|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
দত্ত Vs ইন্ডাস্ট্রি |
বাংলা ছবিতে আর কেউ বাজার করতে যায় না। সবাই কফি খায় রাতে। সন্ধ্যা হলেই ওয়াইন।
ভাই, হল কী আমাদের? উত্তেজিত অঞ্জন দত্ত। পার্ক স্ট্রিটে সঙ্গে ইন্দ্রনীল রায় |
পত্রিকা: লাস্ট যখন আপনার ইন্টারভিউ করেছিলাম সেটা ছিল দার্জিলিংয়ের ‘গ্লেনারিজ’-এ। এ বার আপনার সঙ্গে ‘ফ্লুরিজ’-এ ব্রেকফাস্ট...
অঞ্জন: দুটোই আমার খুব প্রিয় জায়গা। এই জায়গাগুলোতে এত স্মৃতি আছে আমার...তাই এখানেই আড্ডা মারতে ভাল লাগে।
পত্রিকা: তাহলে বলুন, অঞ্জন দত্ত এই মুহূর্তে কেমন আছেন?
অঞ্জন: বয়েস বেড়েছে, সেটার সঙ্গেই অ্যাডজাস্ট করার চেষ্টা করছে অঞ্জন দত্ত। বুঝতে পারছি সময় কমে আসছে। বয়েস হলে অনেকের মধ্যেই একটা প্রবণতা দেখি নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার। আমার ক্ষেত্রে উল্টো হচ্ছে। বুঝতেই পারছি আমি একটা দর্শককুল পেয়েছি যারা মাল্টিপ্লেক্সে ছবি দেখে। কলেজ ক্যাম্পাসে আজও আমার ছবি নিয়ে ইন্টারেস্ট দেখায় ছাত্র-ছাত্রীরা। এটা আমার জীবনের অসাধারণ একটা সময়।
পত্রিকা: আপনি কি বড্ড তাড়াহুড়ো করে ছবি বানাচ্ছেন?
অঞ্জন: বেশি ছবি করছি কারণ বেশি প্রযোজক আসছে ...
পত্রিকা: সেটা কি ‘ব্যোমকেশ’-এর পর থেকে?
অঞ্জন: না। পরিস্থিতিটা বদলেছে ‘রঞ্জনা...’র পর থেকেই। লোকে বুঝেছে অঞ্জন দত্ত ভাল গল্প বলতে পারে। তারা তো আমার থেকে আশা করে না যে, দেব কী জিতের গানের দৃশ্যের শ্যুটিং করাব সুইৎজারল্যান্ডে। তারা আমার কাছে ভাল গল্প আশা করে, যেটা আজকাল বাংলা ছবিতে কমে আসছে। বড্ড বেশি লোকজন এখন না বুঝে পরিচালনায় চলে এসেছে।
পত্রিকা: সেটা নিয়ে আপনার আপত্তি?
অঞ্জন: অবশ্যই। এদের হাতে ক্যানন ফাইভ ডি ক্যামেরা রয়েছে শুধু। ব্যস। পরিচালক হওয়াটা এখন ফ্যাশন স্টেটমেন্ট।
পত্রিকা: আপনি কারও নাম নেবেন?
অঞ্জন: নেব। এই বয়সে ডিপ্লোম্যাট হয়ে কী লাভ? আর আমি যদি সমালোচনা নিতে রাজি থাকি তাহলে আমার সমালোচনা করার অধিকারও আছে। যারা পরিচালক হতে আসছে, তাদের না আছে টেকনোলজিক্যাল প্রস্তুতি, না মানসিক প্রস্তুতি। আর গল্প এক। সেই সম্পর্কের। |
|
পত্রিকা: সব সিনেমাই তো সম্পর্কের গল্প...
অঞ্জন: সিনেমায় তো সম্পর্ক থাকবেই। কিন্তু আমার সিনেমাতে শুধু স্বামী-স্ত্রী আর পরকীয়াএই একটা সম্পর্ক নিয়ে কচকচানি নেই। কী একঘেয়ে ব্যাপার! তিনটে মানুষ শুধু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ‘প্রেম কী’ ‘প্রেম করা কি ঠিক হবে’ বলে বলে লম্বা বক্তৃতা দিচ্ছে। বেশির ভাগ পরিচালক কিন্তু এটা থেকে বেরোতে পারছে না। সেটা মৈনাকই হোক অথবা অনিরুদ্ধ (টোনি)...
