নাদিয়াল
পুলিশকে থানায় বন্দি করে জনতার তাণ্ডব
থানার বাইরে হাজার তিনেক মানুষ। থানা ও পুলিশকর্মীদের লক্ষ করে ক্রমাগত ইট ছুড়ছেন তাঁরা। আর সেই আক্রমণের সামনে কার্যত অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে পদস্থ অফিসার ও কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকালে বন্দর ডিভিশনের নাদিয়াল থানায় প্রায় ছ’ঘণ্টা তাণ্ডব চলার পরে লাঠি চালিয়ে ও ৬০ রাউন্ডেরও বেশি কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে র‌্যাফ ও সশস্ত্র পুলিশ। ইটের ঘায়ে জখম হয়েছেন ডিসি (বন্দর) মেহবুব রহমান, নাদিয়াল থানার অতিরিক্ত ওসি আকবর আলি-সহ সাত জন। রাত পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন আট জন বাসিন্দা। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, থানায় যথেচ্ছ ভাঙচুর সত্ত্বেও পরিস্থিতি সামলাতে ছ’ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে গেল কেন।
রাস্তায় নিরাপত্তাবাহিনীর টহল।
পুলিশ জানিয়েছে, এই আক্রমণ আসলে স্থানীয় একটি জলসায় বেশি রাতে মাইক বাজানো বন্ধ করতে যাওয়ার জেরে। যদিও এতে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের একাংশের ইন্ধন আছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশ জানায়, বুধবার স্থানীয় ওয়ারিশনগরে একটি জলসায় রাত বারোটার পরেও তারস্বরে মাইক বাজছিল। কয়েক জন বাসিন্দা অভিযোগ জানালে পুলিশ গিয়ে মাইক বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। অভিযোগ, তাতে কোনও কাজ হয়নি।
কেন পুলিশ মাইক বন্ধ করতে গিয়েছিল এবং কে বা কারা অভিযোগ জানাল তার কৈফিয়ত চাইতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ প্রায় পাঁচশো মানুষ থানায় চড়াও হন। পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁদের দাবি ছিল, অভিযোগকারীর নাম-ঠিকানা জানাতে হবে। থানার অফিসারেরা শব্দদূষণের বিষয়টি বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে বললেও লাভ হয়নি। বেলা ১২টা নাগাদ আচমকাই থানার জানলার কাচ ভাঙতে শুরু করে জনতা। লাগোয়া একটি মাঠে কিছু ইট জড়ো করা ছিল। সেগুলি থানার দিকে ছোড়া হয়। অভিযোগ, থানায় ঢুকে পুলিশের সামনেই তাণ্ডব চালায় ক্ষিপ্ত জনতা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, খবর ছড়াতেই থানার সামনে ভিড় বাড়তে থাকে। পুলিশের দাবি, নাদিয়ালের আয়ুবনগর ও আরিফনগরের লোকজনও আসেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সশস্ত্র পুলিশ ও বন্দর এলাকার অন্যান্য থানা থেকেও বাহিনী আনা হয়। এতে বিক্ষোভকারীরা কিছুটা পিছু হটে। তবে মাঝেমধ্যেই পুলিশকে লক্ষ করে ইট উড়ে এসেছে। পুলিশের চারটি গাড়িতেও ভাঙচুর চলে। রেহাই পায়নি থানা সংলগ্ন গার্ডেনরিচ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে আসামি নিয়ে আসা রবীন্দ্রনগর থানার একটি গাড়িও। পুলিশের দাবি, গাড়িটি ঠেলতে ঠেলতে গঙ্গায় ফেলার চেষ্টাও করেছিল জনা কয়েক দুষ্কৃতী। নাদিয়াল থানা এবং মেটিয়াবুরুজ ট্রাফিক গার্ড প্রায় ছ’ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে জনতা।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যেতে দেখে দু’গাড়ি র‌্যাফ পাঠানো হয়। বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ র‌্যাফ পৌঁছতেই লাঠি চালানো শুরু হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে অন্তত ৬০ রাউন্ডের বেশি কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। দুপুর থেকেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তা সুনসান। বিকেলে থানায় ঢুকে দেখা যায়, লণ্ডভণ্ড ঘরগুলি। কাচের টুকরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। রেহাই পায়নি ব্যারাকও। ভাঙা হয়েছে বাতানুকূল যন্ত্র।
কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এতটা সময় লাগল কেন? ডিসি (বন্দর) মেহবুব রহমানের দাবি, “প্রথমে আলোচনা করে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা হয়। বহুক্ষণ সংযত ছিল পুলিশ। উপায়ান্তর না দেখে শেষমেশ লাঠি চালানো এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পথে হাঁটতে হয়। এই ঘটনায় আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে”
পুলিশের দাবি, এতে বাসিন্দাদের একাংশের ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে। যার অন্যতম কারণ মাইক বাজানো বা বেপরোয়া মোটরবাইক রুখতে কলকাতা পুলিশের কড়াকড়ি। এক কর্তা বলেন, “রাজ্য পুলিশের আওতায় এ সব বিষয়ে তেমন কড়াকড়ি ছিল না। কিন্তু গত বছর সেপ্টেম্বরে কলকাতা পুলিশ কড়াকড়ি শুরু করায় স্থানীয় দুষ্কৃতীরা মানুষকে পুলিশের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছে।” পুলিশ বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠক করছে না কেন?
ডিসি (বন্দর) বলেন, “আমি নিজে বহু বার স্থানীয় ক্লাব সংগঠন ও বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। এই নিয়মের কড়াকড়ি যে তাঁদের সুবিধার জন্য, তা-ও বুঝিয়েছি। লাভ হয়নি।”

ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.