লাঞ্ছনা সয়ে আর কত দিন দলে, ভাববেন শোভনদেব
তৃণমূলে তাঁর মানসম্মান বিপন্ন। কার্যত এমনই ইঙ্গিত দিলেন দলের বর্ষীয়ান নেতা ও বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠীর কর্মী সংগঠনের হাতে হেনস্থা হওয়ার পরে তিনি এই দলে কত দিন থাকতে পারবেন, তা-ও ‘ভেবে দেখতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন শোভনদেব।
রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য যখন দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ এনেছেন, এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর জ্ঞাতসারেই এই ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন তখন শোভনদেববাবুর এই মন্তব্য তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরও অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিল।
রাজনীতিতে মমতার চেয়ে অনেক প্রবীণ শোভনদেবের এ দিনের মন্তব্য নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই দলের ভিতরে নাড়াচাড়া পড়েছে। কারণ, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে মমতার পাশে যাঁরা রয়েছেন, শোভনদেব সেই হাতে গোনাদের এক জন। তৃণমূলের প্রতীকে জেতা তিনিই প্রথম জনপ্রতিনিধি। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের টিকিটে জেতা বারুইপুর আসন ছেড়ে তৃণমূলের প্রতীকে রাসবিহারী আসনের উপ-নির্বাচনে জিতেছিলেন তিনি।
তারও আগে মমতা যখন প্রথম ১৯৮৪ সালে কংগ্রেসের টিকিটে লোকসভায় লড়েন, শোভনদেব তখন ছিলেন তাঁর মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট। মমতা যখন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আইএনটিইউসি করতেন, তখন সেখানে শোভনদেব ছিলেন পদাধিকারে মমতার চেয়ে উপরে। সুব্রতবাবুর সঙ্গে শোভনদেববাবুর সম্পর্ক নাম ধরে ডাকার।
এটা ঠিক যে, বিভিন্ন সময়ে ট্রেড ইউনিয়নের গোষ্ঠী রাজনীতিতে সুব্রত-শোভনদেব বিরোধ বেধেছে। সুব্রতবাবু যখন কলকাতার মেয়র, তখনও শোভনদেব পুরসভায় সার্জেন্ট পদে কর্মরত। মেয়রের সঙ্গে দাবিদাওয়া নিয়ে তাঁর বিবাদ হয়েছে সেই সময়ও। কিন্তু শোভনদেবের সম্মান ও রাজনৈতিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার মতো ঘটনা কখনওই ঘটেনি।
মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে শোভনদেববাবুকে মন্ত্রী না-করে বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতক করেন। দলের অন্দরে তিনি এই পদ নিতে খুব আগ্রহী নন বলে জানালেও নেত্রীর কথা মেনে নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও আপত্তি জানাননি। বরং দায়িত্ব মাথা পেতে নিয়েছেন।
সিপিএম মেরে মাথা ফাটিয়ে দিলে আমার
দুঃখ হত না। কিন্তু মমতার নামে স্লোগান দিয়ে
আমাকে আঘাত করা হয়েছে। এই স্পর্ধা,
ঔদ্ধত্য কোথা থেকে এল?
শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়
শোভনদেববাবু তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতিও ছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী দোলা সেনকে ওই পদে বসানোয় তাঁর সঙ্গে দলের সংঘাত বড় আকার নেয়। শোভনদেববাবু এই বদল মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। এক সময় তিনি মুখ্য সচেতক পদও ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। সমস্যা মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে শোভনদেবকে ডেকে পাঠিয়ে তাঁর ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করেন। তখন শোভনদেববাবু মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছিলেন, “মমতা, আমি যে সব ইউনিয়নের নেতা, সেই ইউনিটগুলিতে আমি কাজ করতে চাই। তুই সেটা দেখিস।” আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিষয়টি তখনকার মতো মিটে যায়।
মঙ্গলবার তারই সুবাদে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল কর্মচারী সংগঠনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন শোভনদেববাবু। অভিযোগ, সেখানেই দোলার নেতৃত্বাধীন অপর কর্মী ইউনিয়নের হাতে তিনি নিগৃহীত হন। তাঁকে জামার কলার ধরে টেনে ঘুঁষি মারা হয় বলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন শোভনদেব। ঘটনাটি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর টেলিফোনে কথাও হয়। এই ধরনের কার্যকলাপ তিনি অনুমোদন করেন না বলে শোভনদেববাবুকে জানান মুখ্যমন্ত্রী। দোলা অবশ্য বুধবার বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ অসত্য। শোভনদার প্রতি কেউ যদি অন্যায় করে থাকে, সেটা সমর্থনযোগ্য নয়।”
কিন্তু এই সব কথায় যে চিঁড়ে ভিজছে না, বুধবার শোভনদেববাবুর বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট হয়েছে। মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন তিনি বলেন, “আমি কোনও পদের মোহে রাজনীতি করিনি। কেন মন্ত্রী হইনি, কেন দলে বড় পদ পাইনি, এ সব নিয়ে দুঃখ করিনি। ৫০ বছর রাজনীতি করছি। মানুষের জন্য। কোনও ‘মেটেরিয়াল গেন’-এর কথা ভাবিনি।” শোভনদেববাবুর বক্তব্য, রাজনীতি করার কারণে তিনি কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিতে পারেন, কারও ট্রেনের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। এগুলোই তাঁর কাছে জনসেবামূলক কাজ। তাঁর কথায়, “সিপিএম আমাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিলে আমার দুঃখ হত না। কিন্তু মমতার নামে স্লোগান দিয়ে আমাকে আঘাত করা হয়েছে। এই স্পর্ধা, ঔদ্ধত্য কোথা থেকে এল? আমার সঙ্গে মমতার কথা হয়েছে। মুকুল রায় ও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে জানিয়েছি। তবে কত দিন এ ভাবে শ্রদ্ধাসম্মান না-পেয়ে, লাঞ্ছিত হয়ে দলে থাকব, আমাকে ভাবতে হবে।”
শোভনদেববাবুর এই ক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন করার পরে আলোচনা এগোতে চাননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তাঁর বক্তব্য, “শোভনদা কোথায় কী বলেছেন, জানি না। তাঁর সঙ্গে আবার কথা বলব।” পাশাপাশি তিনি এটাও জানিয়ে দিয়েছেন, “দল থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কিছুই হয়নি।”
মঙ্গলবারের ঘটনার প্রতিবাদে সরব শোভনদেবের ঘনিষ্ঠ কর্মীরা আজ, বৃহস্পতিবার মৌনী মিছিল করবেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানিয়েছেন, আগামী সোমবারের মধ্যে এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিটি গড়া হবে। ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবে ওই কমিটি। পুলিশ জানায়, অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে বুধবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ জানা হচ্ছে। অন্য প্রমাণও সংগ্রহ করা হবে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী হওয়ায়, কাউকে গ্রেফতার করার আগে উপাচার্যের অনুমতি নেওয়াও জরুরি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.