এ বারেও দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলগুলি পরিক্রমা করার সময়ে চিরকালীন মুগ্ধতা অনুভব করেছি। এ বারেও চিরকালীন পুরনো আক্ষেপ নতুন করে জেগে উঠেছিল। এই সমস্ত অনুপম, অসাধারণ শিল্পকীর্তি কেন মাত্র চার দিনের জন্য আয়ু নিয়ে ভূমিষ্ঠ হবে? আমার মনে হয়, এ বিষয়ে চিন্তাভাবনার সময় এসেছে।
১) উৎকৃষ্ট প্যান্ডেল এবং প্রতিমাগুলির দীর্ঘস্থায়ী দর্শন ও উপযুক্ত রসাস্বাদনের জন্য সংগ্রহশালা অথবা চণ্ডীগড়ের রক গার্ডেনের মতো ‘প্যান্ডেল নগরী’ করার কথা ভাবা যেতে পারে। প্রতিটি জেলার এ রকম নিজস্ব সংগ্রহশালা অথবা প্যান্ডেল প্রদর্শনীর জন্য বিস্তৃত নির্বাচিত ‘প্রদর্শনী উদ্যান’ থাকতে পারে।
২) সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে উৎকৃষ্ট প্যান্ডেলের অংশবিশেষ ও অন্যান্য শিল্পসামগ্রী নিলাম অথবা বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৩) সরকারি উদ্যোগে সারা বিশ্বের জনমাধ্যম তথা শিল্পরসিক মহলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বকে অবলোকনকারী তথা প্রচারমাধ্যম হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। এক বার বিশ্বে দুর্গাপুজোর খ্যাতি উপযুক্ত প্রতিষ্ঠা পেলে বিদেশি পর্যটক এবং বিদেশি মুদ্রা দুই-ই আপনা থেকেই আসবে। |
পাশাপাশি, আরও কিছু প্রস্তাব পেশ করছি।
ক) কলকাতার এবং সমগ্র পশ্চিমবঙ্গেরই বড় প্যান্ডেলগুলিতে যে পরিমাণ ভিড় হচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য অথবা নির্দিষ্ট কিছু বিশেষ প্রবেশপথে উপযুক্ত প্রবেশমূল্যের বিনিময়ে প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা উচিত।
খ) পুজো পরিক্রমার জন্য বিশেষ যানবাহন অর্থাৎ পাবলিক বাস-এর ব্যবস্থা করা উচিত। শহরের নানা নির্দিষ্ট পথ দিয়ে সমস্ত শহরটাকেই অতিক্রম করে এই বাসগুলি চলবে। পুজো পরিক্রমার জন্য একটি সাধারণ টিকিট রাখা যায়। বিশেষ অঞ্চলের জন্য বিশেষ টিকিটেরও ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিশেষ প্যান্ডেলের জন্য বিশেষ ‘অটো রিকশ কুপন’-এরও ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে টিকিটের ক্রেতা যে-অর্থ দিয়ে টিকিট কিনবেন বা কুপন কিনবেন, সরকারের মাধ্যমে যানবাহনের চালক এবং যে-প্যান্ডেলের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ টিকিট বা কুপন বিক্রয় হবে, সেই পুজোর উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি তার ভাগ পেতে পারেন। এ ভাবেই পুজোগুলিতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থার বিজ্ঞাপনের আরও প্রয়োগের কথা ভাবা যেতে পারে।
গ) পুজো উপলক্ষে বিভিন্ন রাস্তায় বিশেষ ট্যাক্স বসানো যায়, যাতে, উপযুক্ত অর্থের বিনিময়ে ওই সমস্ত পথে অপেক্ষাকৃত নির্ঝঞ্ঝাটে ঠাকুর দর্শন করা যায়।
দুর্গাপুজোর মতো বিরাট মাপের উৎসবকে বিশ্বের দরবারে উপযুক্ত ভাবে উত্থাপন করা হচ্ছে না। এই পুজোগুলির জন্য যে প্রচণ্ড পরিমাণ পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করা হয় এবং শৈল্পিক উৎকর্ষের যে চরম পরিণতি এই পুজোগুলিকে কেন্দ্র করে জন্ম নেয়, তার খুব সামান্যই প্রতিদান হিসেবে ফেরত আসে। সংগ্রহশালা, টিকিট, কুপন, বিদেশি পর্যটক, রাস্তার শুল্ক (পুজো উপলক্ষে), নিলাম, বিক্রয়কেন্দ্র, বিজ্ঞাপন বিপণনের মাধ্যম এ সবের ব্যবহার করে এই ন্যায্য প্রতিদান পাওয়া যেতে পারে। এতে পুজোর মূল পবিত্রতার কোনও হেরফের হবে না।
অনিন্দ্য সেনগুপ্ত। কলকাতা-১৯ |