পত্রিকা: কিন্তু...
অঞ্জন: দাঁড়ান, দাঁড়ান। শুধু তাই নয়। এদের ছবিতে আমি শুধু সিন্থেটিক ইমোশন দেখতে পাই। ভাই আমিও বাড়িতে রিসোত্তো খাই, স্কচ খাই। কিন্তু তার মধ্যেই কাজের লোক ঢোকে ঘর ঝাড়ু দিতে। তার মধ্যেই ছন্দা এসে বলে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের জন্য বিয়ের গিফট কিনতে হবে, তার মধ্যেই পাড়ার লোক চাঁদা চাইতে আসে। সেগুলো আমি আর বাংলা ছবিতে দেখি না। বাংলা ছবিতে আর কাজের লোক দেখি না। বাংলা ছবিতে কেউ বাজার করতে যায় না। সবাই ছবি তোলে, সবাই কফি খায় রাতে। সবার বাড়িতে বড় বড় সিনেমার পোস্টার থাকে। সন্ধ্যা হলেই ওয়াইন। ভাই, হল কী আমাদের? শুধু একটা কনজিউমারিস্ট, কমফর্টেবল লাইফ দেখানোটাই কি সিনেমা নাকি?
পত্রিকা: আপনি কি টোনির ছবির কথা বলছেন...
অঞ্জন: টোনি তো ওরকম ছবিই করে থাকে। ও আমার সঙ্গে থিয়েটার করত। তখন ও পশ্চিম পুঁটিয়ারিতে থাকে। সেই পশ্চিম পুঁটিয়ারিটা ওর ছবিতে আমি দেখি না। শুধু ওর সাউথ সিটির ফ্ল্যাটের বড়লোকের আমদানি করা একটা জীবন দেখতে পাই। আরেকটা জিনিস বাংলা ছবিতে সবাই মিডিয়া, না হয় বিজ্ঞাপনে কাজ করে। অফিস দেখাতে হলে একটা ল্যাপটপ যেন দেখাতেই হবে। আরে ল্যাপটপ তো বুঝলাম, কিন্তু মানুষগুলো কাজ কী করে? প্রতিমও তাই বানাচ্ছে। অগ্নিদেবও।
পত্রিকা: শুনছি, অপর্ণা সেন আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড এখন?
অঞ্জন: অপর্ণা সেন আমার সব চেয়ে প্রিয় পরিচালক। বেস্ট ফ্রেন্ড কি না জানি না কিন্তু অপর্ণা সেনের সঙ্গে সব রকম আলোচনা হয়। ঝগড়াও হয় প্রচুর। সেই ঝগড়া তো আমার কৌশিক (গঙ্গোপাধ্যায়)-এর সঙ্গেও হয়। তবু ও এখনও আমার ফোন তোলে। তবে কৌশিকের ছবি আমার ভাল লাগে না। ও বড্ড তাড়াহুড়ো করে ছবি করে। তবে কলকাতার মধ্যবিত্ত জীবন, তার সুখদুঃখ, সেনসিবিলিটিও ভীষণ ভাল বোঝে। সেগুলো দারুণ বলতেও পারে। ওর সেই রকম ছবি করা উচিত। তা না করে ও ‘ব্রেকফেল’, ‘জ্যাকপট’ বানাচ্ছে।
পত্রিকা: আর ঋতুপর্ণ ঘোষ?
অঞ্জন: জানি না ঋতু এটা পড়ে কী ভাববে! কিন্তু ও তো সেই রবীন্দ্রনাথ আর সমকামিতাতেই আটকে পড়েছে। ওর আগের ছবিগুলো, ‘উনিশে এপ্রিল’ থেকে ‘বাড়িওয়ালি’ এই ক্যানভাসটা কিন্তু বিরাট ছিল। বাট সামহাউ হি হ্যাজ রেস্ট্রিকটেড হিমসেল্ফ। কিন্তু ওর সিনেমার মাথাটা পরিষ্কার। যখন ওকে আমি আমার পরের ছবি ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’-র স্ক্রিপ্ট শুনিয়েছিলাম ও আমাকে কতগুলো পরামর্শ দিয়েছিল যেগুলো ব্রিলিয়ান্ট।
পত্রিকা: কলকাতায় অভিনেতাদের একটা গ্রুপ আছে যাঁদের উপরে আপনার প্রভাব অনেকটা। পরম, রুদ্র। এ ছাড়া পরিচালকরাও আছেন...
