|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা |
বাইক-রাজ |
দু’চাকার দৌরাত্ম্য |
দেবাশিস দাস |
ফের মোটরবাইক-বাহিনীর আতঙ্ক!
তবে, এই আতঙ্ক সশস্ত্র ছিনতাইবাজদের জন্য নয়। বরং, সম্পূর্ণ নিরস্ত্র, হেলমেটহীন এই বাইক-বাহিনীর জন্য আতঙ্কে ভুগছেন দক্ষিণ কলকাতার এক বড় অংশের মানুষ।
বেশ কিছু দিন ধরে বাইক-আরোহী ছিনতাইবাজদের জন্য চরম আতঙ্কে ভুগছেন এই মহানগরের প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। কেউ আতঙ্কে প্রাতর্ভ্রমণ ছেড়েছেন, কেউ বা ঘড়ি-কানের দুল-চেন, পকেটের মোবাইল ফোন বাড়িতে রেখে এখনও প্রাতর্ভ্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন! প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের অস্তিত্ব নিয়েই।
আর তারই মধ্যে হেলমেটহীন বেপরোয়া বাইক-বাহিনীর দাপটে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন রানিকুঠি, নেতাজিনগর, বিজয়গড়, পল্লিশ্রী, শ্রীকলোনি, বাঘাযতীন, রিজেন্ট এস্টেট, যাদবপুর, গল্ফগ্রিন এবং লেকগার্ডেন্স এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, সন্ধের পর থেকেই শুরু হয় বেপরোয়া বাইক-চালকদের দাপট। বড় রাস্তা ছেড়ে পাড়ার ছোট ছোট রাস্তায় এই সব বাইকের দাপটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকে বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বাসিন্দারা জানান, বাইক আরোহীদের বেশির ভাগের বয়স আঠারো থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সব বাইকে সওয়ার হন তিন জন। বহু ক্ষেত্রেই এই সব বাইকে সওয়ার হন তরুণীরাও। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতে কার্যত পুলিশি টহল না থাকায় বাড়তে থাকে বেপরোয়া মোটরবাইক আরোহীদের দাপট।
আগে এই সব এলাকা ছিল রাজ্য পুলিশের আওতায়। কলকাতা পুলিশের এলাকা বৃদ্ধির পরে এই এলাকাগুলি এখন যাদবপুর এবং পাটুলি থানার আওতায় এসেছে। এই এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় আগের তুলনায় যানবাহনের চাপও কয়েক গুণ বেড়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশ কয়েক বার দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দশ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তৃণমূলের তপন দাশগুপ্ত এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “বেপরোয়া বাইক-বাহিনীর কথা অনেক বার পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ কয়েক বার তল্লাশিও করেছে। আবার ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।” |
|
অলঙ্করণ: অনুপ রায় |
শুধুই কি পথচারীরা বিপন্ন হচ্ছেন? বেপরোয়া বাইক-আরোহীদের প্রাণও কি বিপন্ন হচ্ছে না?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসখানেক আগে জিডি বিড়লা স্কুল সংলগ্ন এলাকায় রাত ১১টা নাগাদ প্রচণ্ড গতিতে মোটরবাইক চালানোর সময়ে এক যুবতী-সহ দুই যুবক উল্টে পড়ে। মারাত্মক ভাবে জখম হন এক যুবক। বাসিন্দারা জানান, এদের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। এর কয়েক দিন পরেই গল্ফগ্রিন এলাকায় বেপরোয়া মোটরবাইক চালাতে গিয়ে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান দুই যুবক। এর কিছু দিন পরে নেতাজিনগর এলাকায় বেপরোয়া বাইকের ধাক্কায় গুরুতর জখম হন এলাকারই বাসিন্দা মূক ও বধির এক যুবক। বাসিন্দা বুম্বা চন্দ বললেন, “এই ধরনের দুর্ঘটনা এলাকায় নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্ধ্যার পরে পথ চলতে ভয় লাগে। এই সমস্যার সুরাহা খুব জরুরি। না হলে যে কোনও দিন আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটবে।”
কলকাতা পুলিশের ডিসি ট্রাফিক দিলীপ আদক বলেন, “হেলমেটহীন অবস্থায় বাইক চালানো বা বেপরোয়া ভাবে বাইক চালানো এবং বাইকে দু’জনের বেশি নেওয়া ট্রফিক আইন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন অপরাধ। ওই সব এলাকায় এই ধরনের অপরাধ বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে। বাড়ানো হবে ট্রাফিক পুলিশের নজরদারিও।’’ অর্থাৎ, আবারও সেই প্রতিশ্রুতি! ছিনতাইবাজই হোক বা ‘নিরস্ত্র’ বাইক-বাহিনী, আতঙ্কের প্রহর গোনা শেষ হল না শহরবাসীর! |
|
|
|
|
|