এই শান্তি চিরস্থায়ী হোক...
• কিষেণজি মৃত্যুর পর বছর পার। পালাবদল হয়েছে রাজ্যেও। ধরা পড়েছেন বা আত্মসমর্পণ করেছেন বেশ কিছু মাওবাদী নেতা-নেত্রী। বড়সড় নাশকতাও ঘটেনি আর। আপাতশান্ত জঙ্গলমহলে কী ভাবছেন এলাকাবাসী? আশঙ্কার চোরা স্রোত কী মুছেছে চিরতরে?
আমার কর্মস্থল ১৬ কিলোমিটার দূরে শালবনির পিড়াকাটায়। জঙ্গলমহলে অবরোধ-আন্দোলন চলার সময় সেখানে পৌঁছতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। যানবাহন চলত না। রাস্তায় পড়ে থাকত গাছের গুঁড়ি। এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। যাতায়াতের সেই ভোগান্তি এখন অতীত।
ইলা মণ্ডল, লালগড়, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী।

• অশান্তি পর্বে ঘরবন্দি হয়ে বোমা-গুলির শব্দ শুনতাম। চাষ করতে যেতেও ভয় হত। আদিবাসী দেখলেই যৌথ বাহিনী আমাদের জঙ্গল পার্টির লোক সন্দেহে নির্যাতন চালাত। উল্টোদিক থেকেও ভয় ছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। এটা যেন চিরস্থায়ী হয়। শান্তিতে ও নির্ভয়ে চাষ করছি।
শুকলাল সরেন, রামগড়, চাষি।

• তখন মনে হত, বেঁচে থাকাটাই আশ্চর্যের। বাক্-স্বাধীনতা হারিয়েছিলেন এলাকাবাসী। পঞ্চায়েত অফিস একটানা দীর্ঘদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। যৌথ বাহিনী ও মাওবাদী উভয়ের হাতেই মার খেয়েছি। এখন বাধাহীন ভাবে বিভিন্ন কাজ করা যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে নানা অনুষ্ঠান ও উৎসব হচ্ছে।
গোপালচন্দ্র হাঁসদা, রামগড়ের পঞ্চায়েত সদস্য।

• গত তিন বছরে দিনমজুরের কাজ করতে বাইরে যেতে সাহস হত না। তখন ভিন্ জায়গায় কাজে যেতেও ভয় করত। গুম-খুনের দিনলিপি আমাদের আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। ওই সময় রুজিতে টান পড়ত। এখন দিন বদলেছে। আমি রামগড়ে কাজ করতে এসেছি।
কার্তিক দিগার, শালবনি, দিনমজুর।

• আগে কংগ্রেসের কর্মী ছিলাম। ওই সময় ছত্রধর মাহাতো জনগণের কমিটির রামগড় শাখা গঠন করলেন। সেই কমিটির সদস্য হতে বাধ্য করা হল। জোর করে মিছিলে হাঁটানো হত। এখন এলাকায় শান্তির পরিবেশ ফিরে এসেছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।
নয়ন রায়, রামগড়, বেসরকারি কর্মী।

• তখন প্রতি মাসে গড়ে পাঁচ-ছয় দিন বন্ধ থাকত। কখনও আবার টানা বন্ধ ও অবরোধ। সে সময়ে দোকানের ঝাঁপ বন্ধ রাখতে হত। ঝাঁপ বন্ধ রেখে লুকিয়ে বিক্রিবাটা করলে পরিণাম ভয়াবহ ছিল। কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। দোষ আমাদের অদৃষ্টের। এখন শান্তিতে ব্যবসাটা করতে পারছি।
গুণধর প্রতিহার, কাঁটাপাহাড়ি, মিষ্টি দোকানের মালিক।

• দু’বছর আগের ঘটনা। সদর দরজায় তালা দিয়ে রাখার ‘অপরাধে’ একদল যুবক ঘরে ঢুকে লুঠপাট চালাল। আমাকে মারধর করে মিটিঙে নিয়ে গেল। দীর্ঘ চিকিৎসার পর পায়ের ক্ষত সেরেছে। মনের ক্ষত সারেনি। যারা আমায় মারধর করেছিল, তাদের কয়েকজন যে এক সময় আমার ছাত্র ছিল।
সুধীরকুমার মণ্ডল, চাকাডোবা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।

• অশান্তির দিনগুলিতে স্কুলে যেতে ভয় করত। বন্ধ-অবরোধ হলে দূরের শিক্ষকেরা আসতে পারতেন না। একবার তো টানা এক মাস স্কুল বন্ধ ছিল। পড়াশুনায় মন বসত না। কথা বলতে হত মেপে-মেপে। সে দিন আর নেই। পুরনো ওই দিনগুলির কথা মনে পড়লেই বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে।
শিল্পাশ্রী দেশোয়ালি, ভুলাভেদা, ছাত্রী।

তথ্য: কিংশুক গুপ্ত। ছবি: দেবরাজ ঘোষ


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.