অঞ্জন: হ্যাঁ, পরিচালকরা তো আছেনই। টোনি, মৈনাক, সৃজিত সবাই তো আমার অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর ছিল।
পত্রিকা: এত লোকের জীবনে আপনার ইনফ্লুয়েন্স, এটা ভেবে নিশ্চয়ই ভাল লাগে?
অঞ্জন: হ্যাঁ, ভাল লাগে। কিন্তু পরম আর রুদ্রর কাছ থেকে আমার আশা অনেক বেশি। রুদ্র একটা ছবি পরিচালনা করছে, আমার ভীষণ ভাল লেগেছে চিত্রনাট্যটা। সেটা আমি করছি। পরমের ‘জিও কাকা’ অবশ্য আমার একেবারেই ভাল লাগেনি। তবে গল্পের ভাবনাটা খুব ইন্টারেস্টিং ছিল। মৈনাকের সব ছবিই এক লাগছে। বিরসা ট্যালেন্টেড, কিন্তু ওকেও সুপারফিশিয়াল মনে হয়। এ সব পড়লে জানি শনিবার সকালে সবাই বলবে ‘পত্রিকা’তে ইন্টারভিউ দেওয়ার চান্স পেয়েছে, তাই মন খুলে গালাগাল করল অঞ্জন দত্ত। তা কিন্তু নয়। যা ভাবি তা মন থেকেই বললাম।
পত্রিকা: এই কথা তো মাস তিনেক আগে প্রসেনজিৎও বলেছিলেন।
অঞ্জন: আমি ওঁর সঙ্গে একশো ভাগ একমত। জানি না কেন ‘বিক্রম সিংহ’ করতে গেল ও। কিন্তু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষমতা আছে, যা হচ্ছে সেটাকে ভুল বলে মুখ ঘোরানোর। প্রযোজক কী পরিচালকদের সঠিক পথ দেখানো, ওর থেকে ভাল কেউ করতে পারে না।
পত্রিকা: আপনাকে সবাই অসাধারণ অভিনেতা বলে। ইন্ডাস্ট্রি কি সঠিক ভাবে আপনাকে ব্যবহার করল?
অঞ্জন: অভিনেতা অঞ্জনকে আরও ভাল করে ব্যবহার করতে পারত।
পত্রিকা: আপনার লাভ লাইফ নিয়েও কিন্তু কৌতূহলের শেষ নেই।
অঞ্জন: তাই?
পত্রিকা: হ্যাঁ। শুনি তো এক সময় মুনমুন সেন আর রূপা গঙ্গোপাধ্যায় আপনার প্রেমে পড়েছিলেন।
অঞ্জন: মুনমুন আর রূপা দু’জনেই কিন্তু আমার আর আমার স্ত্রীর খুব ভাল বন্ধু। তবে প্রেমে পড়েছিল কিনা আমি বলতে পারব না। কিন্তু আজকে মুনমুনের সঙ্গে আমি আর ছন্দা সব গল্প করতে পারি।
পত্রিকা: মুনমুন সেন সম্বন্ধে অঞ্জন দত্তের অ্যাসেসমেন্ট কী?
অঞ্জন: এই ইন্ডাস্ট্রির অসম্ভব সুন্দরী এক নির্লজ্জ অভিনেত্রী যাকে ইন্ডাস্ট্রি ব্যবহারই করতে পারল না।
পত্রিকা: আর রূপা?
অঞ্জন: রূপা আমাকে গাড়ি চালাতে শিখিয়েছিল। ‘যুগান্ত’-র সেটে রীনাদির খুব ইচ্ছে ছিল আমার আর ওর মধ্যে কিছু একটা হোক। প্রায়ই আমাকে ঠেলে দিত রূপার দিকে। কিছু অবশ্য হয়নি।
পত্রিকা: ব্যস, এই দু’জনই ছিল?
