সেট টপ বক্স নিয়ে রাজ্য সরকারের আপত্তি উড়িয়ে এ বার সরাসরি ‘মাল্টি সিস্টেম অপারেটর’ (এমএসও)-দের মুচলেকা চাইল দিল্লি। কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক সব এমএসও-কে জানিয়ে দিয়েছে, মেট্রো এলাকায় তারা সব রকম অ্যানালগ সম্প্রচার বন্ধ করেছে কি না সোমবারের মধ্যে জানাতে হবে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি নয়। কিন্তু ফ্যাসাদে পড়েছে এমএসও-রা।
কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের ডিজিটাল অ্যাড্রেসেবল সিস্টেম (ড্যাস) বিভাগের ডিরেক্টর কে এস রেজিমন-এর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি শুক্রবার রাতে পেয়েছে কলকাতার এমএসও-গুলি। তাতে বলা হয়েছে, ৩১ অক্টোবর রাত ১২টার পরে কলকাতা মেট্রো এলাকায় অ্যানালগ সম্প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর পর থেকে মেট্রো এলাকার এমএসও-দের একমাত্র ডিজিটাল সিগন্যাল সম্প্রচার করা বাধ্যতামূলক। রেজিমন এমএসও-গুলিকে লিখেছেন, “আপনার কেব্ল সংস্থা কোনও অ্যানালগ সিগন্যাল সম্প্রচার করছে না, এ কথা তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রককে লিখিত ভাবে জানাবেন। আপনার বক্তব্য অবশ্যই ১৯ নভেম্বরের মধ্যে মন্ত্রকে পৌঁছতে হবে।”
এমএসও-গুলি কেন্দ্রীয় নির্দেশ মেনেছে কি না দেখার জন্য সোমবার আবার ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্টস ইন্ডিয়া (বেসিল)-র প্রতিনিধিরা কলকাতায় আসছেন। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠেছে দেখে সে দিন দুপুরে এমএসও সংস্থাগুলি নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসছে। বসছে অপারেটরদের কয়েকটি সংগঠনও। সন্ধ্যায় মহাকরণে সরকারের সঙ্গে এই সব সংগঠনের আলোচনায় বসার কথা আছে। তবে এত দিন এ নিয়ে কথাবার্তা বলছিলেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি সরকারি কাজে এখন লন্ডনে। তাঁর ফেরার কথা ২১ তারিখ। ফলে কেব্ল সম্প্রচারের বিষয়টি কে দেখবেন, তা শনিবার পর্যন্ত স্থির করে উঠতে পারেনি রাজ্য সরকার।
কলকাতা মেট্রো এলাকায় ১ নভেম্বর থেকে সেট টপ বক্স ছাড়া টেলিভিশন দেখা যাবে না, কেন্দ্রের এই নির্দেশের বিরোধিতা করেছিল রাজ্য প্রশাসন। সে সময় কেন্দ্রের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই আরও ১৫ দিন সময়সীমার মেয়াদ বৃদ্ধি করেছিল রাজ্য। বৃহস্পতিবার শেষ হয় সেই বর্ধিত সময়। সে দিনই নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম মহাকরণে জানিয়ে দিয়েছিলেন, এমএসও-গুলির আবেদন মেনে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করার
সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হল। তিনি এ কথাও জানিয়েছিলেন, আইনত সময়সীমা বাড়ানোর এক্তিয়ার
রাজ্যের নেই। তবু আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে, এই আশঙ্কার জেরে রাজ্য এমএসও-দের আবেদন মেনে নিয়েছে।
এর পরে এ বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের চিঠি পেয়ে এমএসও-গুলিও পড়েছে মহা ফ্যাসাদে। তাদের বক্তব্য, কেন্দ্র ও রাজ্যের বিরোধের মধ্যে পড়ে তাদের নাজেহাল হতে হচ্ছে। কলকাতার বিভিন্ন এমএসও-কর্তার বক্তব্য, “কয়েকটি সরকার অনুগত বাংলা চ্যানেল, দুটি এমএসও এবং অপারেটরদের একাংশ রাজ্য সরকারকে বুঝিয়ে কেন্দ্রীয় আইন লঙ্ঘনে উস্কানি দেয়। রাজ্য সরকারের চাপেই আমরা অ্যানালগ সিগন্যাল বন্ধ করিনি। এখন কেন্দ্র আমাদের লাইসেন্স বাতিল করে দিলে রাজ্য কি তা ফিরিয়ে দিতে পারবে?” বিষয়টি নিয়ে মহাকরণে এ দিন রাজ্যের তথ্যসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের কোনও
চিঠি তাঁরা পাননি। তবে তথ্য দফতরের এক সূত্র জানান, চিঠির কথা
প্রশাসন জানে। সরকারকে সেটি পাঠানো হয়নি বলে সরকারি ভাবে কোনও কথা না বলারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এ দিকে কলকাতা মেট্রো এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে কামারহাটি, সল্টলেক, বিডন স্ট্রিট, রাজাবাজার, মেটিয়াবুরুজ, হাওড়া-সহ নানা এলাকায় সেট টপ বক্স বিক্রি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোনও এমএসও-ই তাদের ডিজিটাল সংযোগের হিসাব এখনও রাজ্যকেও জানায়নি। |