জলসঙ্কটে জলদাপাড়া
ডোবার খোঁজে গ্রামে গন্ডার-হানার আশঙ্কা
খাদ্য সঙ্কটের ভ্রূকুটির উপরে জল-সঙ্কটের ছায়া!
রাজকোষে টানাটানি। গত বর্ষায় জঙ্গলে তৃণভোজীদের প্রয়োজনীয় ঘাসই লাগাতে পারেনি বন দফতর। খাবারের খোঁজে ‘উপোসী’ জন্তুরা জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে পা বাড়াতে পারে। এ আশঙ্কা ছিলই।
এ বার তাঁদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের জলাভাব।
রাজ্যের বন-তালিকায় অন্যতম গর্ব জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে বেশ কিছু জলাশয় সংস্কার না হওয়ায় শুকিয়ে কাঠ। কোনওটা ভরেছে আগাছায়। শীত পড়লে পাহাড়ি নদীর সোঁতাও শুকিয়ে যাবে। বনের পশু-পাখিরা জল পাবে কোথায়? শুধু তেষ্টা মেটানো নয়, গন্ডার বা বাইসনের পছন্দের ঠিকানা কদর্মাক্ত জলাশয়। জঙ্গলে তা না পেলে গ্রামের ডোবায় গন্ডারের হানার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বনকর্মীরা।
শুকিয়ে যাওয়া জলাশয়। জলদাপাড়া জঙ্গলে। ছবি: রাজকুমার মোদক
গত দু’বছরে জলদাপাড়ার বিভিন্ন বিটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ওই জলাশয়গুলির কোনও রকম রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। কেন? বন দফতর সূত্রে খবর, মূলত বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা এই ধরনের কাজ করেন। অর্থাভাবে তাঁদের কাজই দেওয়া যায়নি এ বছর। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জলদাপাড়ার অধিকাংশ জলাশয়ই তাই হারিয়ে যাচ্ছে। জলের খোঁজে হরিণ, গন্ডার, বাইসনের পাল জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে পড়লে তাদের আটকানোর মতো কর্মীও বন দফতরের হাতে নেই। সব মিলিয়ে বন্যদের বনেই আটকে রাখার উপায় খুঁজতে ব্যস্ত বন দফতর। উত্তরবঙ্গের বনপাল বিপিন সুদ জলদাপাড়ার জলসঙ্কটের আশঙ্কার কথা জানেন। তিনি বলেন, “জলদাপাড়ার কিছু জলাশয়ে জল আছে। কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় তা ভেবে দেখা হচ্ছে।”
২১৬৫ হেক্টর এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা জলদাপাড়ায় তৃণভোজীদের জন্য ঘাস জমি প্রায় ৮০০ হেক্টর। প্রতি বছরই সেখানে পশু-খাদ্য বা ফডার প্ল্যান্টেশন করা হয়। এ বার সেই ফডার লাগানো হয়েছে মাত্র ২৫ হেক্টর জমিতে। সংস্কারের অভাবে জঙ্গলের ছোট-মাঝারি জলাশয়গুলিও শুকিয়ে গিয়েছে। সংরক্ষিত ওই বনাঞ্চলে হলং, বুড়িতোর্সা কিংবা ভালুকার মতো কিছু ছোট নদী বা জলধারা থাকলেও শীতে সেগুলিতে জল প্রায় থাকে না। গন্ডারের সমস্যাটা আবার আলাদা। দিনের বেশির ভাগ সময়েই তারা গায়ে কাদা মেখে থাকতে ভালবাসে। পাহাড়ি নদীগুলিতে শীতে সামান্য জল থাকলেও কাদা মিলবে কোথায়!
ইন্টারন্যাশনাল রাইনো ফাউন্ডেশনের কোঅর্ডিনেটর বিভব তালুকদার দীর্ঘ দিন এশীয়-গন্ডার নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, “শরীর ঠান্ডা রাখতে গন্ডার কর্দমাক্ত ডোবা পছন্দ করে। সেই কাদার খোঁজ জঙ্গলে না পেলে তারা যে আশপাশের এলাকায় হানা দেবে না, এমন নিশ্চয়তা কোথায়!”
জলদাপাড়ায় এখন অন্তত ১৬০টি গন্ডার রয়েছে। ডোবার খোঁজে তারা যদি বন-বিবাগী হয়, তাহলে? কল্পনাও করতে পারছেন না বন কর্তারা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.