অঞ্জন: চূর্ণী ছিল। একসময় সবাই বলত চূর্ণীর সঙ্গে আমার প্রেম। মম (মমতাশঙ্কর) ছিল। কী বলুন তো, আমি না খুব অল্প বয়েসে অনেক প্রেম করেছি। প্রচুর সেক্সুয়াল সম্পর্কও হয়েছে। তার পর যখন সিনেমায় এলাম, তখন অনেক নারীর সঙ্গেই বন্ধুত্ব হল। কিন্তু প্রেম বা শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। দ্যাট ডিড নট ইন্টারেস্ট মি। যাদের সঙ্গে সবাই ভেবেছে আমার সম্পর্ক, তারা আমার ভীষণ ভাল বন্ধু। এদের সঙ্গে সব বিষয়ে আড্ডা মারতে ভাল লাগে। আমার ইউনিটেরও অনেকে অবশ্য ভাবত, আমার সঙ্গে বোধহয় মুনমুন কী চূর্ণীর প্রেম। কিন্তু তাতে কী? আর এত বন্ধুর মধ্যে ছন্দাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
পত্রিকা: আপনার বিরুদ্ধে কিন্তু অনেকের অনেক ক্ষোভও আছে।
অঞ্জন: তাই। কী কী? শুনি...
পত্রিকা: লোকে বলে অঞ্জন দত্ত রিলিজের আগে যখন কোনও ছবির প্রশংসা করেন, তখন ধরেই নেওয়া যেতে পারে আপনি সেই ছবি দেখে বুঝে গিয়েছেন ছবিটা চলার নয়।
অঞ্জন: একদম মিথ্যে কথা। এটা সাংঘাতিক অভিযোগ। কিন্তু ঠিক নয়।
পত্রিকা: শোনা যায় অঞ্জন দত্ত মুখে একটা কথা বলেন, করেন আরেকটা। দরকার পড়লে আপনি পায়ে পড়তে পারেন, না দরকার পড়লে চেনা লোককে দেখেও অনায়াসে মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারেন?
অঞ্জন: (হেসে) লোকের আমাকে নিয়ে এত ভুল ধারণা আছে? আমি সব সময় যা বলি, মন থেকে বলি। আমি অপর্ণা সেনকে বলতে পারি, আমার ‘ইতি মৃণালিনী’ ভাল লাগেনি। কত জন সেটা পারে?
পত্রিকা: প্রতিমের ‘পাঁচ অধ্যায়’ ছবিতে একটা ডায়লগ আছে,“ভাবার সময় বেলা টার, বানানোর সময় বেনিয়াপুকুর”। এটা কি ওর আপনার প্রতি কটাক্ষ?
অঞ্জন: আমার তো মনে হয়েছিল এটা সৃজিতের প্রতি প্রতিমের কটাক্ষ। ইন্টেলেকচুয়ালদের প্রতিও হতে পারে। যারা আঁতেল ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু আসলে ডেপ্থ নেই।
পত্রিকা: আপনার বিরুদ্ধে আর একটা অভিযোগ। আপনারই প্রযোজক রানা সরকার বলেছিলেন যে শ্যুটিং শেষ হয়ে গেলেই আপনি নাকি ছবি নিয়ে মাথা ঘামান না। তার পরে পোস্ট-প্রোডাকশনে কী হবে, ছবি চলল কি চলল না এসব নিয়ে অঞ্জনদার কোনও মাথাব্যথা নেই।
অঞ্জন: এটা রানা সম্পূর্ণ ভুল কথা বলেছে। ভাই, রানাকে অরিজিৎ দত্তের কাছে কে নিয়ে গেল, আইনক্সের পঙ্কজের সঙ্গে কে আলাপ করাল? ‘সারেগামা’র করিমের সঙ্গে মিটিংটাই বা কে করাল?
