উফ্! মায়ের গর্ভের অন্ধকার ছোট্ট জায়গায় হাত পা মুড়ে থাকাটা কি কম সমস্যার? তার সঙ্গে আরও পাঁচ রকমের কাজ। সব মিলিয়ে পরিশ্রম তো কম হয় না ছোট্ট ভ্রূণটির। অগত্যা একটু জিরিয়ে নেওয়া। মানে ওই হাই তোলা আর কী। শুনে চমকাবেন না। ডারহ্যাম এবং ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক সম্প্রতি জানিয়েছেন, বড়দের মতোই রীতিমতো হাই তোলে গর্ভস্থ ভ্রূণ। ‘প্লস ওয়ান’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁদের গবেষণাপত্রটি। প্রমাণ হিসেবে অত্যাধুনিক ভিডিও ফুটেজও হাজির করেছেন তাঁরা।
কী দেখা যাচ্ছে সেই ফুটেজে?
ডিগবাজি খাচ্ছে, কখনও কখনও বা আড়মোড়া ভাঙছে ভ্রূণ। এ সব অবশ্য আগেই জানা ছিল। তবে গবেষকদল এ বার দেখালেন, ২৪ সপ্তাহ থেকে ৩৬ সপ্তাহ বয়সী ভ্রূণেদের হাই তোলার ছবি। রীতিমতো প্রাপ্তবয়স্কদের মতো হাই তোলে তারা। ফোর ডাইমেনশনাল (চারমাত্রিক) যন্ত্রে তোলা ফুটেজ থেকে গবেষকদল মোটামুটি একটা হিসেবও কষেছেন কত বার হাই তোলে ভ্রূণ। সেখানেই জানা গিয়েছে, ঘণ্টায় অন্তত ছ’বার হাই ওঠে তাদের। গবেষকদের ধারণা, হাই তোলার ফলে তাদের চোয়ালের যে ব্যবহার হয়, তা আসলে মস্তিষ্কের বিশেষ অংশের বিকাশে সাহায্য করে। অর্থাৎ এই হাই তোলাকে ভ্রূণের স্বাস্থ্যের বিকাশের সূচক হিসেবেও পরবর্তীকালে ব্যবহার করতে পারবেন চিকিৎসকরা।
তবে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের জায়গা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের দাবি, হাই তুলতে নয়, গর্ভস্থ অবস্থায় এমনিই মুখ খোলে ভ্রূণ। এটাকে হাই তোলা ভাবার কারণ নেই বলেই ধারণা তাঁদের।
ডারহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদলটির প্রধান, অধ্যাপক নাজদা রেইসল্যান্ড জানালেন, ভ্রূণ কতক্ষণ মুখ খোলা রাখছে, সেই সময়ের নিরিখে ‘হাই তোলা’ এবং ‘এমনি মুখ খোলা’-র মধ্যে পার্থক্য করেছেন তাঁরা। এবং ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, যে ১৫টি ভ্রূণের উপর(আটটি মেয়ে, সাতটি ছেলে) এই সমীক্ষা চালিয়েছিলেন নাজদা ও তাঁর দল, তারা বেশিরভাগ সময় হাই তুলতেই মুখ খুলেছে। একই সঙ্গে নাজদা জানান, ২৮ সপ্তাহের পর থেকে অনেক কম হাই তোলে গর্ভস্থ ভ্রূণ। সব দেখে গবেষকদলের দাবি, প্রাপ্তবয়স্কদের মতো গর্ভস্থ ভ্রূণ শুধুমাত্র ঘুম পেলেই হাই তোলে না। এটাকে তাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের সূচক হিসেবে মনে করেন নাজদা ও তাঁর দল।
অর্থাৎ হাই দিয়ে এ বার বোঝা যেতে পারে কেমন আছে আপনার হবু সন্তান। অন্তত সে রকম দাবিই করছেন গবেষকরা। |