হাতির সঙ্গে লড়াই করে মরতে হল ৬ বছর বয়সী এক গন্ডারকে। বন দফতর সূত্রের খবর, জঙ্গলের যে দুই জন্তু সব সময় একে অপরের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে, তাদের মধ্যে লড়াই ও অবশেষে মৃত্যুর ঘটনা সম্ভবত এই প্রথম জলদাপাড়ায় ঘটল। বুধবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে ডুয়ার্সের জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের শিশামারা জঙ্গলের কাছে ভালুকা নদীর পাড়ে। বৃহস্পতিবার ভোরে সুরিপাড়া গ্রামের এক বাসিন্দা নদীর পাড়ে যাওয়ার পথে ছ’বছর বয়সী ওই পুরুষ গন্ডারটির মৃত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। দেহের পাশে হাতির পায়ের চিহ্ন দেখতে পান বনকর্মীরা। উত্তরবঙ্গের বন পাল বিপিন সুদ বলেন, “গন্ডারটিকে হাতি মেরেছে বলে আমরা গ্রামবাসীর কাছ থেকে জানতে পেরেছি। খড়গটি অক্ষত ছিল।” ময়না তদন্তের পর চিকিৎসক অবশ্য হাতির আক্রমণে গন্ডারটি মারা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন। জলদাপাড়ার পশু চিকিৎসক অশোক কুমার সিংহ বলেন, “মৃতদেহের শরীরে কয়েকটি ক্ষত চিহ্ন মিলেছে যে গুলি কয়েকদিনের পুরনো। অন্য কোন গন্ডারের আক্রমণে সে আহত হয়েছিল। পরে গন্ডারটিকে হাতি পা দিয়ে পিষে দেয়।” বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সঙ্গিনী পেতে কোন গন্ডার পথের কাঁটা সরাতে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করতে ছ বছরের ওই গন্ডারটিকে আক্রমণ করে। কিছুদিন আগে তার পায়ে ও শরীরের কয়েকটি জায়গায় আঘাত নিয়ে মায়ের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। সে বুধবার গভীর রাতে ভালুকা নদী পেরিয়ে গ্রামের দিকে যাওয়ার সময় নদীর খাদে উঠতে গিয়ে মত্ত মাকনার মুখোমুখি হয়। |
গ্রাম থেকে তাড়া খেয়ে জঙ্গলে ফিরে যাওয়ার সময় পথের মাঝে ওই গন্ডারটিকে পেয়ে ক্ষিপ্ত হাতিটি গন্ডারটিকে পিষে মেরে বনে ফিরে যায়। গত চার দিন ধরে জলদাপাড়া জঙ্গল লাগোয়া সিধাবাড়ি ও সুরিপাড়া গ্রামে একটি দলছুট মাকনা হাতি ফি রাতে হানা দিয়ে বাসিন্দাদের ফসল খেয়ে বনে ফিরছে। গ্রামবাসী পটকা,মশাল জ্বালিয়ে ওই মাকনাটিকে ভয় দেখালে উল্টে সে বাসিন্দাদের দিকে তেড়ে আসত বলে গ্রাম জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার রাতে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ভালুকা নদী পেরিয়ে হাতিটি ফের সিদাবাড়ি গ্রামে হানা দেয়। বন দফতরের কর্মীদের সঙ্গে বাসিন্দারা হাতিটিকে ওই গ্রাম থেকে কোন মতে তাড়াতে পারলেও পাশের গ্রাম সুরিপাড়াতে সে ঢুকে পড়ে সে। রাতের অন্ধকারে ওই মাকনাটি গ্রামের একটি কলা বাগানে হানা দিয়ে বেশ কয়েকটি কলাগাছ খায়। ওই হাতিটি গন্ডারটিকে মেরেছে বলে সন্দেহ সকলের। ইন্টারন্যাশনাল রাইনো ফাউন্ডেশনের এশিয়া মহাদেশের কো অর্ডিনেটর বিভাব তালুকদার বলেন, “অনেক সময় গন্ডার হাতিকে পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে। তবে হাতির আক্রমণে গন্ডারের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করতে পারছি না। তবে হাতির ‘মস্তি’ হলে অবশ্য তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। সম্ভবত মাকনাটি মস্তিতে রয়েছে।” চল্লিশ বছর ধরে হাতির সঙ্গে কাটিয়ে কাটিয়েছেন জলদাপাড়ার অবসর প্রাপ্ত মাহুত রঘু রায়। তাঁর কথায়, “মাকনাটি অবশ্যই মস্তিতে ছিল। মস্তিতে থাকলে হাতি দিকবিদিক শূন্য হয়ে যায়। পথের সামনে কাউকে পেলে সে কিছুই দেখে না।” ভালুকানদির পাড়ে বাড়ি সুরিপাড়া গ্রামের কৃষক খগেন বর্মনের কথায়, “হাতিটি কয়েকদিন ধরে দারুণ অত্যাচার করছে। গভীর রাতে নদীর পাড়ে হাতির আওয়াজ পেয়েছিলাম। ভোরে দেখি গন্ডারটি মরে আছে। তার পেটের অনেকটা চিরে গিয়েছে। পাশে দেখি হাতির পায়ের চিহ্ন।” |