পত্রিকা: পাঁচ নম্বর অভিযোগ। হঠাৎ করে আপনি ‘ব্যোমকেশ বক্সী’-র প্রযোজক কৌস্তুভ রায়ের সঙ্গে ভাব করলেন, কারণ আপনার পরের ছবি ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’ রিলিজ করছে। ‘আবার ব্যোমকেশ’-এর পোস্টারের ওপর যেমন পোস্টার লাগানো হয়েছিল, ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’-র ক্ষেত্রে সেইরকম হোক, চাননি আপনি।
অঞ্জন: না না, তাই জন্য আমি মোটেও ভাব করিনি কৌস্তুভের সঙ্গে। আমার মনে হয় না ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’র রিলিজের সময় কৌস্তুভ পোস্টার মারবে। কৌস্তুভের আমার ওপর রাগ করার কারণ, আমি কেন ওঁকে ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে ‘ব্যোমকেশ’ করলাম। আসলে আমি এমন ভাবে রানা বা কৌস্তুভের সঙ্গে মিশি যে ওরা ভাবে যে ওরা আমায় পজেজ করছে। সেটা কি সম্ভব নাকি? কিন্তু কৌস্তুভের কথাবার্তা শুনে আমার খারাপ লেগেছিল। আই অ্যাম স্টিল হার্ট।
পত্রিকা: কিন্তু কৌস্তুভ আপনার সম্বন্ধে ‘পত্রিকা’য় যা বলেছিল, তার পর তার সঙ্গে ভাব দেখে তো লোকে আপনাকেই সুবিধেবাদী বলছে।
অঞ্জন: আমার মনে হয় না। আমাদের ঝগড়াটা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল সেটা আমাদের কারও পক্ষেই ঠিক নয়। ‘আবার ব্যোমকেশ’-এর পোস্টারের ওপর ‘ব্যোমকেশ বক্সী’র পোস্টার মারা হয়েছে দেখে আমি একজন মস্ত বড় রাজনীতিককে ফোন করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তার পর পাঁচ মিনিটে সমস্যা মিটে যায়।
পত্রিকা: কে সেই রাজনীতিক?
অঞ্জন: রাইটার্সে বসা খুব গুরুত্বপূর্ণ এক জন, এইটুকু বলতেই পারি।
পত্রিকা: শোনা যাচ্ছে ঋতুপর্ণ ঘোষও ব্যোমকেশ করতে ইচ্ছুক।
অঞ্জন: তাই, কে বলল?
পত্রিকা: শুনলাম। আবির আর শাশ্বতই নাকি ব্যোমকেশ আর অজিতের চরিত্রে অভিনয় করবেন...
অঞ্জন: দু’জনের কেউই করতে পারবে না। আমার সঙ্গে ওদের কনট্র্যাক্ট আছে।
পত্রিকা: শোনা যাচ্ছে, টেলিভিশনের জন্য আপনি কাকাবাবু বানাচ্ছেন?
অঞ্জন: আমাকে একটা চ্যানেল অ্যাপ্রোচ করেছে ‘বারো মাসে তেরো গোয়েন্দা’ বলে একটা সিরিজ করতে। তাতে ব্যোমকেশও থাকবে, কাকাবাবুও থাকবে। এটা আমি প্রোডিউস করব।
পত্রিকা: কিন্তু যে মুহূর্তে সৃজিত বড় পর্দায় ‘কাকাবাবু’ বানাতে চলেছেন, সেই সময় আপনার এই সিরিয়াল করাটা অনেকেই অন্য চোখে দেখছে।
অঞ্জন: কিন্তু সৃজিত তো টিভির জন্য ‘কাকাবাবু’ ডিরেক্ট করছে না। আমার মনে হয় না এর মধ্যে ‘স্টোরি’ আছে।
পত্রিকা: এ বার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড প্রসঙ্গে আসি। অনেকেরই আপত্তি আছে ‘রঞ্জনা’র জন্য নীল দত্তের ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পাওয়া নিয়ে।
অঞ্জন: কেন?
পত্রিকা: তাঁদের বক্তব্য, ‘রঞ্জনা’-তে রবীন্দ্রনাথের গান আছে,কবীর সুমনের আছে, আপনার গান আছে। তাহলে সেরা সঙ্গীতের জন্য জাতীয় পুরস্কার কী করে নীল পান? এটা কি রানা সরকারের লবিংয়ের জোরেই হল?
অঞ্জন: আমাকে কী সব প্রশ্ন করছেন আপনি? দেখুন, সঙ্গীত পরিচালনার থেকেও অনেক বেশি কঠিন কাজ অত গানের মধ্যে কোন গান বাছাই করা হবে। নীল শুধু সঠিক বাছাই করেনি, সেগুলোকে রি-অ্যারেঞ্জও করেছে। ওর ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পাওয়াটা প্রাপ্য।
পত্রিকা: নীল বিয়ে কবে করছে?
অঞ্জন: (হেসে) এখন তো বলছে করবেই না। কিন্তু ওর প্রচুর গার্লফ্রেন্ড। সেই গার্লফ্রেন্ডদের মেনটেন করার জন্যই বোধহয় নীল বিয়ে করছে না।
পত্রিকা: সবাই বলে নীলের সবচেয়ে বড় শত্রু আপনি। যে মেয়েদের নীলের পছন্দ হয় তারা আপনাকে দেখার পর নীলকে ছেড়ে আপনারই প্রেমে পড়ে যায়...
