কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মরিয়া হয়ে ওঠার সঙ্গে দুর্নীতি-তদন্তের যোগ দেখছিল কংগ্রেস। এ বার সেই অস্ত্র প্রয়োগ করতে শুরু করল সিপিএমও! প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়-সহ তৃণমূলের নেতারা দুর্নীতি-কেলেঙ্কারির দায়ে জেলে যেতে পারেন আশঙ্কা করেই মমতা দিল্লিতে সরকার ফেলতে মরিয়া হয়েছেন এই অভিযোগ এনে আক্রমণে গেল তারা। নিজের খাস তালুক ভাঙড়ে দাঁড়িয়ে এই দুর্নীতি-অস্ত্র শানাতে অগ্রণী ভূমিকা নিলেন সিপিএমের বিতর্কিত নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা।
ভাঙড়ে দলের এক সভায় বৃহস্পতিবার আগাগোড়া মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ছিলেন রেজ্জাক। সেই সূত্রেই তাঁর মন্তব্য, “যে সিপিএমকে উঠতে-বসতে লাথি, ঝাঁটা মারার কথা বলতেন, সেই সিপিএমের আলিমুদ্দিনেই গিয়ে চা খেতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী! কারণ, কেন্দ্র রেল ও জাহাজ মন্ত্রক নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। ছ’মাসের মধ্যেই মকুল রায় গ্রেফতার হবেন, এ কথা দিদির কানে গিয়েছে!” রেজ্জাকের আরও কটাক্ষ, “সেই কারণে দিদির মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে! সরকার ফেলতে দিদি মরিয়া হয়ে উঠেছেন!” |
প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবু অবশ্য রেজ্জাকের বিরুদ্ধে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “রেজ্জাক যদি সত্যিই এমন কথা বলে থাকেন, তা হলে নিজের অপরাধ আড়াল করতেই বলেছেন।” মুকুলবাবু জানিয়েছেন, প্রকাশ্য সভায় রেজ্জাকের বক্তব্যের ফুটেজ দেখে তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবেন। প্রয়োজনে আইনি পথে যাওয়ার কথা ভাববেন। তবে দলের ঘনিষ্ঠ মহলে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “রেজ্জাক নিজে চুরি, খুন, টাকা নয়ছয়ের মতো নানা অপরাধে অভিযুক্ত। তাঁর কথা মানুষ বিশ্বাস করবেন না।” দুর্নীতির দায়ে মুকুলবাবুদের অনেক আগেই কাঠগড়ায় তুলেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেব। রেজ্জাকের এ দিনের বক্তব্য, মুকুলবাবুর পাল্টা হুঁশিয়ারি এবং দিল্লির সমীকরণ সব মিলিয়ে ইঙ্গিত মিলছে দুর্নীতি-যোগ এ বার পঞ্চায়েত ভোটের রসদ হয়ে উঠতে পারে।
কয়েক দিন আগে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাত্তার মোল্লা শাঁকশার বাজারে তৃণমূল কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারই প্রতিবাদে সভা করতে চেয়ে এ দিন পুলিশের অনুমতি পায়নি সিপিএম। ধানখেতেই শেষ পর্যন্ত সভা করে তারা। সেখানে ভিড় হয়েছিল যথেষ্টই। ভিড়ে-ঠাসা সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণের পাশাপাশি পুলিশকেও প্রবল হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ক্ষেত্রে পুলিশের নিরপেক্ষ আচরণের দাবি জানিয়েছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, দলীয় কর্মীদের গায়ে হাত পড়লে শাসক তৃণমূলকেও পাল্টা মারের শাসানি দিয়েছেন বিধায়ক রেজ্জাক। |