মোহনবাগান ৩ (ডেনসন, ওডাফা, স্ট্যানলি)
সালগাওকর ০ |
শুরু করেছিলেন শূন্যতে। টিমকে চ্যাম্পিয়নের ট্র্যাকে দাঁড় করিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতিতে যখন ছেড়ে যাচ্ছেন কোচের চেয়ার, গ্যালারিতে জ্বলছে সবুজ-মেরুন রং- মশাল।
ও-ডা-ফা, ও-ডা-ফা চিৎকার নয়। অস্ট্রেলিয়ায় চোট সারাতে চলে যাওয়া টোলগে ওজবের জন্য কোনও হা-হুতাশ নয়। ম্যাচের সেরা রহিম নবির অসাধারণ পারফরম্যান্সকে বাহবা জানানোর পরও, শনিবারের ট্র্যাজিক নায়কের জন্য কুর্নিশ করল মোহন জনতা। সুব্রত ভট্টাচার্যের পর সাম্প্রতিক কালে কোনও বঙ্গসন্তান কোচকে এভাবে যুবভারতীর টানেল থেকে রাস্তা পর্যন্ত ভীমরুলের চাকের মতো ঘিরে ধরেছে এই জনতা? মনে পড়ছে না।
কী অসাধারণ মঞ্চ তৈরি করেই না করিম বেঞ্চারিফাকে চেয়ার ছেড়ে দিয়ে পর্দার আড়ালে চলে গেলেন পাইকপাড়ার মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়। আই লিগের ইতিহাসে এ রকম ঘটনা কখনও ঘটেনি। ব্যর্থতার তকমা নিয়ে কোচ-বিদায়ের এপিসোড দেখতে দেখতে অভ্যস্ত চোখে কেমন যেন লাগছিল।
ফেড কাপের গ্রুপ লিগ থেকে বিদায়। আই লিগের প্রথম দু’টো ম্যাচে জঘন্য হার। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত একটা দল। এই অবস্থায় দায়িত্ব নেওয়া। চারিদিকে ফিসফাস-সংশয়। ‘করিম নেই। কোথাকার কোন মৃদুল পারবে সামলাতে?’ তীব্র এই চাপ থেকে বেরিয়ে টানা চার ম্যাচ অপরাজিত। তিনটে জয়, একটা ড্র। দশ পয়েন্ট। তবুও তিনি নির্লিপ্ত। “ক্লাব যে আস্থা রেখেছিল তা পূরণ করছি। সমর্থকরা আনন্দ করছেন। করিমের সঙ্গে এর পর সহকারী থাকব। এ জন্য কোনও দুঃখ নেই। করিম না চাইলে তো এই দায়িত্বই পেতাম না,” কিছুটা অভিমানী, কিছুটা বাস্তবের জমিতে দাঁড়ানো মৃদুলের কন্ঠস্বর। |
কিন্তু কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় মোহনবাগানের এই উত্থান? কোন রসায়নে সালগাওকরের মতো টিমকে বিধ্বস্ত করলেন ওডাফা-নবিরা? চৌম্বকে অসংখ্য কারণ উঠে আসছে। তাতে ফুটবলারদের জেতার তাগিদ যদি এক নম্বর কারণ হয়, তা হলে দু’নম্বর অবশ্যই মৃদুলের অভিজ্ঞতা এবং মগজাস্ত্র। যা দেখে ওকোলি ওডাফার মতো নাক-উঁচু বিদেশিও বলে দিলেন, “আমার গোল আর জয় উৎসর্গ করছি কোচ মৃদুলকে। ও খুব ভাল কাজ করেছে।”
ডেভিড বুথের দলকে হারাতে কী করেছিলেন মৃদুল? বারবার সিডি দেখেছিলেন শ্যেন রুনি-রোকাশদের। তারপর তৈরি করেছিলেন ৪-১-৪-১ স্ট্র্যাটেজি। দুই স্টপারের সামনে ডেনসন। গোয়ার ক্লাবটির মাঝমাঠের সেরা পাসার কুইনটন জেকবকে ধরার জন্য। স্ট্যানলিকে বলে দেওয়া হয়েছিল, সালগাওকরের দুই স্টপারের মাঝে ঢুকে বারবার সমস্যা তৈরি করতে। দুই উইঙ্গার রহিম নবি-স্নেহাশিসকে ব্যবহার করা হল প্রয়োজন মত মাঠ ছোট-বড় করার জন্য।
এতে কী হল, সালগাওকর আক্রমণ শুষে নেওয়ার জন্য ফ্লানেল তৈরি হল। পাশাপাশি আক্রমণে ঝড় তোলারও সুযোগ এসে গেল। গোয়ার ক্লাবের ব্রিটিশ কোচ শনিবারের যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে মোহনবাগানের মাঝমাঠ দখলের অঙ্ক যখন বুঝলেন তার মধ্যেই হয়ে গেছে ২-০। দু’টো হেড ও দু’টো টাচে ডেনসনের গোল। এরপর ওডাফার বিপক্ষের রক্ষণকে দুমড়ে-মুচড়ে করা অসাধারণ গোলটা। যা দেখে গ্যালারির মতো ভিভিআই পি বক্সে পরিবার নিয়ে আসা তাঁর স্ত্রী অ্যাঞ্জেলও কোমর দোলালেন। গোলের মিনিট পাঁচেক আগেই মাঠে ঢুকেছিলেন ওডাফা-পত্নী। ‘লেডি লাক’ আর কী? নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার এ দিন টপকে যেতে পারতেন তাঁর ‘চিরশত্রু’ র্যান্টি মার্ন্টিন্সকে। কত গোল যে নষ্ট করলেন!
র্যান্টি তাতিয়েছেন স্বদেশীয় ওডাফাকে। নবিকে তাতাচ্ছেন কে? তাঁর অভিন্ন হৃদয় বন্ধু লাল-হলুদের মেহতাব হোসেন? পান্ডুয়ার সদা-উচ্ছ্বল সাধাসিধে নবি প্রশ্ন শুনে হাসেন। “আমিই আমাকে তাতাই। না জিতলে আমার কোনও দাম থাকবে বাজারে?” জাতীয় কোচ কোভারম্যান্সের উপস্থিতির জন্যই কী না জানি না, নিজের টি আর পি ঠিকঠাক রাখতে নেহরু কাপের ফর্মই দেখালেন নবি! কী আগুনে-মরিয়া মেজাজ। তাঁর এক-একটা দৌড় যেন, করণজিৎদের বুকে শক্তিশেল হয়ে বিঁধল। এরকম একটা দৌড় থেকেই বাগানের ৩-০। নিজে গোল করতে পারতেন। না করে বলটা বাড়ালেন স্ট্যানলিকে। পুরো ম্যাচে সালগাওকর পেল দু’টি সুযোগ। রুনি একবার পোস্টে লাগালেন বল।
রবিবার রাতে শহরে পা রাখছেন করিম বেঞ্চারিফা। নামার আগে মরোক্কান কিন্তু চ্যালেঞ্জের সামনে। তাঁকে আরও এক নতুন ‘যুদ্ধের’ সামনে শনিবার দাঁড় করিয়েছেন তাঁরই সহকারী হয়ে যাওয়া মৃদুল। পরের চার ম্যাচে করিম টপকাতে পারেন কি না মৃদুলকে সেটাই দেখার।
মোহনবাগান: শিল্টন, নির্মল, ইচে (মেহরাজ), আইবর, বিশ্বজিৎ (মণীশ), নবি, জুয়েল, ডেনসন, স্নেহাশিস, স্ট্যানলি, ওডাফা।
|