|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
দিশাহীন নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চেতনা |
সম্প্রতি আকৃতিতে অনুষ্ঠিত হল ‘জেন নেক্সট’ শীর্ষক প্রদর্শনী। দেখে এসে লিখছেন মৃণাল ঘোষ। |
সম্প্রতি আকৃতি আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হল ‘জেন নেক্সট’ শীর্ষক প্রদর্শনীর ষষ্ঠ সংস্করণ। সারা দেশের অনূর্ধ্ব-চল্লিশ উদীয়মান তরুণ শিল্পীদের ভাল কাজ জনসমক্ষে তুলে ধরার এই প্রকল্প ‘আকৃতি’ শুরু করেছিল ২০০৬ থেকে। ক্রমান্বয়ে বিদেশের শিল্পীরাও এতে অংশগ্রহণ করেছেন। শিল্পের ভবিষ্যৎ বিবর্তনের রূপরেখার কিছু আভাস পাওয়া যায় এই প্রদর্শনী থেকে। সেই রূপরেখা খুব দ্রুত পাল্টাচ্ছে। ভাবনা ও আঙ্গিক বিশ্বায়িত হচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যেই খুব সূক্ষ্ম ভাবে থাকছে ঐতিহ্যের সন্ধান। বিশ্বব্যাপ্ত এক দিশাহীন নৈরাজ্যের সামনে দাঁড়িয়ে কাজ করেন তরুণ শিল্পীরা। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চেতনাই তাঁদের প্রকাশের মূল উপজীব্য। ‘জেন নেক্সট’ প্রদর্শনী থেকে বারবার এই সত্য উঠে এসেছে।
এ বারের প্রদর্শনীতে নির্বাচিত হয়েছেন ১৬ জন শিল্পী। এর মধ্যে এক জন বিদেশি। অধিকাংশ শিল্পীরই জন্ম ১৯৮০-র দশকে। প্রদর্শনীর প্রথম দিন উদ্বোধনের আগে এই ১৬ জনের ভিতর থেকে শ্রেষ্ঠ কাজটিকে বেছে নিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। পুরস্কারের অর্থমূল্য এক লক্ষ টাকা। সাত জন বিচারকের উপর এই নির্বাচনের দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছিল। ভাবনা ও রূপায়ণের স্বাতন্ত্র্যে এখনকার তরুণরা যে অনেকটাই এগিয়ে, তা বোঝা যায়। বিভিন্ন প্রভাবকে আত্মস্থ করে তাঁরা নিজের করে নিতে পেরেছেন।
পুরস্কৃত হয়েছেন পটনার ভাস্কর রাজেশকুমার রঞ্জন (জন্ম: ১৯৮২)। জীবনবোধ, প্রতিবাদী চেতনা, আঙ্গিক ও প্রকরণের স্বাতন্ত্র্যে তাঁর দু’টি ভাস্কর্যই উজ্জ্বল। স্টেইনলেস স্টিলের অজস্র ছোট ছোট বল নিবিড় বুনোটে পাশাপাশি সংস্থাপিত করে গড়ে তুলেছেন কাজ দু’টি। ‘ভার্জিন প্রিজার্ভেশন’ শীর্ষক রচনায় সদ্যোজাত এক মৃত শিশুর মাথা ডুবিয়ে রাখা হয়েছে পচনরোধী তরলে। এক করুণ বিনষ্টির প্রতীক গড়ে তুলেছেন শিল্পী। ‘সেভেন-সিস্টেম’ শীর্ষক দ্বিতীয় রচনাটিতে তিনি যেন এই ব্রহ্মাণ্ডের এক ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি করেছেন। ভাস্কর্যের দ্বিতীয় শিল্পী ওড়িশার সুশান্তকুমার মহারানা। কাঠ, পেন্সিল ও জলরঙের নতোন্নত বা রিলিফ পদ্ধতির রচনায় তিনি ভারতীয় মন্দির-ভাস্কর্যের কিছু রূপপদ্ধতিকে আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছেন। তৃতীয় ভাস্কর কৃষ্ণনগরের অনুপ মণ্ডল। ধাতুতে নির্মিত তাঁর দু’টি পূর্ণাবয়ব পুরুষের উপস্থাপনা এই সময়ের গভীর সংকটের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
