবই খুশি। তবে অন্যান্য ছবি তেমন দাগ কাটতে পারেনি।
কেন? অনেকের মতে, এর কারণ কলকাতায় হলিউডের ছবি মুক্তি পায় দিল্লি বা মুম্বইয়ের পরে। কিন্তু অন্য একটি সূত্রের দাবি, “কলকাতায় ‘স্পাইডারম্যান’ রিলিজ করেছিল আমেরিকায় রিলিজেরও আগে। সমস্যা হল, কলকাতায় যত সংখ্যক ইংরেজিভাষী দর্শক আছেন, তাঁদের চাহিদার সঙ্গে সব সময়ে দর্শকসংখ্যার খুব একটা সামঞ্জস্য থাকে না।”
কেন? পূর্র্বাঞ্চলে সোনি আর ডিজনি-র ছবি পরিবেশনার দায়িত্বে আছে ওম মুভিজ। তারা ডিজনি-র পূর্বাঞ্চল, রাজস্থান আর মহীশূর-বেঙ্গালুরু অঞ্চলেরও ডিস্ট্রিবিউটর। ওম মুভিজের ডিরেক্টর অরুণ মেহরা বললেন, “ইংরেজি সিনেমা দেখার আগ্রহ কলকাতায় বেশ কমেছে।” ‘দ্য ডার্ক নাইট’ পূর্বে ব্যবসা করেছে ৮৫ লক্ষের মতো। সেখানে মহীশূর-বেঙ্গালুরুতে সংখ্যাটা ৩.১০ কোটি। “দিল্লি বা মুম্বই বাদ দিয়েও পুণে-চেন্নাইও কলকাতার থেকে ভাল ব্যবসা করছে।” অরুণের ধারণা, অবস্থাটা তখনই পাল্টাবে যখন বড় হলিউড স্টুডিওগুলো আলাদা ভাবে তাদের ছবিগুলো সম্পর্কে প্রচার করবে।
তা হলে কি এটাই বিশ্বাস করতে হয় যে, শহরের ইংরেজি বলা-ইংরেজি জানা দর্শক হলিউডের ছবি দেখতে ততটা আগ্রহী নন? অনেকেরই মত হল, হলিউডি ছবিতে আগ্রহ কমার কারণ টিকিটের চড়া দাম। সমীক্ষা বলছে, দর্শক হল-এ না গিয়ে আজকাল অন্য ভাবে হলিউডের ছবি দেখছেন। ইংরেজি সিনেমার চ্যানেলে, ডিভিডিতে, কিংবা ডাউনলোড করে। এবং এই সব ক্ষেত্রে কিন্তু কলকাতা মোটেই পিছিয়ে নেই। ‘পিক্স’-এর মার্কেটিং অধিকর্তা হিম্মত বুটালিয়া বলেন, “কলকাতা আমাদের বড় মার্কেট। সর্বভারতীয় স্তরে যেখানে ইংরেজি সিনেমার চ্যানেল দেখার আগ্রহ ০.৯৫% দর্শকের, সেখানে কলকাতায় দর্শকের সংখ্যা ১.৪১%।”
এ ছাড়াও আছে পাইরেটেড ডিভিডি। পাইরেসি অবৈধ হলেও তার বিক্রির হার দেখে একটা ছবির জনপ্রিয়তা বোঝা যায়। চাঁদনি মার্কেট থেকে গড়িয়াহাট অবধি সব পাইরেটেড ডিভিডি-র দোকানে একটা বড় সংখ্যক বিদেশি ছবির স্টক থাকে। এবং তার চাহিদাও যথেষ্ট।
সাম্প্রতিক কালের ইংরেজি ছবি নিয়ে প্রশ্ন করলে দেখা যায়, বেশির ভাগ উত্তরই তরুণ প্রজন্মের জিভের ডগায়। এর অনেকটা কৃতিত্বই দাবি করে টরেন্ট থেকে ডাউনলোডের ধুম। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সায়ন সেন (নাম পরিবর্তিত) ইতিমধ্যেই কম্পিউটারে প্রায় ৫০০ ছবি ডাউনলোড করে ফেলেছেন। এর মধ্যে ৪৫০টি ছবিই বিদেশি। সায়নের দাবি, “টরেন্ট থেকে ডাউনলোডের ঝোঁক অন্যান্য শহরের তুলনায় কলকাতায় অনেক বেশি।” গত বছর মুক্তি পায় ‘দ্য আয়রন লেডি’। ছবিটির জন্য অস্কার পান মেরিল স্ট্রিপ। ‘লাইফ অফ পাই’ হল-এ দেখলেও এই ছবিটি দেখতে কিন্তু হল-এ যাননি সায়ন। “টরেন্ট থেকে ডাউনলোড করেই দেখে নিয়েছিলাম।”
সায়নের মতো আরও অনেকেই আছেন যাঁরা ইংরেজি ছবির পোকা। বাড়িতে বসে ল্যাপটপে ছবি দেখতে তাঁদের উৎসাহ প্রচুর। এঁদের হল-এ নিয়ে যেতে পারলে কলকাতার ইংরেজি ছবির দর্শকের সংখ্যাটা অনেক বাড়বে।

মুম্বইয়ের হাসপাতালে এক
অনুষ্ঠানে ঐশ্বর্যা। ছবি: এ এফ পি
মুম্বইয়ের এক অনুষ্ঠানে করিনা।
শনিবার। ছবি: পি টি আই



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.