বাজার রাস্তার পাশেই বসুক কিংবা নেটে। ক্রেতা শেক্সপিয়রের শাইলক-ই হোন বা মধ্যবিত্ত শ্যামল। পণ্য কেনা-বেচার মূল বৈশিষ্ট্য সব জমানাতেই এক। যেখানে তুলনায় একটু কম দামে পছন্দের জিনিস পেতে ‘বাড়তি মাইল হাঁটতে রাজি’ ক্রেতা। এক কথায় হাজির হতে তৈরি শপিং মলের ‘সস্তা ডিল’ কিংবা বাজারে ফাউ পাওয়ার ভিড়ে। আজকের নেট দুনিয়াতে এই তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন কমে পাওয়া ‘রিটানর্ড’ পণ্য। সামান্য কিছু দিনের পুরনো বা নামমাত্র খুঁত থাকা পণ্য ঘরে আনতে আপত্তি না-থাকলে, এই বাজার থেকে ‘প্রায় নতুন’ টিভি-ফ্রিজ-ল্যাপটপ অনেকটাই কম দামে কেনার সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি।
ভারতে এখন এই ‘রিটার্নড’ পণ্যের বাজারের মাপ ১,২০০-১,৫০০ কোটি ডলার (প্রায় ৬৫-৮১ হাজার কোটি টাকা)। সম্প্রতি মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষদের মধ্যে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম। সেখানে ৫৪% মানুষই জানিয়েছেন যে, কেনার সময় তাঁদের নজর থাকে সস্তার বাজারের দিকেই। আরও এক ধাপ এগিয়ে ৫% মানুষ জানিয়েছেন, তুলনায় কম দামে জিনিস পেতে ‘রিসাইকল্ড’ বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস কিনতেও বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা বোধ করবেন না তাঁরা। আর এই চাহিদাকে পুঁজি করেই বাজার ধরতে চাইছে গ্রিন ডাস্ট কিংবা কুপো নেশনের মতো সংস্থাগুলি।
ফেরত দেওয়া জিনিস কম দামে বিক্রির ব্যবসা করা গ্রিন ডাস্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং এমডি হিতেন্দ্র চতুর্বেদীর দাবি, টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি পণ্য কিনে বাড়ি আনার পর অন্তত ৫% ক্ষেত্রে তা ফেরত দেন ক্রেতারা। কোথাও বাহ্যিক খুঁত (যেমন টিভিতে স্ক্র্যাচ) থাকে। কোনও ক্ষেত্রে আবার সামান্য কিছু দিন ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে সেই পণ্য। সাধারণত ডিলাররা এগুলি ফেরত নেয় না। পাঠানো হয় সংস্থার কাছে। আর তখন সেই পণ্যই কিনে নেয় গ্রিন ডাস্ট। এর পর তা ফের বিক্রি করে তারা। ‘রিভার্স লজিস্টিক্স’ই এই ব্যবসার মূল মন্ত্র।
সংস্থার দাবি, বিক্রির সময় কোনও খুঁত বা ত্রুটি ক্রেতার কাছে লুকোনো হয় না। দেওয়া হয় যথাযথ ওয়ার্যান্টিও। ইতিমধ্যেই তাঁরা ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছেন বলে চতুর্বেদীর দাবি।
কিন্তু ক্রেতারা এই ধরনের জিনিস কিনছেন কেন?
গ্রিন ডাস্ট কর্তার মতে, দামী ল্যাপটপ কিংবা এলসিডি টিভি কেনার শখ থাকলেও, দামের কারণে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন অনেকে। এই বাজারে সেই শখ মেটানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। উপায় খোঁজেন সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণের। সংশ্লিষ্ট মহলেরও দাবি, সামান্য স্ক্র্যাচ থাকা এলসিডি টিভি এই বাজারে পাওয়া যেতে পারে বিপণির থেকে ৩০-৫০ শতাংশ কম দামে। ফলে, স্বাভাবিক ভাবেই তা ক্রেতাদের টানে।
তুলনায় কম দামে জিনিস কেনার এই ইচ্ছেকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসার ঘুটি সাজিয়েছে কুপো নেশনও। সংস্থার কর্তা চিরাগ রক্ষিতের দাবি, অনলাইন কেনাকাটাতেও সস্তার ‘ডিল’ খোঁজেন ক্রেতারা। সে ক্ষেত্রে নেটে সস্তায় বাজার সারতে তাঁদের কুপন ব্যবহারের চাহিদা বাড়ছে বলে চিরাগবাবুর দাবি।
সস্তায় জিনিস ঘরে আনার প্রবণতা অবশ্য নতুন নয়। বাজারে ফাউ পাওয়ার দিকে বরাবরই চোখ থাকে প্রায় সকলের। শপিং মলে ভিড় বাড়ে ‘ফ্রি’ কিংবা ‘ডিসকাউন্ট’ (ছাড়)-এর মরসুমে। এখন এই একই অভ্যেস ধরা পড়ছে দেশে দ্রুত বাড়তে থাকা নেট-বাজারের ক্রেতাদের মধ্যেও। এখন চড়া মূল্যবৃদ্ধি আর বিশ্বজোড়া মন্দার এই দুঃসময়ে আরও বেশি করে সস্তার পণ্যের খবর নিচ্ছেন তাঁরা। পকেটে কোপ পড়ায় খোঁজ নিচ্ছেন পুরনো পণ্যের। এমনকী পরোয়া করছেন না চোখে না-পড়ার মতো সামান্য খুঁতও।
বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত, আগামী দিনেও শ্যামলের মধ্যে শাইলক বেঁচে থাকবে বহাল তবিয়তে। তাই তার হাত ধরে এই নতুন ধরনের বাজারের রমরমা আরও বাড়বে বলেই তাঁদের ধারণা। |