|
|
|
|
জগদ্ধাত্রী পুজো |
হালকা হিমে জমেছে উৎসব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
সুবিশাল মণ্ডপ নেই। নেই চোখ ধাঁধানো আলোর রোশনাই। কৃষ্ণনগর কুর্চিপোতা মোড়ের এক চিলতে মণ্ডপে নিউ ক্লাবের পুজোর আকর্ষণ সম্প্রীতিই। দেবীর নামও সম্প্রীতি মা। পুজো কমিটির সম্পাদকের নাম হাসান খান। কোষাধ্যক্ষ ফিরোজ শেখ। সভাপতি প্রবীর রায়। পুজোর চাঁদা তোলা থেকে অন্য আয়োজন সবই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষই। হাসান খান বলেন, “সারা বছর ধরে আমরা অল্প অল্প করে পয়সা জমাই পুজোর জন্য। আসলে জগদ্ধাত্রী পুজো এখানে এই শহরের উৎসব। সেটাই এই উৎসবের সব থেকে বড় পরিচয়।” |
|
কৃষ্ণনগরে নবমীর আরতি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য। |
বুধবার রাত থেকেই শহরে উপছে পড়ছে ভিড়। এক এক বার কলকাতা থেকে ট্রেন আসছে, এক এক বার করে দর্শনার্থীদের ঢেউ উঠছে। বাস ভর্তি করে লোক আসছেন বিভিন্ন জেলা থেকে। বিশেষ করে ঘূর্ণি এলাকায় থিমের পুজো দেখতে থিকথিক করছে ভিড়। সেই সঙ্গে এ বার আবহাওয়াও উৎসবের পক্ষে গিয়েছে। অন্য বার এই সময়ে বেশ ঠান্ডা পড়ে যায়। কৃষ্ণনগরের ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েন বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীরা। এ বার কিন্তু বেশ ফুরফুরে মেজাজেই লোকজনকে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। বড়দের হাত ধরে এসেছে ছোটরাও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই শহর কার্যত চলে গিয়েছে দর্শনার্থীদের হাতেই। সেই ভিড় সামলাতে হিমসিম খেয়েছেন পুলিশকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা। তবে শহরের মধ্যে সব রকমের যানবাহন চলাচলই বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটেই ভিড়ের স্রোত এক মণ্ডপ থেকে আর এক মণ্ডপ পরিক্রমা করেছে। গলির রাস্তাগুলোতে স্থানীয় বাসিন্দারাও তাঁদের বাড়িতে ঢুকতে হিমসিম খেয়েছেন। দর্শনার্থীরাও ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন প্রয়োজনীয় সংখ্যক শৌচালয় থেকে বিশ্রামগার কিছুই না থাকায়। দূরে দূরে মাত্র তিনটি শৌচালয় ছিল। তাতে এত মানুষের প্রয়োজন মেটানো যায়নি। হোটেল থেকে লজ সবই ভর্তি। কোথাও কেউ থাকতে পারেননি। খাবারের দোকানগুলো অবশ্য প্রতি বছরের মতোই এ বারেও লাভের মুখ দেখেছে। নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ সম্পাদক অক্ষয় ভট্টাচার্য বলেন, “জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে যে ভিড়টা হয় কৃষ্ণনগরে তার জন্য এই শহরের ছোট বড় সব ধরনের ব্যবসায়ীরাই লাভ করেন। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। তবে সব থেকে বেশি লাভ হয় খাবার দোকানের। মানতের টিপ নথ বিক্রি হয় বলে স্বর্ণব্যবসায়ীদেরও লাভ হয়। এখন উৎসব তিন দিনের হয়ে যাওয়ায় হোটেল ব্যবসায়ীরাও খুশি।” অস্থায়ী একটি খাবারের দোকানের মালিক দীপ্ত দাস বলেন, “সাধারণত দর্শনার্থীরা সারা রাত ঘুরে পুজো দেখে ভোরের ট্রেনে ফিরে যান। তাই রাস্তাতেই তাঁরা খাবার সংগ্রহ করেন। তাই আমাদের মতো যাঁরা অস্থায়ী দোকান করেন, তাঁদের এই সময়টা খুবই লাভ হয়।” পোস্ট অফিসের মোড়ের ষষ্ঠী বিশ্বাসের কথায়, “রাত যত বেড়েছে, ততই বেড়েছে চায়ের চাহিদাও।” বিশাল প্রতিমা। ডাকের সাজ। শোলার সাজ। সেই সঙ্গে আলো। সেই সবই এ বার প্রাণ ভরেই উপভোগ করেছেন মানুষ। পুরপ্রধান অসীম সাহা বলেন, “আমরা পরিচয় ধরে রাখতে পেরেছি।” |
|
|
|
|
|