চেনা সুর অচেনা মুখ


নিখিল পল জর্জ
নিখিল পল জর্জ যখন বলিউডে ডেব্যু করতে আসেন, তিনি গিটার বাজাতে চেয়েছিলেন। কিন্ত প্রীতম এবং অনুরাগ বসু তাঁর ভেতরে এক গায়কের দক্ষতা দেখতে পান। এবং তিনি পরপর দুটো গান রেকর্ড করেন- ‘আশিয়াঁ’ এবং ‘ম্যায় ক্যয়া করুঁ’- ‘বরফি’র জন্য। আর পুরোটাই করা হয় স্কাইপে কেননা প্রীতম ছিলেন মুম্বইতে আর নিখিল তখন লন্ডনে তাঁর বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। কেউ কেউ নিখিল আর মোহিত চৌহানের গলার মধ্যে সাযুজ্য খুঁজে পেয়েছেন। অনুরাগ, যদিও, জোর দিয়ে বলছেন যে নিখিলের গলাটা তাঁকে আমেরিকান গায়ক ব্রুনো মার্স-এর কথা মনে করিয়ে দেয়।

প্রশিক্ষণ
নিখিলের বাবা-মা মালয়ালি। বড় হওয়া নাগপুরে। কম্পিউটার সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন তিনি। “লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব মিউজিকে আমি সঙ্গীত চর্চা করি। আমি অনুপ্রেরণা পেয়েছি ধ্রুপদী পাশ্চাত্য সঙ্গীত, ভারতীয় লোকগীতি, গসপেল, পাশ্চাত্য লোকগীতি এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র থেকে,” বললেন তিনি।

পেশাগত ভাবে
নিখিল লন্ডনে ফ্রিলান্স শিল্পী। রবিবার, তিনি কাজ করেন একটি চার্চের হয়ে। মনে পড়ে ‘দম মারো দম’ এর ‘তে আমো’ গানটা? নিখিল সুরারোপ করেছিলেন এই গানটায়। প্রীতম তাঁকে বলেন ‘মৌসম’ সিনেমার ‘রব্বা ম্যয় তো’ গানটার সঙ্গে বাজাতে। ‘ককটেল’ সিনেমার ‘দারু দেশি’ গানটায় উনি সুর বাঁধা এবং ব্যবস্থাপনা, গিটার এবং কণ্ঠ ব্যবস্থাপনা করেছিলেন। “আমি ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’য়ে ‘চিকি’ বলে একটা অপ্রকাশিত গানের সঙ্গে গিটার বাজিয়েছি। ‘রেস ২’-এর তিনটে গানে সুরারোপ করেছি আমি,’’ বললেন নিখিল। ‘বরফি’র গানগুলো ভাগ্যবশত ঘটেছিল। অনুরাগ বললেন, ‘‘নিখিলের গান স্কাইপে রেকর্ড করাটা মজার ছিল। একটা লো অ্যাঙ্গেলে ক্যামেরাটা রাখা থাকত আর স্কাইপে সব সময় ওর মুখটা দেখতে পেতাম!’’ নিখিল এখন ‘রাশ’ সিনেমার ‘চুপ চুপ কে’ গানের জন্য গিটার বাজিয়েছেন।
হিট গান

ম্যায় ক্যয়া করুঁ, ‘আশিয়াঁ’ (বরফি)
শুধুই ফিল্মি নয়
চলচ্চিত্রের বাইরের কাজ নিয়েও তিনি ব্যস্ত। বাঙালি গায়ক আশুতোষ গাঙ্গুলি, যে কিনা অ্যাশ কিং নামেই পরিচিত, আর নিখিল বন্ধু। এমটিভি আনপ্লাগড শো’য়ের জন্য নিখিল ‘ক্যয়সে’ বলে একটা গান রচনা করেছেন। গায়ক অ্যাশ কিং। “শো’টা দেখবেন ১৫ ডিসেম্বর। ওখানেই আমাকে গিটার বাজাতে আর গান বাঁধতে দেখতে পাবেন।’’



