পুস্তক পরিচয় ৩...
দুই বাংলার টিমওয়ার্ক
থাটা অনেক দিনই উঠেছিল, সেই রামমোহনের আমলেই। বাংলা ভাষার সুলুক-সন্ধান যে সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণ দিয়ে পুরোটা করা যাবে না তা গৌড়ীয় ব্যাকরণ (১৮৩৩) প্রণেতা বুঝতে পেরেছিলেন। উচ্চারণশুদ্ধি এবং লিপিশুদ্ধি প্রকরণ-এ রামমোহনের মন্তব্য, গৌড়ীয় ভাষাতে সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসারে অক্ষরের বিভাজন করা চলবে না। বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয়-তেও বাংলায় অব্যবহৃত বর্ণের কয়েকটি বাদ পড়েছিল। রামমোহন আর বিদ্যাসাগর যে কথা ভেবেছিলেন রবীন্দ্রনাথের লেখায় তা আরও স্পষ্ট। ‘বালক’ পত্রিকায় (আশ্বিন, কার্তিক ১২৯২) প্রকাশিত ‘বাংলা উচ্চারণ’ নামের লেখার শেষে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য ‘বাংলা ব্যাকরণের অভাব আছে, ইহা পূরণ করিবার জন্য ভাষাতত্ত্বানুরাগী লোকের যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত।’ বাংলা ব্যাকরণ অন্য ভাষার ব্যাকরণের থেকে নিজের মতো করে আলাদা এই জরুরি বোধ যাতে ছোটবেলাতেই মাথায় ঢুকে যায়, তার জন্যই বোধহয় ‘বালক’-এর পাতায় রবিকবির ভাষাচর্চা। একই কথা রবীন্দ্রনাথ অন্যত্র নানা সূত্রে অনেক বার উত্থাপন করেছিলেন, কিন্তু বড়ো মাপে বাংলা ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণ লেখার দায়িত্ব গ্রহণ বড়ো সহজ কাজ নয়। বাংলা ভাষার সাত-সতেরো নিয়ে ছোটোদের জন্য স্বাধীনতার পর অনেকেই কলম ধরেছিলেন। শঙ্খ ঘোষের শব্দ নিয়ে খেলা, কথা নিয়ে খেলা, পবিত্র সরকারের বাংলা বলো-র মতো বই বাঙালি ছেলেমেয়েরা বাংলা ভাষার মর্জি বোঝার জন্য চেটেপুটে খেত। আর পবিত্রবাবুর পকেট বাংলা ব্যাকরণ আকারে ছোটো, গুরুত্বে নয়। বাংলা ব্যাকরণের নিজস্ব কাঠামো কী হতে পারে তার একটা মডেল সেখানে ছিল। জ্যোতিভূষণ চাকী লিখেছিলেন বাংলা ভাষার ব্যাকরণ। আনন্দবাজার পত্রিকা ব্যবহারবিধি গ্রন্থমালার অন্তর্গত সে বই। তবু বাংলা ব্যাকরণ লেখার জন্য পূর্ণাঙ্গ বৃহত্তর প্রয়াস যে দরকার তা টের পাওয়া যাচ্ছিল— কাজটা কঠিন, একা করাও মুশকিল।
সেই কাজ অনেকটাই আসান হল প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (বাংলা একাডেমী, ঢাকা) বইটিতে। দুখণ্ডের এই বই নির্মাণে হাত লাগিয়েছেন দুই বাংলার ভাষা বিশেষজ্ঞরা। উপদেষ্টা আনিসুজ্জামান, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, পবিত্র সরকার। বাংলা কেবল পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির ভাষা নয়, তা ওপারের বাঙালির রাষ্ট্রভাষা। দুই বাঙালির এই টিমওয়ার্ক তাই খুব জরুরি ছিল। বইয়ে নানা জন নানা এন্ট্রি লিখেছেন। ধ্বনিবিজ্ঞান, ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব, বাগর্থতত্ত্ব নিয়ে যেমন আলোচনা আছে তেমনই দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে ভাষা, লিপি, উপভাষা, সমাজভাষা, ভাষা-পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা। যিনিই লিখুন না কেন তা সুখপাঠ্য, বোঝা যায় দুই সম্পাদক ব্যাকরণ বইটি যাতে পড়তে ভালো লাগে সে বিষয়ে মনোযোগী ছিলেন। উদাহরণ যাতে টাটকা হয়, দুই বাংলার ইতিহাস, ভূগোল, সমাজ যাতে তাতে ধরা পড়ে সেদিকে নজর দিয়েছেন। হাওড়ার সঙ্গে ঢাকার ধানমন্ডি, রবিশংকরের সঙ্গে করিম সাহেব মিলেমিশে একাকার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.