একজনই মাত্র বিদেশিনী অংশগ্রহণ করেছিলেন প্রদর্শনীতে। ইতালির ফ্রাঁসেসকা রামেল্লো। তাঁর ছিল ডিজিটাল প্রিন্টে আলোকচিত্রসুলভ পুরুষ ও নারীর ব্যক্তিগত ভঙ্গিতে উপস্থাপনা। |
|
প্রদর্শনীর একটি ছবি |
বরোদায় প্রশিক্ষিতা অসমের ধরিত্রী বোরো-র ছিল অজস্র ছোট কাজের সমাহারে গড়া দু’টি রচনা। শিরোনাম- ‘অ্যাবলুশন’ ও ‘ইন্ডিয়ান চেইন’। হুগলির জয়েতি ভট্টাচার্য তেলরং ও অ্যাক্রিলিক ভিত্তিক মিশ্রমাধ্যমে এঁকেছেন। কলকাতার কণিকা শাহ এচিং ও এমবসিং মাধ্যমে উপস্থাপিত করেছেন একটি চলন্ত রেলগাড়ির প্রতিমাকল্প। বিস্তীর্ণ সাদার শূন্য পরিসরে কয়েকটি মাত্র রেখায় এঁকেছেন ট্রেনের জানালা। তা থেকে বাইরের দিকে মুখ বাড়িয়ে আছে শিশুরা। শূন্য পরিসরকে বাঙ্ময় করে তোলায় তাঁর কল্পনার অভিনবত্ব মুগ্ধ করে। কলকাতারই কৌশিক সাহার ‘টাইম ইজ দ্য আল্টিমেটাম’ শীর্ষক তেলরঙের রচনায় বর্তমানের এক কল্পিত নিসর্গে পুরাণকল্প প্রতিস্থাপিত হয়। কুন্দন মণ্ডল ছোট ছোট অজস্র ছবির সমাহারে গড়ে তুলেছেন বড় ছবি। কেরলের নিহাল ফৈজল মাত্র ১৮ বছর বয়সে ফোটো মন্তাজে যে দু’টি কাজ করেছেন, তাতে এই সময়ের করুণাঘন এক নিবিড় ভাষ্য জেগে ওঠে। ঝাড়খণ্ডের প্রেমকুমার সিংহ একটি ছবিতে নিসর্গকে বিমূর্তায়িত করেছেন। কাগজের উপর গমের দানা সেঁটে, তার উপর কলমে আঁকা তাঁর দ্বিতীয় ছবিটির শিরোনাম ‘গড ইউ নো হাউ টু কিপ আস হ্যাপি’। কলকাতার রাজর্ষি সেনগুপ্ত মধ্যযুগীয় অণুচিত্রের রূপকল্প নিয়ে এক রূপকথার পরিমণ্ডল গড়ে তুলেছেন তাঁর ‘দ্য সিট ফর হাথাত্ বাবু’ শীর্ষক ছবিটিতে। ২৪ পরগনার শুভদীপ ভট্টাচার্য ক্যানভাস বোর্ডের উপর মাটি লেপে করেছেন সংবৃত আঙ্গিকের অসামান্য দু’টি বিমূর্ত রচনা। অসমের সুদীপ্তা দাস সাঁটা কাগজ ও ডিজিটাল প্রিন্টে গড়ে তুলেছেন দু’টি প্রায়-বিমূর্ত রচনা। হুগলির সুমন্ত্র মুখোপাধ্যায় কিউবিজম ও এক্সপ্রেশনিজমের সমাহারে গড়ে তুলেছেন বীভৎস রসের দু’টি অবয়বী, বর্ণিল, প্রতিবাদী রচনা। বিহারের বিধানকুমার এঁকেছেন সাম্প্রতিকের বাজারের আলেখ্য। এই প্রদর্শনীতে এই সময়ের নানা দিক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। |
|
|
|
|
|