বিহারে সূর্য উপাসনার ছট্-পরব শোকে ম্লান। রাজধানী পটনায় গঙ্গার একটি ঘাট গোপালগঞ্জে পূজা দিতে আসা পুণ্যার্থীদের মধ্যে অন্তত ১৭জন পদপিষ্ট হইয়া নিহত। পুণ্যার্থীদের গরিষ্ঠ অংশই ছিলেন মহিলা, সঙ্গে তাঁহাদের শিশুসন্তানরা। পদপিষ্ট হওয়ার প্রকৃত কারণ অজানা। কেহ বলিতেছেন, ঘাট পর্যন্ত নির্মিত একটি সংকীর্ণ সাঁকো-পথ ভাঙিয়া এই দুর্ঘটনা। আবার কাহারও মতে বিদ্যুৎবিভ্রাটে সহসা অন্ধকার নামিয়া আসার আতঙ্কজনিত হুড়াহুড়িতেই এই অপঘাত। নির্দিষ্ট কারণ যাহাই হউক, তাহার পিছনে সংগঠকদের বিপর্যয়-মোকাবিলা বিষয়ক প্রস্তুতি ও ভাবনার সমস্যাটি স্পষ্ট।
ধর্মস্থানে পদপিষ্ট হইয়া পুণ্যার্থীদের গণমৃত্যু এই প্রথম নহে। প্রায় প্রতি বছরই এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ধর্মস্থানে পুণ্যার্জনের মহিমা যত বেশি, ভিড়ও তত অনিয়ন্ত্রিত। একটি সভ্য সরকার ইহা মাথায় রাখিয়া পুণ্যার্থীদের যাতায়াত মসৃণ ও অবাধ রাখিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করিবে, সম্ভাব্য দুর্দৈবের আশঙ্কায় বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি সুষ্ঠু ভাবে করিয়া রাখিবে, ইহাই প্রত্যাশিত। সদিচ্ছা এবং তাহা বাস্তবায়নে তৎপরতা থাকিলে সেটা যে করা যায় না, এমনও নয়। উত্তরাখণ্ডের সরকার কুম্ভমেলার বিপুল পুণ্যার্থী-সমাগম সুষ্ঠু ভাবে, বিনা দুর্ঘটনায় নিষ্পন্ন করিয়া তাহা প্রমাণ করিয়াছে। প্রতি বছর কলিকাতায় দুর্গোৎসব উপলক্ষে মণ্ডপে-মণ্ডপে যে বিপুল দর্শক-সমাগম হইয়া থাকে, তাহাতেও অগ্নিকাণ্ড, পদপিষ্ট হইয়া মৃত্যুর মতো সমূহ দুর্ঘটনার জমি প্রস্তুত থাকে। কিন্তু পুলিশ, দমকল, পূজা-সংগঠক, স্বেচ্ছাসেবী ও প্রশাসনিক বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু পরিচালনার ফলে বড় বিপদ ঘটে না। পশ্চিমবঙ্গ যাহা পারে, বিহার পারে না কেন?
অথচ ছট্ পূজা বিহারের কোটি-কোটি মানুষের কাছে প্রধান ও সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় উৎসব। এতদুপলক্ষে রাজ্যের প্রতিটি নদীর ঘাটে-ঘাটে যে বিপুল পুণ্যার্থী-সমাগম হয়, নীতীশ কুমারের সরকারের তাহা অজানা নয়। বস্তুত, দুর্ঘটনার দিনেও তিনি পটনায় গঙ্গার একাধিক ঘাটে সরজমিনে গিয়া জলে নামা-ওঠার পথগুলি পর্যবেক্ষণ করিয়াছেন, পুণ্যার্থী উপবাসিনীদের নিকট আশীর্বাদও লইয়াছেন। কেবল প্রজাসাধারণের নিরাপত্তার দিকটি তাঁহার সরকার খেয়াল রাখে নাই। বন্দোবস্তের ত্রুটির জন্য পুণ্যার্থীরা যে সরকারকেই দুষিতেছেন, তাহা অকারণ নয়। আদালতগঞ্জের ঘাটে নামার জন্য প্রশাসন যে নূতন সেতু-পথ তড়িঘড়ি নির্মাণ করিয়া দিয়াছিল, তাহা দায়সারা ভাবেই নির্মিত হইয়া থাকিবে। সর্বোপরি পুণ্যার্থীদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার কোনও সুষ্ঠু ব্যবস্থা ছিল না। এ ধরনের সমাবেশস্থলে প্রবেশ-নিষ্ক্রমণ কিংবা আসা ও যাওয়ার পথ কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত হওয়া দরকার, স্বতঃস্ফূর্ততার উপর ছাড়িয়া দিলেই বিপদ। আদালতগঞ্জে তাহাই ঘটিয়াছে। ইলাহাবাদের প্রয়াগে এ বার কুম্ভমেলার আয়োজন শুরু হইয়াছে, কোটি পুণ্যার্থীর সেই সমাগম যাহাতে নির্বিঘ্নে অতিক্রান্ত হয়, সে জন্যও আগাম সতর্কতা জরুরি। |