শহরের পথে যেখানে আলোর অভাব নেই, সেখানে ত্রিফলা নিয়ে এমন তাড়াহুড়ো কেন করতে গেল পুরসভা তদন্তে সেই প্রশ্নেরও
জবাব খুঁজবে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)।
এই আলো কেনার সময় কোনও অনিয়ম হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তাই শুধু ফাইলেই আটকে থাকবে না সিএজি-র তদন্তের পরিধি। বরং এক ধাপ এগিয়ে তারা বোঝার চেষ্টা করবে, সৌন্দর্যায়নের কাজে এমন কীসের তাড়া যে, দরপত্র চাওয়ার সময় হল না! এই কাজের প্রয়োজনে শহরে ঘুরে ত্রিফলা আলোর হাল হকিকৎও দেখবেন তাঁরা। সিএজি-র রাজ্য শাখা সূত্রের খবর, চলতি মাসেই অডিট শুরু হচ্ছে।
এর আগে সিএজি-র অডিটরদের হাতে ত্রিফলা সংক্রান্ত কাগজপত্র দিতে আপত্তি ছিল পুর কর্তৃপক্ষের। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় মনে করতেন, ত্রিফলার বরাতে অনিয়ম হয়েছে কি না, সে খতিয়ে দেখতে পুরসভার অভ্যন্তরীণ বা ইন্টারনাল অডিট-ই যথেষ্ট। কিন্তু সম্প্রতি মহাকরণ জানিয়ে দেয়, এই সংক্রান্ত কাগজপত্র সিএজি-র অডিটরদের দেখাতে হবে। সেই চাপের পরেই সিদ্ধান্ত বদলায় পুর প্রশাসন। সে কথা তারা সিএজি-কে জানিয়েও দিয়েছে।
সিএজি-র রাজ্য শাখার এক অফিসার বলেন, “কাগজপত্র তো আমরা দেখবই। তবে তার সঙ্গে বোঝার চেষ্টা করব, সৌন্দর্যায়নের কাজে পুরসভা এমন তাড়াহুড়ো করতে গেল কেন? কলকাতার রাস্তা তো অন্ধকারে ডুবে ছিল না। তা সত্ত্বেও এত তাড়া যে দরপত্র চাওয়ার রীতি মানা হল না!” অডিটের প্রয়োজনে তাঁদের প্রতিনিধিদল রাস্তায় ঘুরে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের হাল দেখবেন বলেও জানিয়েছেন ওই অফিসার।
কী দেখবেন অডিটরেরা? সিএজি সূত্রের খবর, বাতিস্তম্ভ পিছু দর কী ভাবে ঠিক হল, বাজার যাচাই করে তা নির্ধারণ করা হয়েছে কি না, কারা কারা কাজের বরাত পেয়েছেন এ সবই খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, কলকাতার সঙ্গে বিধাননগর পুরসভা এলাকায় বাতিস্তম্ভ বসাতে দরের যে তফাত, তার কারণও খতিয়ে দেখা হবে। সিএজি-র ওই অফিসার বলেন, “অভিযোগ উঠেছে, বিধাননগর পুরসভা একই বাতিস্তম্ভ কলকাতা পুরসভার থেকে কম দরে কিনেছে। যাচাই করা হবে সে সবও।” পুরসভা সূত্রের খবর, একটি ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ কেনার জন্য কলকাতা পুরসভা কমপক্ষে ১৭ হাজার ৬৯০ টাকা খরচ করেছে। ওই স্তম্ভই বিধাননগর পুরসভা কিনেছে সাড়ে ১১ হাজার টাকায়। সিএজি-র অফিসারেরা বোঝার চেষ্টা করবেন, কেন এই দামের ফারাক?
কলকাতার সৌন্দর্যায়নে প্রায় ২০ হাজার ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ লাগায় পুরসভা। অভিযোগ, প্রায় ৩০ কোটি টাকার এই কাজে দরপত্র ডাকা হয়নি। বদলে কাজটিকে পাঁচ লক্ষ টাকার কম অঙ্কে মোট ৬০০টি ফাইলে ভাগ করে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় শো-কজ করা হয় পুরসভার আলো বিভাগের ডিজিকে। শো-কজের জবাবে ওই অফিসার জানান, ওই আলো লাগানোর কাজে তাড়া থাকায় নিয়ম মেনে দরপত্র ডাকা যায়নি। এর পরই ডিজি পদ থেকে সরানো হয় তাঁকে।
সল্টলেকে সিএজি-র প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের অফিস সূত্রের খবর, রাজ্য জুড়ে বিষয়টি নিয়ে হইচই হওয়াতেই সিএজি এ নিয়ে অডিট করার সিদ্ধান্ত নেয়। এক অফিসার জানান, গত জুলাইয়ে ওই সংক্রান্ত ফাইলপত্র চেয়ে পুর প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। কোনও জবাব না আসায় ফের সেপ্টেম্বরে চিঠি দেওয়া হয়। তারও উত্তর মেলেনি। সিএজি-র এক অফিসার জানান, পুরসভা কাগজপত্র দিয়েছে কি না, তা নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয় দিল্লির অফিস থেকেও। |