দু’জনকে নিয়েই ছিল প্রশ্ন। সচিন তেন্ডুলকর এবং রিকি পন্টিং। দুঃসময় চলছে দু’জনেরই। তাঁদের দিকে আঙুল তুলে ক্রিকেট দুনিয়া বলতে শুরু করেছে, “কেন আছ?”
অবশেষে পন্টিং জানিয়ে দিলেন, শুক্রবার থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পারথ টেস্টের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তাঁর ছুটি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠল, এ বার তা হলে সচিনের পালা?
বিতর্কটা ক্রমশ বাড়ছে দেখে পন্টিংয়ের অবসরের খবর ছড়িয়ে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সচিনের পাশে দাঁড়ালেন ভারতীয় দলের ওপেনার গৌতম গম্ভীর। বললেন, “পন্টিং নিয়েছে বলে এ বার সচিনকেও অবসর নিতে হবে, তার কোনও মানে নেই।” কিন্তু তাতেও বিতর্কের আগুন নেভেনি। পন্টিংয়ের অবসর ঘোষণার পরই এ দিন সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সারা ক্রিকেট দুনিয়ায় সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়ে এই বিতর্ক। নানা দিক থেকে শুরু হয়ে যায় পন্টিং-সচিনের তুলনা।
যেখানে ১৭ বছর আগে শুরু করেছিলেন, সেই ওয়াকাতেই শেষ হতে চলেছে কিংবদন্তি অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সফর। আগেই ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। এ দিন পারথের উপচে পড়া সাংবাদিক সম্মেলনে যখন পন্টিং টেস্ট ক্রিকেট থেকে তাঁর অবসরের ঘোষণা করতে গিয়ে বলছিলেন, “আজ সকালে বন্ধুদের অনেক কথাই বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারলাম না। এতটা আবেগাপ্লুত হতে ওরা আমাকে কখনও দেখেনি বোধহয়”, তখন গোটা ঘর স্তব্ধ। আর পন্টিং বোধহয় ভাবতে পারেননি যে, তাঁর এই সিদ্ধান্ত কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে চলতে থাকা আর এক কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানকে নিয়ে চলতে থাকা বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলে দিল। এখন তো ক্রিকেট দুনিয়া সচিনকে হয়তো বলবে, “পন্টিংকে দেখেও শিখলে না?”
সবার আগে যেমন ব্যাট করতে নামেন, তেমন সচিনকে ‘বাঁচাতে’ সবার আগে আসরে নেমে পড়েছেন গম্ভীর। বলেন, “ভারতীয় ক্রিকেটকে এখনও সচিনের অনেক কিছু দেওয়ার আছে। ওর ড্রেসিংরুমে থাকাটাই তো আমাদের কাছে অনেক। সচিন ক্রিকেটকে যত দিন ভালবাসবে, তত দিনই খেলে যাবে। আর ক্রিকেটের প্রতি ওর ভালবাসা এখনও একটুও কমেনি।” অনিল কুম্বলেও একই ভাবে বলেছেন, “সচিন অবসর নেবে কি না, তা সম্পূর্ণ ওর সিদ্ধান্ত। পন্টিংয়ের অবসরের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। সচিনের মতো আর কারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একশোটা সেঞ্চুরি নেই, ৩৪ হাজার রানও নেই। সুতরাং যে সম্মান ওর প্রাপ্য, সেটা তো ওকে দিতে হবে।” |
আসলে পন্টিং তাঁর অবসরের কারণ হিসেবে যে পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন, সচিনও অনেকটা সেই পরিস্থিতির মধ্যেই রয়েছেন। সে কারণেই আরও বিতর্ক। পন্টিং এ দিন আবেগঘন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন,“শেষ বারো থেকে আঠারো মাস আমি ধারাবাহিক ভাবে পারফরম্যান্স করতে পারিনি। অস্ট্রেলিয়া দলে থাকতে গেলে যে স্তরের ফর্মে থাকতে হয়, সেই স্তরে আমি নেই। সে জন্যই ভাবলাম, এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। অনেক ভেবেছি। সিদ্ধান্ত নেওয়াটা মোটেই সহজ হয়নি। কিন্তু আমার মন এই সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছে।” যে পন্টিং জীবনের প্রথম দু’টেস্ট ইনিংসে ১৬৭ রান করেছিলেন, তিনি শেষ ন’টা টেস্ট ইনিংসে ১৬৬ রান করেন। চলতি সিরিজে টেস্ট জীবনে এই মাত্র দ্বিতীয় বার একই ম্যাচে (অ্যাডিলেডে) দু’বার বোল্ড হন তিনি। এবং ওই ঘটনার পরেই তাঁর অবসর নেওয়ার চিন্তা শুরু।
|
রিকি পন্টিং |
সচিন তেন্ডুলকর |
বয়স ৩৮ |
বয়স ৩৯ |
টেস্ট ১৬৭
রান ১৩৩৬৬
গড় ৫২.২১
সেঞ্চুরি ৪১
ওয়ান ডে ৩৭৫
রান ১৩৭০৪
গড় ৪২.০৩
সেঞ্চুরি ৩০ |
পন্টিংয়ের শুরুর আগে |
টেস্ট ৩৮
রান ২৪৮৩
গড় ৫১.৭২
সেঞ্চুরি ৮ |
পন্টিংয়ের শুরুর পরে |
টেস্ট ১৫৪
রান ১৩০৭৯
গড় ৫৫.১৮
সেঞ্চুরি ৪৩ |
|