|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
ঐতিহ্যে সটীক সজীবতা |
আশিস পাঠক |
দুটি হাতি, কিছু তাঁবু, সাত দিনের খাদ্য, ষাট জন বাহক।
প্রায় একশো বছর আগে মধ্যপ্রদেশের পেনড্রা রোড স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই বাহিনীর। লক্ষ্য কোনও যুদ্ধজয় নয়, রামগড় পাহাড়ের যোগীমারা গুহায় পৌঁছে মৌর্যপূর্ব যুগের কয়েকটি গুহাচিত্র আর একটি বহুচর্চিত শিলালিপি দেখা। বাহিনীর নেতা দুই তরুণ চিত্রকর— অসিতকুমার হালদার আর সমরেন্দ্রনাথ গুপ্ত।
জাতীয় ঐতিহ্য সপ্তাহে এই প্রায় ভুলে যাওয়া ঘটনাটুকু মনে পড়ল একটি বইয়ের আসন্ন প্রকাশসূত্রে। ওই যাত্রা এবং তার তিন বছর পরে মধ্যপ্রদেশেরই বাগগুহা যাত্রার বিবরণ, গুহাচিত্রের প্রতিলিপি এবং শিল্প-দর্শন নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন অসিতকুমার, বাগগুহা ও রামগড়। ১৯২১-এ ইন্ডিয়ান প্রেস প্রকাশ করে সে বই। এখন দুর্লভ।
বইটি নিউ এজ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হতে চলেছে আগামী মাসের গোড়ায়। এ নিছক পুনর্মুদ্রণ হলে তা মিশে যেত বইপাড়ার পুনঃ পুনঃ এবং পুনঃপ্রকাশের গড্ডলিকায়। আশার কথা, তা হচ্ছে না। এই সংস্করণটি যথার্থ সটীক, তাই সজীবও। ভগীরথ পঞ্চাশ-না-ছোঁয়া দুই তরুণ সৌম্যেন পাল ও প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত। বইটির প্রায় প্রতিটি প্রসঙ্গে তথ্য ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন দু’জনে। বাগগুহা ও রামগড় প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ, প্রত্নতত্ত্ববিদ, শিল্পী ও সমালোচক, গবেষক, দার্শনিকের মন্তব্য সংকলন করেছেন। তার চেয়েও বড়, বইটি সম্পাদনা করবেন বলেই গিয়েছেন অকুস্থলে, ছবি তুলেছেন। সে সবও ছাপা হয়েছে সম্পাদকীয় সংযোজনে।
এটাই প্রথম নয়। এর আগে এই পদ্ধতিতেই ওঁরা সম্পাদনা করেছেন অসিতকুমার হালদারের অজন্তা (লালমাটি) এবং নির্মলকুমার বসুর কোনারকের বিবরণ (নিউ এজ)। তিনটি মিলে বাংলা সম্পাদনায় যেন একটা ব্যতিক্রমী ধারা পুনর্জীবন পেল। সে ধারার বৈশিষ্ট্য, শুধু ভূমিকা লিখেই দায় সারা নয়, সেই সময়ের লেখক এবং এই সময়ের পাঠকের মধ্যে অবিরাম সংযোগরক্ষাকারী একটি সজীব অস্তিত্ব হয়ে ওঠা। শিল্প-ঐতিহ্যকে ধরে রাখে যে বই তার সম্পাদনায় জীবনের এই চলাচলটুকু না থাকলে হাতে রইল কী? পুরনো কিছু ইট আর শুকনো কিছু তথ্য।
বাগগুহা ও রামগড় সম্পর্কে লিখতে গিয়ে জীবনের কথাই তো লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, ‘প্রাচীন ভারত পঞ্জিকার তিথি বার গণনা করে কেবল উপবাস করে নিজেকে শুকিয়ে মারত না বারম্বার তার প্রমাণ আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হওয়া দরকার। আমাদের ইতিহাসে জাতীয় চিত্তের সজীবতার নিদর্শন যতই পাব ততই আমরা বুঝব জীবনের ধর্ম্ম কি, তার প্রকাশ কিরূপ।’ |
|
|
|
|
|