|
|
|
|
নতুন নির্দেশিকা দিল কেন্দ্র |
ফেসবুক কাণ্ডে দেশ ক্ষুব্ধ, মন্তব্য প্রধান বিচারপতির |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ছোট ছেলেমেয়েদের যে ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তাতে গোটা দেশ ক্ষুব্ধ। আজ এই মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীর। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানির সময়ে এই মন্তব্য করেছেন কবীর। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আরও আগেই যে কেউ ওই ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেননি তাতেই তিনি বিস্মিত।
ওই আইনের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রও। এই বিষয়ে একটি নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিকমমন্ত্রী কপিল সিব্বল।
সম্প্রতি ফেসবুকে মন্তব্য বা ই-মেলে ব্যঙ্গচিত্র পাঠানোর জেরে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারায় গ্রেফতারি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে গোটা দেশেই। বাক্-স্বাধীনতার উপরে আঘাতের বিষয়টি নিয়েই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন দিল্লির বাসিন্দা ও আইনের ছাত্রী শ্রেয়া সিঙ্ঘল। তাঁর বক্তব্য, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ওই ধারা সংবিধান-বিরোধী। বিষয়টির গুরুত্ব মেনে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে শুনানি শুরু করেছে শীর্ষ আদালতও। এই বিষয়ে অ্যাটর্নি-জেনারেল জি ই বাহনবতীর সাহায্য চেয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। কবীর জানিয়েছেন, এক সময়ে তাঁরা নিজেরাই এই বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ভেবেছিলেন। তবে বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ‘আপত্তিজনক’ বিষয়বস্তু নিয়ে আইনি ব্যবস্থার উপরে স্থগিতাদেশ দেয়নি আদালত। আগামীকাল ফের এই মামলার শুনানি হবে।
|
আলতামাস কবীর |
পশ্চিমবঙ্গের অম্বিকেশ মহাপাত্র থেকে মহারাষ্ট্রের দুই তরুণী শাহিন ধাদা, রেণু শ্রীনিবাস, এয়ার ইন্ডিয়ার দুই কর্মী মায়াঙ্ক মোহন শর্মা ও কে ভি জে রাওপ্রত্যেকের ক্ষেত্রেই ফৌজদারি দণ্ডবিধির পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা ব্যবহার করা হয়েছে। ওই ধারায় ‘আপত্তিজনক’ বিষয়বস্তু পোস্ট করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, আপত্তিজনক বিষয়বস্তুর ব্যাখ্যা এতই অস্পষ্ট যে ওই ধারার অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই সহজ বলে মনে করেন আইনজীবীরা। অম্বিকেশ, শাহিন বা এয়ার ইন্ডিয়ার দুই কর্মী-প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই অভিযোগকারী রাজনীতিকরা। কয়েকটি শিবিরের দাবি, বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতেই এই ধারাকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
শীর্ষ আদালত কোনও স্থগিতাদেশ না দিলেও তথ্য প্রযুক্তি আইনের অপব্যবহার রুখতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে আজ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বসেন কপিল সিব্বল। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ বাড়াবাড়ি করেছে বলে মেনে নিয়েছেন তিনি। সিব্বল জানিয়েছেন, আইনে অপব্যবহার রুখতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরে ওই আইনে কোনও মামলা দায়ের করতে হলে মেট্রো শহরে আইজি ও অন্য শহর বা গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত্রে ডেপুটি কমিশনার বা সম পদমর্যাদার অফিসারের অনুমতি নিতে হবে। তাতে অবশ্য অপব্যবহার কমবে বলে বিশেষ আশা নেই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের। তাঁদের বক্তব্য, প্রভাবশালী রাজনীতিকদের পক্ষে উচ্চপদস্থ অফিসারদের উপরে চাপ দেওয়াও কঠিন নয়। ফলে, ৬৬এ ধারার আমূল পরিবর্তন বা ওই ধারা খারিজ করা ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই।
অম্বিকেশের গ্রেফতারির কড়া সমালোচনা করে তাঁকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। মহারাষ্ট্রে ফেসবুক কাণ্ডে গ্রেফতারির ক্ষেত্রেও আজ স্বস্তি পেয়েছেন অভিযুক্তরা। এমএনএস নেতা রাজ ঠাকরের বিরুদ্ধে ‘আপত্তিজনক’ মন্তব্য করায় গত কাল মহারাষ্ট্রের পালঘর এলাকার বাসিন্দা সুনীল বিশ্বকর্মা নামে এক যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেন এমএনএস কর্মীরা। পুলিশ জানিয়েছে, সুনীলের নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে কেউ ওই মন্তব্য ‘পোস্ট’ করেছিল। তাই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বালাসাহেব ঠাকরের মৃত্যুর পরে মুম্বইয়ে অঘোষিত বন্ধের সমালোচনা করে গ্রেফতার হয়েছিলেন পালঘরেরই শাহিন ও রেণু। তাঁদের গ্রেফতারি আইনমাফিক হয়নি বলে আগেই রিপোর্ট দিয়েছিলেন কোঙ্কন রেঞ্জের আইজি। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে দু’জন পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে। আজ শাহিন ও রেণুর বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। |
|
|
|
|
|