অঞ্জন: ধুর ধুর! আগে সবাই অঞ্জনদা বলত এখন সবাই জেঠু জেঠু বলে।
পত্রিকা: আপনার ছেলে হওয়ার জন্য নীলকে কি মাঝে-মধ্যেই তার খেসারত দিতে হয়?
অঞ্জন: অবশ্যই, খেসারত দিতে হয়। নীল আমার থেকে অনেক বেশি গান শোনে। আমি তো এলভিস, বিটলস্, বব ডিলান ব্যস। সলিল চৌধুরী হোক কী ও পি নায়ার নীলের গান শোনার রেঞ্জটাই অনেক বড়। তবে নীল কিন্তু অনেক সস্তায় অন্যের ছবিতে কাজ করে। আমার ছবির সময়ই ও পারিশ্রমিকটা বাড়িয়ে দেয়।
|
|
পত্রিকা: এখানেই পরের অভিযোগ। আপনার ছবিতে টাকা বাড়িয়ে দিলে টাকা তো সেই এক বাড়িতেই ঢুকছে।
অঞ্জন: শুনুন...
পত্রিকা: অভিযোগটা সেটা নয়। অনেকে বলে আপনার ছবি হলে পরিচালক হিসেবে আপনাকে একটা পারিশ্রমিক দিতে হয়, নীলকে সঙ্গীত পরিচালনার জন্য টাকা দিতে হয়। আপনার স্ত্রী ছন্দা দত্তকেও কস্টিউমের জন্য টাকা দিতে হয় । আর তা ছাড়া, প্রোডাকশন ম্যানেজার সঞ্জয় পাঠকও আপনার নিজের। অনেকে বলেন, অঞ্জন দত্তকে ডিরেক্টর নিলে এইভাবেই টাকা ‘সাইফনড’ হয়ে যায়।
অঞ্জন: শুনুন, ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়, অর্ঘ্যকমল মিত্র, নীল দত্ত, সঞ্জয় পাঠক আমার টিম। এঁদের ছাড়া আমি কোনও ছবি করব না। আরে, মৃণাল সেনের নিজের টিম ছিল। ঋতুপর্ণ ঘোষ তো এক সময় অভীক, দেবজ্যোতি, অর্ঘ্যকমল কী ওর ভাই চিঙ্কুর সঙ্গেই কাজ করত। তার মানে কি ঋতুও টাকা ‘সাইফন’ করত নাকি? সত্যজিৎ রায় একটার পর একটা ছবি বানিয়েছেন সুব্রত মিত্র, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, সৌমিত্রর সঙ্গে। ওঁর প্রোডাকশন ম্যানেজারও এক ছিল সব ছবিতে। সন্দীপ রায়ও নিজের টিম ছাড়া কাজ করেন না। বার্গম্যান, গোদাররাও তাই। এরা সবাই কি টাকা মেরেছে নাকি?
পত্রিকা: বোঝা গেল। আপনি কি জানেন ফিল্ম রিলিজের পর লোকজনকে করা আপনার ফোন কল নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়? আপনি নাকি সেই ফিল্ম নিয়ে বিস্তর নিন্দে করেন।
অঞ্জন: একেবারেই নয়। একদম নিজের ওপিনিয়নটা দিই আমি। আমার মহান হওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই। আর যাঁদের ছবি আমার ভাল লাগে না, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক কী করে ঠিক করতে হয় সেটাও আমি খুব ভাল করে জানি।
পত্রিকা: এত জনের কথা বললেন সৃজিত সম্বন্ধে কিছু বললেন না তো।
অঞ্জন: আমার ‘অটোগ্রাফ’ ভাল লাগেনি। ও সেটা জানে। ও আশা করে আমি পরিচালক হিসেবে ওকে আরও বেশি প্রশংসা করব। কিন্তু আমি ওকে নিয়ে খুব গর্বিত। চাকরি ছেড়ে, ব্যক্তিগত জীবন জলাঞ্জলি দিয়ে যে ভাবে ও ইন্ডাস্ট্রির মুখ ঘোরাতে পেরেছে সেটা আমি সেলিউট করি। কেন যে লোকে তাও বলে ও অসৎ পথে চুরি করে ছবি করে, কে জানে?
