লাভ হল না আলিমুদ্দিনে যাওয়ার প্রস্তাবেও
আর্জি ফেরাল সিপিএম বিজেপি, একঘরে মমতা
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করে হাত পুড়িয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার কারও সঙ্গে আলোচনা না-করেই নাটকীয় ভাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা বলে ফের হাত পোড়ালেন তিনি।
প্রথম বার মুলায়ম সিংহ যাদবের প্যাঁচে রাজনৈতিক ভাবে একঘরে হয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। এ বার রাজ্য রাজনীতিতে সিপিএম-কে হারাতে গিয়ে ফের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার প্রমাণ দিলেন তিনি।
মনমোহন সিংহের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার যে কৌশল মমতা নিয়েছেন, তার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে বাম-বিজেপি দুই পক্ষই। যে বিজেপি মমতার পাশে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছিল, তারাও বাম এবং জেডি (ইউ)-এর ১৮৪ ধারায় আনা প্রস্তাব অনুসারে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে লোকসভায় ভোটাভুটি-সহ আলোচনাকেই সমর্থন জানাল।
বিজেপি পাশ থেকে সরে যাচ্ছে বুঝতে পেরে তাঁর বিদ্রোহের সঙ্গী জোগাড় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মমতা। আর সে জন্য তাঁর প্রবলতম প্রতিপক্ষ সিপিএম-কেও অচ্ছুৎ করে রাখেননি তিনি। সোমবার সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্তকে ফোন করে মমতা বলেছিলেন, সিপিএমের যদি তৃণমূলের আনা অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থন করতে অসুবিধা থাকে, তা হলে তারা প্রস্তাব আনুক। তিনি তা সমর্থন করবেন। এ ব্যাপারে সিপিএম-কে বোঝানোর জন্য গুরুদাসবাবুকে অনুরোধ করেন তৃণমূল নেত্রী।
কিন্তু সিপিআই সাংসদ কী করেন তা দেখার জন্য অপেক্ষা না-করে আজ নিজেই সিপিএম-কে প্রকাশ্যে বার্তা দিয়েছেন মমতা। এমনকী সিপিএমের রাজ্য সদর দফতর আলিমুদ্দিনে গিয়ে কথা বলার প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি।
মহাকরণে আজ মমতা বলেছেন, “বিমান বসুকে বলুন না, কথা বলতে চাইলে আমরা রাজি! তার জন্য প্রয়োজনে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে গিয়েও কথা বলতে রাজি, যদি ওঁরা সমর্থন করেন। আমার কোনও ইগো নেই! গত কাল সিপিএম নেতাদের বক্তব্যও শুনেছি। আমি সব কিছু লক্ষ করছি।”
সিপিএম যে মমতার আর্জিতে সাড়া দেবে না, সেটা আজই স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। তিনি বলেন, “যদি কেউ কথা বলতে আসেন তবে স্বাগত। কিন্তু আমরা তো এ নিয়ে কথা বলতে চাইছি না। অনাস্থা এনে সরকারের সুবিধা করে দেওয়ার পক্ষপাতী আমরা নই। কেউ নিজের মনোবাসনা পূরণ করার জন্য কিছু বললে, সেটার দায় তাঁর।”
কেন তাঁরা অনাস্থা প্রস্তাবের বিরোধী, তার ব্যাখ্যা দিয়ে বিমানবাবু বলেন, “প্রথমত, অনাস্থা আনার জন্য প্রয়োজনীয় ৫০ জন সাংসদ আমাদের নেই। তা ছাড়া, বহু দল আছে যারা সরকার ফেলার বিরুদ্ধে, আবার এফডিআই-এরও বিরুদ্ধে। তাই ১৮৪ ধারায় নোটিস দিয়েছি। যাতে সকলকে সঙ্গে পাওয়া যায়।”
