কলেজে-কলেজে গোলমাল নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। বৃহস্পতিবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে এই উদ্বেগ প্রকাশ করলেন তিনি। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। এ ছাড়াও গবেষণার মান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়ার কথাও এ দিন বলেন রাজ্যপাল।
অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বলেন, “কলেজগুলিতে যে সব অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে তাতে আমি চিন্তিত। ছাত্রছাত্রীদের একাংশের আচরণ ঠিক হচ্ছে না। এমনকী, কোথাও কোথাও শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনাও ঘটছে। এই ধরনের আচরণ দুঃখজনক। এ সব বন্ধ হওয়া দরকার।” তিনি আরও বলেন, “কেন এই ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে, সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত করুক। তদন্তের রিপোর্ট যেন সমাবর্তন পুস্তিকায় লিপিবব্ধ করা হয়।” |
রাজ্যপালের এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার। তিনি বলেন, “কলেজে-কলেজে বিশৃঙ্খলা চলুক, এটা কেউই চান না। আমি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কলেজে আচমকা পরিদর্শন করেছি। কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে বৈঠকও করেছি।” এই বিশৃঙ্খলা রোধে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অধ্যক্ষদেরও আরও দায়িত্ব নিতে হবে বলে মত উপাচার্যের।
রাজ্যপালের উদ্বেগ যে অমূলক নয়, তা কার্যত মেনে নিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলি। তবে এ ব্যাপারে পরস্পরের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছে তারা। বর্ধমান জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অশোক রুদ্রের দাবি, “কলেজের বিশৃঙ্খলায় আমাদের খুব বেশি হলে শতকরা ১ ভাগ সমর্থক জড়িত। রাজ্যপালের বক্তব্যকে সম্মান জনিয়েও বলছি, কিছু লোকজন এই বিশৃঙ্খলাকে বাড়িয়ে দেখাচ্ছে।” অশোকবাবু এ কথা বললেও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সম্পাদক টিএমসিপি-র সন্তু ঘোষের অভিযোগ, “দলনেত্রী চান, আমরা যেন গণতান্ত্রিক পথে কলেজগুলির ছাত্র সংসদ দখল করি। কিন্তু আমাদের সংগঠনেরই কিছু নেতা সমস্ত কিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে গোলমাল পাকিয়ে ফেলছেন। তাই রাজ্যপালের উদ্বেগ যথার্থ। বাম জমানায় যা হত, পরিবর্তনের পরেও তা কেন হবে?” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর দে আবার টিএমসিপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই কলেজে-কলেজে গোলমালের কারণ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এমন অনভিপ্রেত ঘটনা বন্ধে উদ্যোগী হন।” রাজ্যপাল এ দিন গবেষণার মান বজায় রাখার দিকেও জোর দেওয়ার কথা বলেন। তিনি জানান, রাজ্যে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে প্রায় ৫০০ গবেষণাপত্র পড়া হচ্ছে। সংখ্যার দিক থেকে তা উৎসাহব্যঞ্জক হলেও সেগুলির মধ্যে ক’টি উন্নত মানের, তার দিকে নজর রাখতে বলে মন্তব্য করেন রাজ্যপাল। রাজ্যপাল আরও বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা ও গণিত বিভাগ উচ্চতর বিদ্যাচর্চাকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু অন্য কেন্দ্রগুলির কী অবস্থা, তা আমার জানতে পারছি না। শুনেছি, গবেষণাগার, গ্রন্থাগার ইত্যাদি বেশ কিছু ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। সেই ঘাটতি মিটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।” |