পত্রিকা: কেন বলে বলুন তো?
অঞ্জন: জানি না। সেই প্রতিমের স্ক্রিপ্ট থেকে এই ঝামেলাটা চলছে।
পত্রিকা: ‘ম্যাডলি বাঙালি’র সেটে প্রতিম নাকি আপনাকে গল্পটা বলে। তা থেকে স্টোরিটা লিক হয়।
অঞ্জন: আমার তো জানা নেই।
পত্রিকা: অনেকে বলে এত ঝামেলার জন্য আপনি প্রথমে হ্যাঁ বলেও, পরে ‘২২শে শ্রাবণ’ করেননি।
অঞ্জন:একেবারেই নয়। সৃজিত যখন প্রথম গল্পটা শোনায়, আমি সৃজিত আর শ্রীকান্তকে বলেছিলাম আমি চুক্তি করতে চাই। চুক্তিটা হবে আমার যে সব সিন ওকে হয়েছে, কোনও মতে সেগুলো বাদ দেওয়া যাবে না। তার কারণ এই ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মতো কমার্শিয়াল স্টার অভিনয় করছেন বলে। এত বড় স্টার কাজ করলে অনেক সময় চরিত্রাভিনেতাদের সিন ফেলে দেওয়া হয়, স্টারের সিন রেখে দেওয়ার জন্য।
পত্রিকা: আপনি প্রসেনজিতের কাছে হারতে চাননি?
অঞ্জন: হ্যাঁ। কারণ আমি প্রসেনজিতের থেকে খারাপ অভিনেতা তো নই। অভিনয়ে আমি ওর থেকে কোথাও কম যাই না।
পত্রিকা: তার পর?
অঞ্জন: তার পর তো কেউ রাজি হয়নি। একটা ফাইনাল স্ক্রিপ্ট রিডিং হয়েছিল । সেখানেই সৃজিত বলে যে ও শেষটা বদলে দিয়েছে। আগে ঠিক ছিল নিবারণ খুনি, আর তাকে ধরবে প্রবীর। এটা শুনেই আমি রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু সেদিনের স্ক্রিপ্ট রিডিং-এ শুনলাম অন্য কিছু। সেদিন বুম্বা ছিল, আবির ছিল, রাইমা ছিল, পরম ছিল, আমিও ছিলাম। সেখানেই প্রথম বার সৃজিত বলে খুনি নিবারণ নয়, আসলে খুনি প্রবীর। এটা শুনে তো আমরা সবাই স্তম্ভিত হয়ে যাই। পরম তো কথাই বলতে পারছিল না। আবির আমায় চুপিচুপি বলেছিল, অঞ্জনদা, আমার তো কোনও রোলই নেই। তখনই বুম্বা শোনে যে ও খুনি।
পত্রিকা: তাই নাকি?
অঞ্জন: সৃজিতের লজিক ছিল ‘কুহেলি’-র সময় তরুণ মজুমদার নাকি ক্লাইম্যাক্স শ্যুটের আগে বিশ্বজিৎকে বলেইনি যে বিশ্বজিৎ খুনি। আমি ওসব শুনে ওকে বলি, তরুণবাবু কী করেছেন, আমার জানার দরকার নেই। আমি প্রধান ভিলেন বলে ছবিটা করতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু এ তো দেখছি জাস্ট একজন কনভিক্ট। আমার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। আমাকে হয় ভিলেনের রোল দাও, নয় হিরোর। আমাকে ব্যোমকেশ দাও বা ভুজঙ্গ ডাক্তার। কিংবা ব্যাটম্যান বা জোকার।
পত্রিকা: এত অনেস্টলি আপনি কথা বলছেন। ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’ শোনা যাচ্ছে আপনার আত্মজীবনী। সেখানেও কি আপনি এতটাই সৎ?
অঞ্জন: ছবিতে ৬৫-৭০ পার্সেন্ট সৎ।
পত্রিকা: এই ছবিতে তো আপনি আপনার বাবার চরিত্রে?