বাসুদেব আচারিয়াকে দূত হিসেবে সুষমা স্বরাজের কাছে পাঠিয়ে তাঁদের প্রস্তাবের পক্ষে বিজেপি-র সমর্থন ইতিমধ্যেই আদায় করে নিয়েছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। বিজেপি সূত্র বলছে, “মমতা সাংবাদিক বৈঠক করলেও আমাদের সঙ্গে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে কোনও আলোচনাই করেনি। অন্য দিকে সিপিএম আমাদের সঙ্গে কক্ষ সমন্বয় করল।” সিপিএম নেতৃত্ব বিজেপিকে বোঝান, অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এসে হেরে গেলে কংগ্রেসের লাভ। কিন্তু আলোচনা ও ভোটাভুটি করে ইউপিএ-সরকারকে বার্তা দেওয়া সম্ভব।
বিজেপি সূত্র বলছে, মূলত নরেন্দ্র মোদী এবং নীতীশ কুমারের চাপেই তাদের অনাস্থা প্রস্তাব থেকে দূরে থাকতে হল। মমতা যখন প্রথম অনাস্থা প্রস্তাবের কথা বলেন, তখন তাঁকে সমর্থন করার পক্ষেই মত দিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। কিন্তু গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। আর তাঁর রাজ্যে ভোটের আগে অনাস্থায় জিতে গেলে কংগ্রেসের মনোবল বাড়বে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীও মনে করেন, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে আলোচনা করে সরকারকে অনেক বেশি বিপাকে ফেলা যাবে।
ইতিমধ্যে মমতার আচরণ নিয়েও বিজেপি নেতাদের মধ্যে উষ্মার সঞ্চার হয়েছে। মমতা যে সুষমাকে ফোন করেছেন, সে কথা ফাঁস করে দিয়েছিলেন মুরলীমনোহর জোশী। কিন্তু সে কথা অস্বীকার করে তৃণমূল। বলা হয়, তৃণমূল এখনও বিজেপি-র সমর্থন চায়নি। বিজেপি নেতারা আজ বলছেন, “এই অবস্থায় আমরাই বা সাত তাড়াতাড়ি মমতার প্রস্তাবকে সমর্থন জানাতে যাব কেন?”
সিপিএম এবং বিজেপি পাশে না দাঁড়ালেও, মমতা কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাব আনতে অনড়। সৌগত রায় বলেছেন, তিনি অধিবেশনের প্রথম দিনেই নোটিস দেবেন। তৃণমূলের রণকৌশল হল, প্রস্তাব গৃহীত হোক বা না হোক, সংসদের বাইরে এটা প্রচার করা যাবে যে, জনগণের স্বার্থে কংগ্রেস-বিরোধিতার প্রশ্নে তৃণমূলই আগমার্কা। বিজেপি-কমিউনিস্ট ভাই-ভাই। তারা জনবিরোধী সরকারকে বাঁচাতে ব্যস্ত। কারণ তারা ভোটে যেতে ভয় পাচ্ছে।
আজ ফেসবুকে আবার ইউপিএ সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন মমতা। তিনি লিখেছেন, ‘একটা সংখ্যালঘু সরকার একতরফা ভাবে যা ইচ্ছে, তা-ই করছে!’ পাশাপাশি কারা ‘ভ্রষ্টাচারী সরকারে’র রক্ষাকর্তা হতে চাইছে, দেশের মানুষ তা জানতে চায় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য মনে করছে, তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহারের পরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকারের মধ্যে যে সংশয় ছিল, মমতার এই হঠকারিতায় তা দূর হয়ে গেল। এখন এটা স্পষ্ট যে, লোকসভার বেশির ভাগ সাংসদের সমর্থন সরকারের পক্ষেই। আর সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করে সংসদীয় মন্ত্রী কমল নাথ আজ মমতাকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “কংগ্রেসের এতটা দুর্দশা হয়নি যে ১৯ সাংসদের একটা দলের হুমকিতে ভয় পাবে!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.