৬৫ বছর আগে ঠিক এই দিনেই রাষ্ট্রপুঞ্জে ভোটাভুটিতে ভাগ হয়েছিল ব্রিটিশ অধিকৃত প্যালেস্তাইন। জন্ম হয়েছিল ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েলের। ঠিক সে দিনই আর একটি ঐতিহাসিক ভোট হল রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায়। তাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য নয় এমন পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা পেল প্যালেস্তাইন। সেই সঙ্গে বড় কূটনৈতিক ধাক্কা খেল আমেরিকা ও ইজরায়েল।
দীর্ঘ দিন ধরেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে প্যালেস্তাইনি প্রশাসন। কিন্তু, বরাবরই সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইজরায়েল। প্যালেস্তাইনিদের মধ্যেও রয়েছে বিভাজন। ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তি চুক্তির পরে প্রতিষ্ঠিত প্যালেস্তাইনি প্রশাসনের হাতে ছিল ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও গাজা ভূখণ্ড। কিন্তু, জেরুজালেমের প্যালেস্তাইনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে গাজার নিয়ন্ত্রক হামাসের।
আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় অবশ্য প্যালেস্তাইনের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন ছিল চোখে পড়ার মতো। ১৯৩টি সদস্য-রাষ্ট্রের মধ্যে প্যালেস্তাইনকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে ভারত-সহ ১৩৮টি দেশ। আমেরিকা, ইজরায়েল-সহ ন’টি দেশ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। ভোটদানে বিরত ছিল ৪১টি দেশ।
এই মর্যাদা এখনই প্যালেস্তাইনের বাস্তব অবস্থার কোনও পরিবর্তন ঘটাবে না। তবে গাজায় ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পরেই এই ভোট প্যালেস্তাইনি সমস্যাকে আবার প্রচারের আলোয় ফিরিয়ে আনল বলে মনে করা হচ্ছে। সাধারণত প্যালেস্তাইন সমস্যা নিয়ে সরব হয় আরব রাষ্ট্রগুলি। কিন্তু, মিশর-সহ কয়েকটি দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন হওয়ায় কিছুটা হলেও প্রচারের আলো সরে গিয়েছিল প্যালেস্তাইনিদের উপর থেকে।
ভোটের ফল ঘোষণার পরে আনন্দে ফেটে পড়েন মাহমুদ আব্বাস-সহ প্যালেস্তাইনি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। সাধারণ সভার মধ্যেই প্যালেস্তাইনি পতাকা তুলে ধরেন তাঁরা। ভোটের আগে বক্তৃতায় আব্বাস জানিয়েছেন, সব সময়েই ইজরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় রাজি প্যালেস্তাইন। কিন্তু, এখনও সাম্প্রতিক ইজরায়েলি হামলার ক্ষত সারাতে ব্যস্ত প্যালেস্তাইনিরা। এখন রাষ্ট্রপুঞ্জের দায়িত্ব দ্রুত প্যালেস্তাইনি রাষ্ট্রের জন্মের ঘোষণায় সিলমোহর দেওয়া।
বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, এই মর্যাদায় কিছুটা হলেও কূটনৈতিক সুবিধা পাবেন প্যালেস্তাইনিরা। আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সদস্য হতে পারলে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে ওই আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে তারা।
ভোটের ফলে স্বভাবতই খুশি নয় আমেরিকা ও ইজরায়েল। তাদের বক্তব্য, ইজরায়েলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ছাড়া প্যালেস্তাইনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ দিনের ভোটে বরং সেই প্রক্রিয়া ধাক্কা খেল।
প্যালেস্তাইনেও ঘোষণার প্রতিক্রিয়া মিশ্র। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের রামাল্লায় উৎসবে মেতেছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু, তাঁদেরও অনেকের প্রশ্ন, বাস্তবে কী আদৌ কোনও পরিবর্তন আনবে এই সিদ্ধান্ত। হামাস জানিয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জে রাষ্ট্রের মর্যাদা পাওয়া প্যালেস্তাইনিদের স্বাভাবিক অধিকার। কিন্তু, মাহমুদ আব্বাসের বক্তৃতায় ইজরায়েসের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। হামাস এখনও ইজরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। |