ছেলে কোলে কামরা থেকে নামার সময় হুমড়ি খেয়ে পড়তে গিয়ে কোনওরকমে সামনের লোকটিকে ধরে রক্ষা পেলেন মহিলা। আচমকা ধাক্কা খেয়ে যাত্রীটি রেগেমেগে পিছনে তাকাতেই মহিলার নিরীহ স্বীকারোক্তি, ‘প্ল্যাটফর্মটা এত নীচে যে টাল সামলাতে পারিনি’। বস্তুত রোজ এ ভাবেই ভুগতে হচ্ছে বেশিরভাগ যাত্রীকে। বিশেষত মহিলা-ছোটদের।
হাসনাবাদ-শিয়ালদহ শাখার বসিরহাট ও চাঁপাপুকুরের মধ্যে ভ্যাবলা স্টেশন। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সর্বত্র উচ্চতার বিভিন্নতার জন্য নিত্যযাত্রীদের সমস্যার শেষ নেই। প্রায় রোজই নামা ওঠা করতে গিয়ে কেউ না কেউ জখম হচ্ছেন। স্টেশনের মূল প্ল্যাটফর্মটি কামরার পা দানি থেকে প্রায় দেড় ফুট নীচে। আবার কোথাও পা দানি থেকে প্ল্যাটফর্ম ৬ ইঞ্চি নীচে। আবার কোথাও তা এক ফুট। এর পর আবার লোকাল ট্রেন ৯ বগি থেকে ১২ বগির হওয়ায় (প্রায় এক বছর হয়ে গিয়েছে) প্ল্যাটফর্ম দু’দিকেই ৪০ ফুট করে বাড়ানো হয়েছে। এই বাড়ানোর কাজও সমান ভাবে হয়নি। প্ল্যাটফর্মের এক এক অংশে এক এক রকম উচ্চতার জন্য যাত্রীরা ওঠানামা করতে গিয়ে খুবই সমস্যায় পড়ছেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ, মহিলা যাত্রী ও ছোটরা। অফিস টাইম ছাড়া অন্য সময় সাবধানে রয়ে সয়ে ওঠানামা করার সুযোগ থাকলেও অফিস টাইমে প্রচণ্ড ভিড়ে সেই সুযোগ থাকে না। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এই ভাবে চলতে থাকলে যে কোনও দিন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা যাত্রীদের। |
তবে শুধু প্ল্যাটফর্মের উচ্চতাই একমাত্র সমস্যা নয়। কাজেকর্মে রোজই এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াতকারী রমেশ চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জয় বিশ্বাস, কল্পনা সিকদার, রত্না মণ্ডল বলেন, “মূল স্টেশন চত্বরের মধ্যে কোনও শৌচালয় নেই। আধুনিকীকরণের কথা বলা হলেও কম্পিউটারের অভাবে টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইন পড়ে। ফলে ভিড় হয়ে গেলে প্রায়ই গণ্ডগোল বাধে। প্ল্যাটফর্মের পাশে পানীয় জলের কল থাকলেও অধিকাংশ সময়েই তা জলশূন্য।”
স্টেশনের পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে চৌমাথা-ন্যাজাট রোড। ট্রেন এলে রাস্তা আটকানোর জন্য গেট ফেলতে হয়। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে যানবাহন। তৈরি হয় যানজট। এই কারণে এখানে একটি ফ্লাই ওভারের দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। নিত্যযাত্রীদের তরফে চন্দন বিশ্বাস, সুভাষ চৌধুরী বলেন, “অসমান প্ল্যাটফর্মের জন্য দুর্ঘটনা তো ঘটছেই। তার উপর লাইনের ওপার থেকে স্টেশনে ওঠার জন্য কোনও ফুট ব্রিজ নেই। নেই কম্পিউটারে টিকিট কাটার ব্যবস্থা। ফলে ভিড়ের সময় অনেকেই ট্রেন মিস করেন।” স্টেশনের নানা সমস্যা নিয়ে যাত্রীরা ইতিমধ্যেই রেল দফতরের প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী এবং শিয়ালদহের ডিআরএমের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। |
তবে অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধানে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আগামী শনিবার রেল অবরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন যাত্রীদের একাংশ। অভিযোগের বিষয়ে, স্টেশনের দায়িত্বে থাকা দীননাথ পাল বলেন, “এক সময় স্টেশনটি ঠিকাদারের দায়িত্বে হল্ট হিসাবে চলত। পরবর্তীতে স্টেশনটি রেল নিজেদের হাতে নিলে ঠিকাদার আদালতের দ্বারস্থ হন। ফলে ভ্যাবলা স্টেশন পরিচালনার জন্য কর্মী রাখা হলেও এখনই এটিকে পুরোপুরি স্টেশনে পরিণত করা সম্ভব হচ্ছে না। সেই কারণেই যাত্রীদের সব রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না।” তাঁর দাবি, “ভ্যাবলা স্টেশনের দায়িত্ব বসিরহাট স্টেশন কর্তৃপক্ষের। তবে প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন অংশে উচ্চতার রকমফের চিন্তার বিষয়। আদালতে সমস্যা মিটলে স্টেশনের উন্নতি এবং যাত্রী পরিষেবার পূর্ণাঙ্গ কাজ শুরু হবে।”
|