নন্দিনী শ্রীখার
আপনি বাঙালি? যবে থেকে তাঁর গান ‘দুয়া’, ‘দিল মেরা মুফত কা’ আর ‘ভারে নায়না’ প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়েছে, তবে থেকে বাংলার লোকজন তাঁকে প্রায় তাঁদেরই ঘরের মেয়ে বলেই মনে করছেন। কারণটা আর কিছুই নয়, তাঁর পদবি - “শ্রীকার”, যাকে ভুল করে অনেকেই ভেবে বসেন “সরকার”। সরকার আর শ্রীকার শুনতে এতটাই এক রকম, ফলে ভুল অনেকেরই হয়। তা ছাড়া নন্দিনী নামটাও তো বাঙালিদের হয়ই। কিন্তু যে কন্যার ঝুলিতে তিন-তিনটে হিট গান, তিনি হেসেই ভুলটা ভাঙিয়ে দেন। “আজকাল শুধু ভৌগোলিক সীমা দিয়ে আর পরিচয় হয় না।”

সংগীত চর্চা
নন্দিনীর বাড়িতেই সংগীত চর্চার পরিবেশ ছিল। তিন বছর বয়েসে উনি বীণা বাজাতে শেখেন। তারপর সেতার আর গিটার গিটার শেখা। “আমার সংগীত চর্চার শুরু মায়ের কাছে। তবে কর্নাটকি, ওয়েস্টার্ন, রক, জ্যাজ, ব্লুজ থেকেও আমি অনুপ্রেরণা পেয়েছি,” বললেন নন্দিনী।

পেশাগত ভাবে
নন্দিনী পিওর ম্যাথমেটিক্সে মাস্টার্স করেছেন। পেশায় ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তির। কিন্তু অঙ্কের গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে এসে তিনি মিউজিশিয়ান হয়ে যান। কোনও আক্ষেপ নেই তার জন্য, বিশেষ করে যবে হরিহরন তাঁকে ১৯৯৭ সালে একটা তামিল ছবির জন্য রেকমেন্ড করেন। কম্পোজার বিশাল রাম সম্পতের তৈরি নন্দিনীর একটা জিঙ্গল্ শুনে তাঁকে ‘ভারে নায়না’ গাইতে ডেকে পাঠান। ‘ভারে নায়না’-র পর প্রীতম ওঁকে একটা মুজরা গানের জন্য ডেকে পাঠান। এ ভাবেই তৈরি হয় ‘দিল মেরা মুফত্ কা’। নন্দিনী অ্যাড ছবির জন্য সংগীত পরিচালনা ও প্রযোজনাও করেছেন।

হিট গান
দিল মেরা মুফত্ কা (এজেন্ট ভিনোদ)
ভারে নায়না (রা ওয়ান),
দুয়া (সাংহাই)
ফিল্মের বাইরে
যাঁরা নন্দিনীর গান এম টিভির ‘কোক স্টুডিও টু’তে শুনেছেন, তাঁরা জানেন তাঁর বহুমুখী প্রতিভার কথা। উনি এখানে বিজয় প্রকাশের সঙ্গে ‘বানজারা’ গেয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। এর মধ্যেই ৯০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ ইউ টিউবে সে গান শুনেও ফেলেছেন। গানটায় ধ্রুপদী সংগীতের সঙ্গে পপ/ফাঙ্কের অদ্ভুত মিশেল। কোক স্টুডিওর মঞ্চ থেকে উনি চলে যান ভক্তিগীতি রেকর্ড করতে। গানের নাম ‘তেরা নাম’। অ্যালবামের নাম ‘গানারাজ অধিরাজ ২০১২’। তাঁর প্রথম অ্যালবাম ‘বিতে পল’ আজকাল ফ্লিপকার্টেও পাওয়া যাচ্ছে। এখন নন্দিনীর চাই শুধু ‘দুয়া’ তাঁর দ্বিতীয় অ্যালবামের জন্য।



