শিল্পের জন্য জমি নিয়ে ফেলে রাখার প্রবণতা রুখতে এ বার আইনি আটঘাট বেঁধে রাখছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের শিল্পতালুকগুলিতে জমি দেওয়ার আগে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ করার লিখিত চুক্তি করা হচ্ছে লগ্নিকারীদের সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের কর্তাদের দাবি, গত দেড় বছরে ৭৩ জন লগ্নিকারীদের সঙ্গে মোট ১৮ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা বিনিয়োগের চুক্তি হয়েছে। চুক্তি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৫৫টি লগ্নি প্রস্তাব।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে গত দেড় বছরে রাজ্য মোট ১ লক্ষ ৯ হাজার কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণে সেই লগ্নি প্রস্তাবের অনেকটাই দিনের আলো না-দেখতে পারে বলে আশঙ্কা নিগমের কর্তাদের। কিন্তু শিল্পতালুকগুলিতে লগ্নির যে ৭৩টি প্রস্তাব ছাড়পত্র পেয়েছে, সেগুলির বাস্তবায়ন নিয়ে তাঁদের কোনও সংশয় নেই। এই প্রকল্পগুলির কাজের অগ্রগতির উপর নিয়মিত নজরদারিও চালাচ্ছে নিগম।
নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দেড় বছরে যে ৭৩ জন লগ্নিকারীর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন বাম আমলেই জমি পেয়েছিলেন। কিন্তু নানা কারণে কাজ শুরু করতে পারেননি। নতুন সরকার এই সব জমি বণ্টন ফের খতিয়ে দেখে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত জুড়ে দেয়। যার মূল কথা হল, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ লগ্নির অঙ্গীকার করলে তবে শিল্পতালুকে জমি মিলবে। এই শর্তে লগ্নির যে চুক্তি হয়েছে তার ফলে সব মিলিয়ে ৩৩ হাজার ৯৬৮ জনের কর্মসংস্থান হবে বলেও নিগম কর্তাদের দাবি।
কিন্তু লগ্নির ব্যাপারে নিগম এতটা নিশ্চিত হচ্ছে কী ভাবে? লগ্নিকারীরা তো চুক্তি করার পরেও পিছিয়ে যেতে পারেন?
শিল্পোন্নয়ন নিগমের বিদায়ী ম্যানেজিং ডিরেক্টর নন্দিনী চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার বলেন, “অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে অনেকে জমি নিয়ে আর শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসেন না। তাই নতুন লিজ ডিডে বিনিয়োগের ব্যাপারে অঙ্গীকার করতে হয়েছে। সেই শর্তেই জমি দেওয়া হয়েছে। শর্ত ভঙ্গ করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিল্পতালুকগুলিতে বিনিয়োগের জন্য নিগম লগ্নিকারীদের কি কোনও ঋণ দিয়ে সহায়তা করেছে?
শিল্পোন্নয়ন নিগমের বিদায়ী ম্যানেজিং ডিরেক্টর নন্দিনী চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার বলেন, “গত দেড় বছরে নিগম এক জনকেও ঋণ দেয়নি। আমরা মনে করি, শিল্প উন্নয়ন নিগমের কাজ বিনিয়োগকারীদের ঋণ দেওয়া নয়। শিল্পের পরিকাঠামো নির্মাণ করা।” সেই কারণে যাঁরা নিগম থেকে ঋণ নিয়ে লগ্নি করার কথা জানিয়ে আবেদন করেছেন, তাঁদের এখনও জমি দেওয়া হয়নি। এই আবেদনগুলি খারিজ না করলেও বিবেচনাধীন বলে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
যে সব লগ্নিকারীকে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাঁদের বাছা হল কী ভাবে? নন্দিনী বলেন, “এ ব্যাপারে নিগমের কিছুই করার নেই। প্রতিটি জমি বিলির সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য মন্ত্রিসভা। লগ্নিকারীরা জমি পেতে আবেদন জানালে প্রকল্পটির আর্থিক সংস্থান কোথা থেকে হবে তা সবার আগে খতিয়ে দেখা হয়। তার পর প্রকল্পটির অন্যান্য দিক খতিয়ে দেখে তা নিগমের বোর্ড মিটিংয়ে পেশ করা হয়। বোর্ড তা চূড়ান্ত করলে পাঠানো হয় মন্ত্রিসভার কাছে।” তাঁর দাবি, কোনও আমলার হাতে জমি বিলির ক্ষমতা নেই। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক চূড়ান্ত স্বচ্ছতা এবং সতর্কতা মেনেই জমি বণ্টন করা হয়। এ ভাবেই গত দেড় বছরে শিল্পতালুকগুলিতে জমি বিলি করা হয়েছে।
নিগমের এক কর্তার মতে, যে সব লগ্নিকারী কঠোর শর্তে জমি নিতে চান না, তাঁরাই নিগমের কার্যপদ্ধতি নিয়ে অপপ্রচার করছে। কিন্তু নতুন সরকার জমি দিয়ে তা ফেলে রাখতে দেবে না। |