বৃদ্ধির হার ফের ৫.৫ শতাংশের ‘গেরো’য় আটকে যাবে বলে গত সপ্তাহেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। আজ, শুক্রবার সরকারি পরিসংখ্যান বেরনোর পর দেখা গেল, বৃদ্ধি নেমে গিয়েছে তারও নীচে। চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তা দাঁড়িয়েছে ৫.৩%।
উদ্বিগ্ন হলেও, এই সংখ্যাকে অবশ্য অপ্রত্যাশিত মনে করেনি শিল্পমহল। ‘দুঃসংবাদ’কে ‘বুড়ো আঙুল দেখিয়ে’ ১৬৯ পয়েন্ট উঠেছে শেয়ার বাজার। অনেকেই মনে করছেন, সব থেকে খারাপ সময় পেরিয়ে এসেছে দেশের অর্থনীতি। আগামী দিনে তা হাঁটবে চড়াইয়ের দিকে। দিনের শেষে এই আশার পালেই বাতাস জুগিয়েছে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের পরিসংখ্যান। এ দিন প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কয়লা, সিমেন্ট, ইস্পাত-সহ মোট আটটি মূল পরিকাঠামো ক্ষেত্রকে নিয়ে তৈরি সূচক গত অক্টোবরে উঠেছে ৬.৫%। সেপ্টেম্বরের ৫.১ শতাংশের তুলনায় তো বটেই, আট মাসে এই বৃদ্ধি সর্বোচ্চ।
আর্থিক বৃদ্ধি ৫.৩ শতাংশে নেমে আসায় প্রত্যাশিত ভাবেই খুশি নন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, “যেটুকু প্রত্যাশা ছিল, এই হার তার থেকেও নীচে। কম বৃষ্টিতে কৃষি উৎপাদন মার খাওয়া ও কল-কারখানায় উৎপাদনের চাকা বসে যাওয়াই এর মূল কারণ।” |
ভাল খবর? শুক্রবার সংসদ ভবনে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। ছবি: পিটিআই |
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের বৃদ্ধি সামনে আসার পর আর্থিক বছর শেষের পূর্বাভাস নামিয়ে এনেছেন সি রঙ্গরাজনও। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার মতে, বছর শেষে বৃদ্ধি দাঁড়াবে ৫.৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে। এমনকী ৬ শতাংশের কতটা কাছাকাছি পৌঁছনো যাবে, তা-ও নির্ভর করবে বাকি দুই ত্রৈমাসিকে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর উপর। ঠিক যে কারণে গত ২৪ নভেম্বর চিদম্বরম বলেছিলেন, প্রথম দুই ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি তলানিতে পড়ে থাকায় খাদের ধারে দাঁড়ানো অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে প্রবল চাপে পড়বে কেন্দ্র। বাধ্য হবে সংস্কারের নীতি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনে কিছু কড়া, অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে। তা না-হলে, আর্থিক বছরের শেষেও বৃদ্ধি পড়ে থাকবে সেই ৫.৫ শতাংশের তলানিতেই। ২০০২-’০৩ সালের পর গত এক দশকে যা সর্বনিম্ন।
কিন্তু যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া-সহ অনেকেই মনে করছেন, সব থেকে খারাপ সময় পেরিয়ে এসেছে অর্থনীতি। বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সেপ্টেম্বরেই সংস্কারের ঝোড়ো দ্বিতীয় ইনিংস খেলা শুরু করেন মনমোহন সিংহ। কেন্দ্র হাঁটে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের মতো অপ্রিয় কিন্তু প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে। তাই সে সবের ফসল ঘরে তুলতে অপেক্ষা করতেই হবে আগামী ত্রৈমাসিকগুলির জন্য। মূলত এ বছরের শেষ ত্রৈমাসিক থেকে পুরোদস্তুর চাকা ঘোরার পালা শুরু হবে বলে আশাবাদী তাঁরা। প্রত্যাশার এই পারদকে আরও চড়িয়ে দিয়েছে দেশের অর্থনীতি নিয়ে সম্প্রতি মূল্যায়ন সংস্থা মুডিজ এবং ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক গোল্ডম্যান স্যাক্সের ইতিবাচক মন্তব্য।
এই আশা যে একেবারে ভিত্তিহীন নয়, অন্তত তার প্রাথমিক ইঙ্গিতটুকু দিয়েছে পর পর দু’মাসে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি। তার অক্টোবরের উত্থানে ইন্ধন জুগিয়েছে শোধিত পেট্রোপণ্য (২০.৩%), কয়লা (১০.৯%), ইস্পাত (৫.৯%), সিমেন্ট (৬.৮%) এবং সারের (২%) উল্লেখযোগ্য উৎপাদন বৃদ্ধি। আগামী দিনে এই আট পরিকাঠামো ক্ষেত্রের ভাল ফলের প্রভাব শিল্প সূচককেও কিছুটা চাঙ্গা করবে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি। |