শাল্মলী খোলগড়ে
তাঁর বয়স মাত্র ২২। এই বয়সেই তাঁর ‘দারু দেশি’ নিয়ে গোটা ভারত ‘পরেশান’। মুম্বইয়ের শাল্মলী পা বাড়িয়ে ছিলেন এলএ মিউজিক অকাদেমিতে গান শিখতে। কিন্তু হয়ে গেলেন সঙ্গীতের ‘পরেশান’ গার্ল। কী করে হল? কাকতালীয় ভাবে শাল্মলীর সঙ্গে অমিত ত্রিবেদীর যোগাযোগ হয়। অগস্ট ২০১১তে ‘পরেশান’য়ের রেকডির্ং। এর পর ‘দারু দেশি’ আর ‘আগা বাই’।

সঙ্গীত চর্চা
মায়ের কাছেই শাল্মলীর ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের হাতে খড়ি। “আমি শুভদা পরদকরের কাছেও গান শিখেছি। দু বছরের জন্য,” বললেন শাল্মলী। তাঁর গানে বিরাট ভাবে প্রভাব ফেলেছে তাঁর দাদার সঙ্গীত শোনার অভ্যেস। “রক-পপ সব কিছুই দাদার প্রিয়। কখনও কুইনস কখনও ফিল কলিনস। কখনও মাইকেল জ্যাকসন। কখনও এয়ারোস্মিথ। আমার পাশ্চাত্য সঙ্গীতের শিক্ষাটাই শুনে শুনে।”
জীবনের মোড় ঘুরে যায় মুম্বই সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ফেস্ট ‘মলহার’য়ে। “‘আমি এই ফেস্টেই ঈগলসের ‘ডেসপ্যারেডো’ গানটা গেয়েছিলাম। শেষটা খুব আবেগ দিয়ে গেয়েছিলাম। ওই গানটি আমার কাছে গেম চেঞ্জার,” শাল্মলী বললেন। তখন তাঁর সবে মাত্র ১৮ বছর বয়স।

পেশাগতভাবে
‘পরেশান’ রিলিজ করার সঙ্গে সঙ্গেই প্রীতমের কাছ থেকে ডাক আসে। “আমি পুরো গানটা রেকর্ড করলাম। এমনকী বেণী দয়াল যে অংশটা গেয়েছেন সেটাও গাইলাম। পরে আমি জেনেছিলাম কুড়ি জন শিল্পীকে দিয়ে ওই গানটা গাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল,” বললেন শাল্মলী। পরিনীতি চোপড়ার গলায় ‘পরেশান’ গানটা গেয়েও খুশি হয়েছিলেন তিনি। পরিনীতির কণ্ঠস্বর শাল্মলীর খুবই পছন্দের। শাল্মলী ‘আইয়া’ ছবির জন্যও গান গেয়েছেন। গান গেয়েছেন তামিল, কন্নড়, আর মরাঠি ভাষাতেও। সামনে রিলিজ করবে ‘মেরে ড্যাড কি মারুতি’ আর ‘পুণে ৫২’।
হিট গান
দারু দেশী (ককটেল)
‘পরেশান’ (
ইশকজাদে)
‘আগা বাই’ (
আইয়া)
ফিল্মের বাইরে
ছবিতে অভিনয়ও করেছেন তিনি। “সিনেমাটা মুম্বইয়ের সেই সব বাসিন্দাকে নিয়ে যাঁরা মরাঠি আর কোঙ্কনি এই দুটো ভাষার মাঝামাঝি ভাষায় কথা বলেন। তবে অভিনয় আমার জন্য নয়। আমার লক্ষ্য ভারতে বসে ব্রডওয়ে ধরনের প্রজেক্ট করা,” বলছেন শাল্মলী। ‘পরেশানি’র এই পর্ব শেষ হলে আশা করা যায় তিনি তাঁর স্বপ্নের ব্রডওয়ে শো’টাও করে উঠতে পারবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.