প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি হওয়া বহু রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে মুর্শিদাবাদ জুড়ে। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে জেলার গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে সড়কপথের এই বেহাল দশার দায় সিপিএম নিয়ন্ত্রিত জেলা পরিষদের উপর চাপিয়েছে কংগ্রেস। পাল্টা দোষারোপ করে সিপিএম বলছে, কোনও কাজ না করে ‘দোষ’ দিয়ে শাক ঢাকার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আশিস তেওয়ারি বলেন, “ঠিকাদারের স্বার্থ রক্ষা করতে তাঁদের হাতের পুতুল হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলা পরিষদ। কারণ সড়ক নির্মাণ থেকে রক্ষণাবেক্ষণের পুরো দেখভালের দায়িত্ব জেলা পরিষদের। তারা নীরব। তাই প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনায় তৈরি হওয়া সড়ক নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।”
জেলায় গত ১২ বছরে এই যোজনায় ৫৬৬টি সড়কপথে ১৪৫৯.৮৮ কিমি রাস্তা তৈরি হয়েছে মুর্শিদাবাদে। খরচ হয়েছে প্রায় ৪৭৬ কোটি টাকা। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ সিংহ রায় গ্রাম-সড়ক যোজনায় তৈরি হওয়া রাস্তার বেহাল দশার কথা মেনে নিয়ে বলেন, “জেলা পরিষদ দায়িত্বে থাকলেও কাজটা দেখভালের আর্থিক দায় রাজ্য গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন এজেন্সির। রাস্তা তৈরির কাজ এই প্রকল্পে শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। সেই সময়ের বেশির ভাগ রাস্তাই বেহাল অবস্থায়। সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাস্তাপিছু মাত্র ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তা দিয়ে মেরামতি সম্ভব নয়।”
তিনি জানান, জেলার ৪০ শতাংশ সড়ক পথেরই বেহাল দশা। এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অমল মণ্ডল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম-সড়ক যোজনায় রাস্তা মেরামতিশুরু হয়েছে। যেখানে যে ঠিকাদার দায়িত্ব, তাঁদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
ইঞ্জিনিয়ারের এই কথায় হতবাক ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা। ভগবানগোলা-১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মির্জা মানোয়ার হোসেন বলেন, “বাগদহরা থেকে দস্তিনা পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়কটি তৈরি হয়েছে মাত্র আড়াই বছর আগে। এখন গোটা সড়ক জুড়ে খানাখন্দ আর গর্ত। অত্যন্ত ব্যস্ত এই সড়কপথ দিয়ে লালগোলা, ভগবানগোলা ও জিয়াগঞ্জের লোকজন যাতায়াত করেন। লরি, ট্রেকার চলে। লাল মাটি ফেলে একদফা মেরামতি হয়েছিল, কিন্তু তা টেঁকেনি। অথচ ঠিকাদারের দায়িত্ব ছিল ৫ বছর যাবৎ রাস্তা সারানোর।” সঙ্গীন অবস্থা সাগরদিঘি হুকারহাট থেকে দস্তুরহাট পর্যন্ত ৩ কিমি সড়কপথেরও, যা তৈরি হয়েছিল ৩ বছর আগে। গোপালদিঘি থেকে হরহরি মাঠ পর্যন্ত ৫ কিমি সড়কপথে প্রতিদিনই সাইকেল বা বাইক থেকে পড়ে আহত হচ্ছেন কেউ না কেউ। বৃষ্টিতে সড়কটি জলে থইথই করে বহু জায়গায়। সুতির সুজনিপাড়া থেকে চক সৈয়দপুর রাস্তা শেষ হয়েছে ২০০৮ সালে, অর্থাৎ ২০১২ সাল পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের দায় ছিল ঠিকাদারের। সে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলেও পদে পদে হোঁচট খেতে হয় গ্রামবাসীদের। রঘুনাথগঞ্জের কাছে সুজাপুর-নতুনগঞ্জ সড়কপথের বহু জায়গাতেই খোয়া-পাথর উঠে সড়কের অস্তিত্ব নেই।
পূর্ত দফতরের এক এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “রাস্তা নির্ভর করে মাটি, বৃষ্টির পরিমাণ ও ভারী যান সংখ্যার উপর। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম-সড়ক যোজনায় ১০০০-এর বেশি এলাকার সড়কপথ তৈরি হয়েছে দৈনিক ৪৫টি ভারী যান যাওয়ার উপযোগী করে। এতে রাস্তা বেহাল তো হবেই।” |