অঞ্জন: হ্যাঁ, আমার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছি। অনেকটাই বলে দিয়েছি আমি ছবিতে। বাবা চেয়েছিলেন আমি ব্যারিস্টার হব। বাবা ক্লাস ইলেভেনে আমার দার্জিলিংয়ের স্কুলের মাইনে দিতে পারেননি বলে আমায় কলকাতা চলে আসতে হয়েছিল। বাবার একজন প্রেমিকা ছিল, আমার দিদি একজন উগ্রপন্থীর সঙ্গে প্রেম করে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল সব আমি ছবিতে বলেছি। আমার দিদির চরিত্রে অভিনয় করেছে অর্পিতা, বাবার প্রেমিকার চরিত্রে রূপা।
পত্রিকা: বাবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কি খারাপ ছিল?
অঞ্জন: হ্যাঁ, আই হেটেড মাই ফাদার। বাবার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছিল শুধু তাঁর মৃত্যুর কিছু আগে। বাবার তখন সিরোসিস অব লিভার হয়েছে। উইথড্রল সিম্পটম চলছে। প্রথমে চা খেলে আমাদের চিনতেন, তার পর এল কফি, তার পর কোকাকোলা। শেষে কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না। তখন হসপিটালে কি বাড়িতে লুকিয়ে আমি এক ছিপি করে রাম খাইয়ে দিতাম বাবাকে। সেটা খেলেই বাবা নরমাল হয়ে যেতেন। তখন আমার সঙ্গে বাবার কথা হত। সেই সময়ই বাবার সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে আমার।
পত্রিকা: আপনাকে কেউ বলেনি আপনি নিজের পরিবারের গোপন সব ঘটনার মার্কেটিং করছেন?
অঞ্জন: আমি কি প্রথম নাকি? লেখক শংকর তো সারা জীবন তাই করে গেছেন। সব গল্পই কি ফিকশনাল হতে হবে নাকি? জীবন থেকেও তো গল্প হয়। হ্যাঁ, আমার স্ত্রী ছন্দা আমাকে বলেছিল শিল্পের খাতিরে আমার এটাকে এক্সপ্লয়েট করাটা ঠিক না। কিন্তু আমি পিছিয়ে আসতে চাইনি। খারাপ যে আমার লাগত না, তা নয়। খুব খারাপ লাগত আমার পরিবারের গোপন গল্পগুলো একদিন দীপঙ্কর দে, এক দিন সৃজিত, একদিন রীতা কয়রালের সামনে বলতে। এটুকু বলতেই পারি, এই প্রথম কোনও ছবিতে আমি আমার অনেকটা দিয়ে দিলাম। শ্যুটিং শেষ করেও হ্যাং ওভার রয়ে গিয়েছিল। পুরো ব্যাপারটা নিজের ভেতর থেকে বের করার জন্য ‘গ্যালিলিও’ নাটকটা করলাম। গ্যালিলিও ওয়াজ মাই ডিটক্স।
পত্রিকা: থ্যাঙ্ক ইউ ফর এ ভেরি ক্যানডিড ইন্টারভিউ...
অঞ্জন: শুনুন। আমি জানি এই ইন্টারভিউটা পড়ে অনেকেই আমাকে ভুল বুঝবে। কিন্তু কী বলুন তো, এই ইন্টারভিউটা দিতে দিতে মনে হয়েছে লোকে তো অনেক কিছু না জেনে আমাকে এমনিতেই ভুল বোঝে। সেই ‘বো ব্যারাকস ফর এভার’ থেকেই চলছে। আমি এখন আটান্ন। জানুয়ারি মাসে উনষাট হব। আজকে আমার অনেক কিছুই যায় আসে না। তাই সত্যি কথা বলতেও আর আটকায় না আমার।
|
সিনেমায় সম্পর্ক থাকবেই। কিন্তু আমার সিনেমাতে শুধু পরকীয়াএই কচকচানি নেই। কী একঘেয়ে ব্যাপার! আমি প্রসেনজিতের থেকে খারাপ অভিনেতা তো নই। অভিনয়ে আমি ওর থেকে কোথাও কম যাই না |
‘যুগান্ত’-র সেটে রীনাদির খুব ইচ্ছে ছিল আমার আর রূপার মধ্যে কিছু একটা হোক। প্রায়ই আমাকে ঠেলে দিত রূপার দিকে |
মুনমুন ইন্ডাস্ট্রির অসম্ভব সুন্দরী এক নির্লজ্জ অভিনেত্রী যাকে ইন্ডাস্ট্রি ব্যবহারই করতে পারল না |
|
ছবি: সুব্রত কুমার মন্ডল |
|
|
|
|
|